×

মুক্তচিন্তা

পরিস্থিতি মোকাবেলায় দায়িত্বশীলদের ভূমিকা প্রয়োজন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:১০ পিএম

সৌদিতে পুলিশের ধরপাকড়ে গণহারে দেশে ফিরছেন শ্রমিকরা। ফিরে আসা এই শ্রমিকদের প্রায় সবারই অভিযোগ, কাজের বৈধ অনুমতিপত্র (আকামা) থাকা সত্ত্বেও সৌদি সরকার ধরে ধরে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে তাদের। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সৌদি আরবের ১২টি সেক্টরকে সৌদিকরণ প্রক্রিয়া শুরু করায় কর্মসংস্থান হারিয়ে দেশে ফিরে আসছেন শ্রমিকরা। এ ছাড়া সৌদি আরব থেকে নির্যাতিত নারী গৃহকর্মীরাও দেশে প্রতিনিয়ত ফেরত আসছেন। আমরা এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন। সৌদি আরবে বিশাল শ্রমবাজার সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিশ্চিত না করে দালাল চক্রের মাধ্যমে সেখানে শ্রমিক পাঠানোর কারণে তারা দেশে ফিরছেন। এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। শুধু দেশে ফেরত নয়, প্লেনে তুলে দেয়ার আগে তাদের নির্মমভাবে নির্যাতনও করা হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই শত শত শ্রমিককে শূন্য হাতে দেশে ফিরতে হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে প্রায় এক হাজার কর্মীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া শুধু চলতি বছরেই ২১ হাজারের বেশি এবং গত ১০ বছরে সোয়া দুই লাখ কর্মীকে সৌদি থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সৌদি আরবের পত্রিকা সৌদি গেজেটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে গত জুন পর্যন্ত সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ অন্তত আট লাখ ৫৮ হাজার ৩৫৫ জন বিদেশিকে সৌদি আরব থেকে বহিষ্কার করে। এরপর থেকে এ অভিযান শুরু হয়। জুনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪৪ হাজার ৫২১ জনকে। গ্রেপ্তার হওয়া বিদেশিদের মধ্যে ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত নয় লাখ ৪০ হাজার ১০০ জনকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশি শ্রমিক ২১ হাজার। এমতাবস্থায় লাখো প্রবাসী শ্রমিকের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করা স্বাভাবিক। বিশেষ করে বাংলাদেশি শ্রমিকরা অনেকেই গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাসার বাইরে যাচ্ছেন না। এবারের অভিযান নিয়ে বেশি ভয় কাজ করছে, আগে শ্রমিকদের ধরলেও কাগজপত্র ঠিক থাকলে ছেড়ে দেয়া হতো। কিন্তু এবারের অভিযানে কেউ ধরা পড়লে আর ছাড় পাচ্ছে না। কাগজপত্র ঠিক থাকলেও দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। সৌদি কর্তৃপক্ষের এমন আচরণের কোনো যৌক্তিকতা নেই। অনেক ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ আকামা নবায়ন করেনি বা তা বাতিল করে শ্রমিকদের দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ফেরত অনেক কর্মীর অভিযোগ তারা কর্মস্থল থেকে বাসস্থানে ফেরার পথে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। সে সময় নিয়োগকর্তাকে ফোন করা হলেও তারা দায়িত্ব নিচ্ছেন না। সরকারের পক্ষ থেকে এখনই ব্যবস্থা নেয়া না হলে সমস্যাটি বড় আকার ধারণ করবে বলে আমরা মনে করি। আইনি সুরক্ষা না থাকায় কম বেতন কিংবা বিনা বেতনে কাজ করা, কাজের সময়ের কোনো পরিসীমা না থাকা, ছুটি না থাকা, শারীরিক-মানসিক নির্যাতনসহ সব ধরনের নিপীড়নের ঝুঁকি থাকে প্রবাসী শ্রমিকদের। কাজেই সুরক্ষার এ দিকগুলো নিশ্চিত করার আগেই তাড়াহুড়ো করে সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি করাটা ঠিক হয়নি। শ্রমিকদের অধিকার, নিরাপত্তা ও আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের। কিন্তু এখন এর প্রতিফলনও দেখা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল ভূমিকা আশা করছি। অন্তত বৈধ শ্রমিকরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন সেদিকটা নিশ্চিত করা জরুরি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App