×

অর্থনীতি

ইএফডি মেশিনের খবর নেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০১৯, ১১:৪০ এএম

ইএফডি মেশিনের খবর নেই

সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলেও আদায় হচ্ছে আগের প্রক্রিয়ায়। অর্থবছরের শুরুতে অর্থাৎ পহেলা জুলাই থেকে ইলেক্ট্রনিক ফিজিক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন সরবরাহের কথা। কিন্তু সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও মেশিন সরবরাহ করতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যে কারণে ভ্যাট আদায়ে ক্রমেই জটিলতা বাড়ছে। খোদ রাজধানীতে ভ্যাটের মাঠপর্যায়ে নানা রকম হয়রানির শিকার হচ্ছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। অর্থবছরের প্রথম দুমাসে ভ্যাট আদায়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে চার হাজার কোটি টাকা। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সরজমিনে বিভিন্ন ভ্যাটের সার্কেল ঘুরে দেখা যায়, লালবাগের কেল্লার মোড়ে অবস্থিত ভ্যাট অফিসের সামনে বেশ কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ভিড় করছেন। এরা সবাই ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী। আবার কেউ বা উৎপাদনকারী। অনেকের ছোটখাটো কারখানা রয়েছে পার্শবর্তী এলাকা কামরাঙ্গীর চরে। নিজের পরিচয় গোপন রেখে এখানে কথা হয় এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার পাশের বড় ব্যবসায়ীকে সুবিধা দিয়েছে ভ্যাটের কর্মকর্তা। কিন্তু আমাকে বলছে, এক লাখ টাকা দিলে আমিও ওই নিয়মে ভ্যাট দিতে পারব। বড় ব্যবসায়ী ভ্যাটের ক্ষেত্রে সুবিধা পায়, আমরা কি তা পাব না? এখন আমার ফাইলে লেনদেন বেশি ধরেছে এবং বড় ব্যবসায়ীর তুলনায় আমাকে বেশি ভ্যাট দিতে হচ্ছে। আমার মতো এমন অনেক আছেন, যারা অতিরিক্ত অর্থ না দেয়ায় তাদের সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

এই শুধু সাইফুল ইসলাম নন, এমন আরো অনেক ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা ভ্যাট দিতে গিয়ে এসব কর্মকর্তাদের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। উৎকোচ দিলে এক হিসাব আর না দিলে অন্য হিসাব। ঘুষ না দিলে আইনি ঝক্কি বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ব্যবসায়িক ক্ষতির কথা বিবেচনায় নিয়ে এসব বিষয়ে মুখ খুলতে চান না অনেকে। যারা মুখ খুলেছেন, তাদের নানা ছুতোয় বেড়ে যায় হয়রানি। শুধু এই অফিস নয়; খোদ রাজধানীর বিভিন্ন সার্কেলে এসব সমস্যা বিদ্যমান। তবে এনবিআরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ যাতে না উঠে, সেজন্য কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ভ্যাট আদায়ে নানা হয়রানি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আরো প্রকট। ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা ভ্যাটের নাম শুনলেই মনে করেন ঝামেলা।

সম্প্রতি যশোরের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান ভ্যাটের কর্মকর্তারা। নানা হিসাব কষে তার ব্যবসার মূলধনের প্রায় কাছাকাছি ভ্যাট আরোপ করেন। পরবর্তীতে ওই ব্যবসায়ী এনবিআরের নানাজনের কাছে ধরণা দেন। পরিশেষে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে। কিন্তু হয়রানির ভয়ে এই ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ করতে চাননি। ভ্যাট আদায়ে এই অব্যবস্থাপনার বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়লেও আহরণ বাড়ছে না।

গত দুই মাসে রাজস্ব আদায়ের অবস্থা আরো নাজুক, শুধু ইনকাম ট্যাক্স ছাড়া। আর ভ্যাট আদায়ে অব্যবস্থাপনা রয়েছে। যে কারণে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব ভ্যাট থেকে আসার কথা থাকলে কার্যত তা হচ্ছে না। ভ্যাট আইন চালু হলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী সফলতা আসছে না। ইফডি মেশিন সরবরাহ করতে না পারার কারণে কমছে ভ্যাট আদায়ও। এ ছাড়া ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে জনমনে বিভ্রান্তিসহ নানা অনিয়ম তো আছেই।

এনবিআরের সর্বশেষ হিসাবে, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুমাস অর্থাৎ জুলাই আগস্টে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা, এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুমাসে ভ্যাট আদায়ের প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ০২ শতাংশ। যা এনবিআরের যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বনিম্ন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে এনবিআরের ভ্যাট বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য জামাল হোসেন বলেন, ইএফডি মেশিন আমদানি প্রক্রিয়া চলছে। প্রাথমিকভাবে দুটি কোম্পানিকে এই মেশিন আমদানির অনুমতি দিয়েছি। এসব মেশিন ব্যবহারের পর আরো মেশিন আমদানির অনুমতি দেয়া হবে। এরা প্রথমে ১০ হাজার ইফডি মেশিন দিবে। তবে অর্থবছরের শুরুতে নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে অনেকে সংশয়ের মধ্যে ছিলেন। ফলে প্রথম দুমাস ভ্যাট আদায় প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। তবে আগামীতে ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App