×

জাতীয়

অবৈধ দখলে তিন মার্কেট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০১৯, ১১:৩৪ এএম

অবৈধ দখলে তিন মার্কেট

অবৈধ দখলদারদের দখলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তিন মার্কেট। এগুলো হলো নগর প্লাজা, সিটি প্লাজা এবং জাকের প্লাজা। ২০১২ সালে এই তিন মার্কেটের প্রতি বর্গফুট ২০ টাকা দামে ১ লাখ ৩৬ হাজার বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ দেয় ডিসিসি। সম্পত্তি বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে আঁতাত করে অবৈধভাবে এসব বরাদ্দ নেন দেলোয়ার হোসেন দেলু নামের এক বিতর্কিত ব্যবসায়ী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূর্বে থেকেই এই তিনটি মার্কেট দেলুর দখলে ছিল। এতে নকশাবহিভর্‚তভাবে গড়ে তোলেন ১১শ’ দোকান। বাথরুম, বাথরুমের সামনের খোলা জায়গা, লিফটের জায়গা, ফ্লোর স্পেস, বারান্দা বেজমেন্ট, হাঁটাচলার জন্য রাখা খোলা জায়গা দখল করে বানানো হয় এসব দোকান। ২০১২ সালে প্রশাসক আমলে ক্ষতিগ্রস্ত তালিকা দেখিয়ে এসব দোকান থেকে ১১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় দেলু সিন্ডিকেট। যুবলীগের দুই শীর্ষ নেতা (একজন বর্তমানে জেলে ও আরেকজন কাউন্সিলর) এবং মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতাও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ডিসিসির তৎকালীন কানুনগো মোহাম্মদ আলীর যোগসাজশে দেলু এসব দোকান গড়ে তোলেন। যা সে সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। পরে ডিএসসিসির প্রশাসক সেই বরাদ্দের আদেশ বাতিল করেন।

এরপর বরাদ্দ বাতিলের আদেশ কপি নিয়ে দেলু আদালতের দারস্থ হন। আদালত উচ্ছেদ নোটিসে স্থিতাবস্থা দিয়ে ডিএসসিসির মামলা নিষ্পত্তির আদেশ দেন। ডিএসসিসির প্যানেল আইনজীবীরা মতামত দেন, মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকরা ভাড়াটিয়া হিসেবে বকেয়া ৭ বছরের ভাড়া পরিশোধ করে ব্যবসা করতে পারবেন। ডিএসসিসির পক্ষ থেকে রাজস্ব আদায়ের শর্তে ভাড়াটিয়া হিসেবে দোকানদারদের ব্যবসার সুযোগ করে দেয়া হয়। এদিকে চলতি বছর ডিএসসিসির ১৭তম বোর্ডসভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও এরই মধ্যে ১০ মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু ভাড়া আদায়ে সন্তুষ্ট নয় ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগ। মাত্র ১৮৫টি দোকান বকেয়া ভাড়া দিয়ে ব্যবসা করছে। বাকি দোকানদাররা ভাড়া দিচ্ছেন না। এদিকে ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ থেকে যাদের নামে দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল, তাদের অনেকের দখলেই এখন সেসব দোকান নেই বলে রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।তা ছাড়া সেসব দোকান মালিকেরও আর দেখা যায় না। বরাদ্দকৃত ওই সব দোকান এখন অবৈধ দখলদারদের কবলে চলে গেছে।

অবৈধ দোকানদারদের বিষয়ে জানতে চাইলে জাকের মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির এক নেতা জানান, ২০১৬ সালে স্থানীয় তিন কাউন্সিলরের নেতৃত্বে একটি চক্র মার্কেট তিনটি দখলে নিয়ে নেয়। ওই চক্রটি অবৈধভাবে দখল করা দোকানদারদের কাছ থেকে বৈধ কাগজ করে দেয়ার নামে প্রায় ৭০ কোটি টাকা আদায় করেন। এরপর চক্রটি উধাও হয়ে যায়। আসল যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের বের করে দিয়ে অবৈধভাবে এসব দোকান দখলে নেয়া হয়। বসানো হয় নতুন লোককে। এসব নিয়ে স্থানীয় থানায় মামলাও করা হয়েছিল। এখন সমিতির পক্ষ থেকে অবৈধ দোকানদারদের চলে যেতে বলা হলে তারা নানা অজুহাত দেখায়। উল্টো স্থানীয় প্রভাবশালীদের দিয়ে নানা হুমকি দেয়া হয়। অথচ অবৈধ দখলমুক্ত করতে না পারলে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের দোকান ফিরে পাবেন না। ডিএসসিসিও কোনো ভাড়া পাবে না।

এসব বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সর্দার বলেন, যারা অবৈধভাবে দোকান দখল করে আছেন তাদের সেগুলো ছেড়ে দিতে বলা হলে তারা নানা ছলচাতুরি করে। তবে বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যারা টাকা দিয়েছেন তাদের আমরা রসিদ দিয়েছি। যারা দেননি, তারা নানা তালবাহানা করছেন। অনেকে আদালতেরও আশ্রয় নিচ্ছেন। ফলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালাতে পারছি না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App