×

জাতীয়

লালমনিরহাটে ছাত্রীকে আটকে রেখে পাঁচ দিন ধরে গণধর্ষণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০১৯, ১২:১৫ পিএম

লালমনিরহাটে ছাত্রীকে আটকে রেখে পাঁচ দিন ধরে গণধর্ষণ

লালমনিরহাটে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে প্রথমে অপহরণ ও পরে কথিত মাওলানা দিয়ে বিয়ে এরপর একটি ঘরে আটকে রেখে ৫ দিন ধরে কয়েক বন্ধু মিলে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চুয়াডাঙ্গায় বন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে। বর্তমানে ওই গৃহবধূ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হওয়ার পর অভিযুক্ত একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কিশোরগঞ্জে এক বাকপ্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ফরিদপুরের সালথায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টায় থানায় মামলা দায়ের করায় বাদীকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিচে এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

লালমনিরহাট : জেলার সদর উপজেলায় নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে প্রথমে অপহরণ ও পরে কথিত মাওলানা দিয়ে বিয়ে এরপর একটি ঘরে আটকে রেখে ৫ দিন ধরে কয়েক বন্ধু মিলে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করায় নিরাপত্তাহীনতায় বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না ধর্ষিতা স্কুলছাত্রীসহ তার পরিবার। লজ্জা, অপমান, ভয়, আতঙ্ক এবং শারীরিক যন্ত্রণা নিয়ে নিজ বাড়িতে দুশ্চিন্তা নিয়ে প্রহর গুনছেন স্কুলছাত্রী ও তার পরিবার। গতকাল শনিবার সদর থানার ওসি মাহফুজ আলম বলেন, রবিবার নির্যাতিত স্কুলছাত্রীর মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন করা হবে। মেয়েটি সদরের তিস্তা গার্লস স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। এর আগে গত বুধবার রাতে ধর্ষিতা স্কুলছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে আজিজুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে ৫ জনের বিরুদ্ধে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করলেও গতকাল শনিবার পর্যন্ত পুলিশ ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। মামলার আসামিরা হলেন গোকুন্ডা ইউনিয়নের মোলাটারী এলাকার মৃত আবদুল খালেকের ছেলে আজিজুল ইসলাম (২২), কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের সুলতান বাহাদুল এলাকার মো. আলমের ছেলে আতিকুর রহমান (২৩), গোকুন্ডা ইউনিয়নের কবিরাজটারী এলাকার জাহেদুলের ছেলে আরিফুল (২৪), একই ইউনিয়নের মোলাটারী এলাকার ছামাদ মিয়ার ছেলে রানা (২০) ও নেছার উদ্দিনের ছেলে জেখারুল ইসলাম (২১)। এ ছাড়া ওই মামলায় অজ্ঞাত আরো ২-৩ জনের নাম রয়েছে। নির্যাতিত স্কুলছাত্রী জানায়, তার এলাকার কলেজছাত্র আপেলের কাছে প্রাইভেট পড়ত সে। তার মাধ্যমেই মুন্সিটারীর বখাটে যুবক আজিজুলের সঙ্গে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে আজিজুলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ১৫ অক্টোবর বিয়ে করবে বলে তাকে ঢাকায় নিয়ে যায় আজিজুল। সেখানে মৌলভী দিয়ে বিয়েও করে সে। পরে তাকে তিস্তায় নিয়ে তার বাড়িতে না উঠিয়ে ওই ইউনিয়নের বড় মসজিদের পাশে বাংলালিংক টাওয়ারের একটি ঘরে নেয়। এরপর কথিত হুজুর দিয়ে সাজানো বিয়ের পর টাওয়ারের ভেতর টিনের একটি ঝুপড়ি ঘরে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে অচেতন করে আজিজুলের বন্ধুরা ধর্ষণ করে। এভাবেই টানা ৫ দিন সেখানে অচেতন অবস্থায় তাকে ধর্ষণ করা হয়। যদিও ধর্ষকদের কাউকে ওই ধর্ষিতা ঠিকমতো চিনতে পারেনি। তারপরও তাদের দেখলেই চিনতে পারবে বলে জানায় সে। ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে চাপা থাকলেও গতকাল শনিবার ঘটনাটি সাংবাদিকদের নজরে আসে। ধর্ষিতা স্কুলছাত্রী ও তার পরিবার মিডিয়ার মুখোমুখি হয়। পরে মিডিয়ার সাহস পেয়ে ফাঁস করে দেয় বখাটেদের সব অপকর্ম। এর পর পরই ধর্ষকরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। মামলার মূল আসামি আজিজুলের মা জানান, তার ছেলে একেবারেই নির্দোষ। তার বন্ধু আপেল, মিঠু, আরিফের খপ্পরে পড়ে তার ছেলের এই পরিণতি। সে এ রকম কোনোদিনই ছিল না। কয়েকদিন থেকেই তার সঙ্গে পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই। চুয়াডাঙ্গা : জেলায় বন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে। বর্তমানে ওই গৃহবধূ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জেলার সদর উপজেলার যদুপুরের এ ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে থানায় মামলা হওয়ার পর অভিযুক্ত ওয়াশিম আলী (৩০) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওয়াশিম আলী একই গ্রামের মৃত জাফর মণ্ডলের ছেলে। পুলিশ জানায়, গত বুধবার রাতে ওই গৃহবধূর স্বামী ব্যবসায়িক কাজে বাড়ির বাইরে অবস্থান করছিলেন। এ সুযোগে তার স্বামীর দুই বন্ধু একই গ্রামের মিলন ও ওয়াশিম দুই সন্তানের জননী ওই গৃহবধূকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে পার্শ্ববর্তী একটি কলাবাগানে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে তারা। ওই গৃহবধূ অচেতন হয়ে পড়লে তাকে ফেলে পালিয়ে যান মিলন ও ওয়াশিম। পরে পরিবারের অন্য সদস্যরা বিষয়টি টের পেয়ে গৃহবধূকে উদ্ধার করেন। ওই গৃহবধূর স্বামীর অভিযোগ, মিলন ও ওয়াশিমের সঙ্গে তার ভালো সখ্যতা ছিল। সেই সূত্রে তারা পরিকল্পনা করে তাকে কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য যশোরে যেতে বাধ্য করেন। রাতে ফিরে আসতে না পারায় মিলন ও ওয়াশিম তার স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে। পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে ২ জনের নাম উল্লেখ করে শুক্রবার রাতে একটি ধর্ষণ মামলা করেন। রাতেই এজাহার নামীয় আসামি ওয়াশিমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্য আসামিকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। কিশোরগঞ্জ : জেলায় এক বাকপ্রতিবন্ধী কিশোরীকে (১৪) ধর্ষণের অভিযোগে অঞ্জন মিয়া (৩৮) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া বগাদিয়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত অঞ্জন মিয়া মোল্লাপাড়া বগাদিয়া এলাকার মুসলিম মিয়ার ছেলে। পুলিশ জানায়, পার্শ্ববর্তী এলাকার বাকপ্রতিবন্ধী কিশোরী বগাদিয়া এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ওই কিশোরীকে কৌশলে ধর্ষণ করে অঞ্জন। ধর্ষণের পর পালিয়ে যাওয়ার সময় বিষয়টি এলাকাবাসীর নজরে আসে। ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী অসুস্থ হয়ে পড়লে শুক্রবার সকালে তাকে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় ধর্ষণের শিকার মেয়েটির মা বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে অঞ্জন মিয়াকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফরিদপুর : জেলার সালথা উপজেলায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টায় থানায় মামলা দায়ের করায় বাদীকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে মামলার বাদী সালথা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। দাখিলকৃত জিডিতে বাদী অভিযোগ করেন, আসামির স্বজনরা মুরাদ শেখ (৪৫), হানিফ মুন্সি (৫০) ও লুৎফর মুন্সি (৪০) তাকে দেখে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং ওই মামলা তুলে না নিলে যে কোনো ক্ষতি করে দেবে বলে হুমকি দেয়।

সালথা থানার ওসি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সাধারণ ডায়েরি দায়েরের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য, গত ২০ অক্টোবর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই শিশু-শিক্ষার্থী মাঠে খেলা করছিল। এ সময় কানাইড় গ্রামের কুদ্দুস শেখের ছেলে বিদ্যালয়ের দপ্তরি সুজন শেখ (২৪) ও তার বন্ধু তেগাতিয়া গ্রামের মতিন খলিফার ছেলে সোহাগ খলিফা (১৮) শিশুটিকে ফুসলিয়ে বিদ্যালয়ের পুরাতন পরিত্যক্ত ভবনে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এ সময় শিশুটি চিৎকার করলে ২ জনই পালিয়ে যায়। পরে শিশুটি বাড়িতে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়লে অভিভাবকরা তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। খবর পেয়ে সালথা থানা-পুলিশ রাতেই ২ জনকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন সকালে শিশুটির চাচা বাদী হয়ে ২ জনকে আসামি করে সালথা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিপুণ মজুমদার জানান, শিশুটির জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন আদালত। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে প্রাথমিক তদন্তে মামলার সঙ্গে আসামিদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App