×

খেলা

শাস্তিতে তোলপাড় ক্রিকেট বিশ্ব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০১৯, ১১:০০ এএম

বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা এখনো যেন বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের দোলায় দুলছেন। সাকিব আল হাসান এক বছর ক্রিকেট মাঠে থাকবেন না এটা মেনে নিতেই পারছেন না ভক্তরা। আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী নীতিমালার তিনটি আইন লঙ্ঘনের অপরাধে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে দুবছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি। তবে অপরাধ স্বীকার করে নেয়ায় এক বছরের শাস্তি স্থগিত করা হয়েছে। ফলে আগামী বছরের ২৯ অক্টোবর আবারো সব ধরনের ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন সাকিব। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের শাস্তি নিয়ে সারাদেশে নানা রকম কথা চলছে। আইসিসি টাইগার অধিনায়ককে যে শাস্তি দিয়েছে তার পেছনে বিসিবি সভাপতির হাত রয়েছে বলে অনেকের সন্দেহ। কেউ কেউ নাজমুল হাসান পাপনের দিকে আঙুলও তুলেছেন। গতকাল টক অব দ্য কান্ট্রি ছিল সাকিবের শাস্তি। সাকিবের নিষেধাজ্ঞায় পেছনে বিসিসিআইয়ের কোনো ভূমিকা নেই বলে জানিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অ্যান্টি করাপশন এন্ড সিকিউরিটি ইউনিটর প্রধান অজিৎ সিং। তিনি বলেন, বিসিসিআইয়ের ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগই ছিল না। বিষয়টা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে আইসিসি অ্যান্টি করাপশন এন্ড সিকিউরিটি ইউনিট (আকসু) দেখেছে। তারা তদন্ত করেছে এবং শাস্তি ঘোষণা করেছে। আইপিএলের ম্যাচের একটি বিষয় থাকার কারণেই মূলত বিসিসিআইর প্রসঙ্গ উঠে আসে। এ বিষয়ে অজিৎ সিং জানান, বিষয়টা পরিপূর্ণভাবে আইসিসিই সামলেছে। কারণ, ওই সময় আইপিএলে দুর্নীতির বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব ছিল আইসিসির। আমাদের নয়। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অ্যান্টি করাপশন ইউনিটের প্রধান বলেন, ‘আইপিএলের যে মৌসুমের ম্যাচ নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে, সে মৌসুমের সব দুর্নীতিবিরোধী বিষয় আইসিসিই দেখভাল করেছে। কোনো অভিযোগ উঠলে তা নিয়ে আইসিসিই কাজ করেছে, তদন্ত করেছে। এর সঙ্গে বিসিসিআইয়ের কোনো সস্পৃক্ততা নেই। সাকিব যেহেতু আইসিসির নিষেধাজ্ঞার কবলে বিসিবি কি তার সঙ্গে চুক্তি বলবৎ রাখবে? আইসিসির নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে বিসিবির সঙ্গে চুক্তিও বাতিল কার্যকর হয়ে গেছে বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের। সাকিব আল হাসান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সর্বোচ্চ গ্রেডের এবং সর্বোচ্চ বেতনপ্রাপ্ত একজন ক্রিকেটার। মাসিক তিনি বেতন পেতেন চার লাখ টাকা করে। এখন সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই, বিসিবির সঙ্গে এ চুক্তি বাতিল হচ্ছে সাকিবের। ২২ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে ‘ম্যাচ ফিক্সিংয়ের খবর আসছে’ বলে যে উক্তি করেছিলেন পাপন, সেটির ভিডিও শেয়ার করে বিসিবির সাবেক সাবের হোসেন চৌধুরী ‘মিথ্যাবাদী’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন বিসিবির বর্তমান সভাপতিকে। সাবের হোসেন নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েকটি টুইট করেছেন। যার একটিতে ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন, আমার মনে হয় বিসিবি সবকিছুই জানত এবং পাপন সাহেব যে বলেছেন, তার কোনো ধারণাই ছিল না, কথাটা সত্য নয়। দুঃখ লাগলেও এটা বলতেই হচ্ছে। ২২ অক্টোবরের যে ভিডিও ক্লিপটা, তাতে মনে হচ্ছিল পাপন সাহেব আইসিসির ঘোষণার জন্য অধৈর্য হয়ে অপেক্ষা করছিলেন। আরেক টুইটে বিসিবির সাবেক সভাপতি লিখেছেন, ‘ভণ্ডামি, সর্বোৎকৃষ্ট/নিকৃষ্টের দ্বৈত চরিত্র। বিসিবি আইসিসির সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছে। ক্রিকেট দুর্নীতির বিরুদ্ধে সমান আবেগই দেখিয়েছে। কিন্তু সংস্থাগত ম্যাচ ফিক্সিং দুর্নীতির মূলোৎপাটন না করে, ঘরোয়া ক্রিকেটে সেটাকে আরো উৎসাহিত করছে বিসিবি। লজ্জাজনক।’ সাকিবের পাশে দাঁড়াবে বিসিবি, এমন আশ্বাসকেও বিশ্বাস করার মতো নয় মনে করছেন সাবের হোসেন চৌধুরী। অপর টুইটে সাবের হোসেন লিখেন, ‘কেউ যখন অপরাধ করে, সুবিচার প্রাপ্য। বিসিবি কমপক্ষে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমানোর চেষ্টা করতে পারত। দুঃখ লাগছে যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এই জায়গায় সাকিবের পাশে দাঁড়ায়নি। এখন অযথা মায়াকান্না দেখাচ্ছে।’ সাকিব এক বছর মাঠের বাইরে থাকবেন। এ সত্য বেশ পীড়াদায়ক বলে মনে করেন বিসিবি এবং আইসিসির সাবেক সভাপতি ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, সাকিবের ঘটনাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সাকিবের জীবনে যেমন ঝড় বয়ে যাচ্ছে, আমাদের দেশেরও কিছুটা হলেও মর্যাদাহানি হবে। গতকাল সন্ধ্যায় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত ১৯তম অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, সাকিব ভালো কাজ করেছে, সে তার সততার পরিচয় দিয়েছে। সে সত্যি বলেছে। তবে সে বোর্ডকে বা প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি বলতে পারত। যদিও আইসিসিকে এ বিষয়ে অনুরোধ করলে কতটা লাভ হতো জানি না। মুস্তফা কামাল আরো বলেন, আইসিসি ডিসিপ্লিনের বিষয়ে কঠোর। ম্যাচ ফিক্সিং আইসিসি পছন্দ করে না, করবেও না। এই খেলা মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু এখানে আইসিসি কাউকে ছাড় দেয় না, ছাড় দেয়ার উদাহরণ নেই। তিনি বলেন, আইসিসির আইনটি সাকিবের ভালোভাবে জানা ছিল, তার পরও কেন ও এমন করল! সরল ভেবে সাকিব কাজটি করেছে। সাকিবের সার্ভিস এক বছর পাবে না, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো! সাকিব আল হাসান কাজটি ভালো করেনি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক তারকা শফিকুল হক হীরা। এক-দুইবার নয় তিনবার প্রস্তাব এসেছে। বিষয়টা না জানিয়ে সাকিব যে ভুল করেছে সে খেরাসত দিতে হবে আগামী এক বছর। যাকে চিনি না তার সঙ্গে কেন যোগাযোগ করব? নাম্বার ডিলিট করে দিতে পারত। ২০১২ সালে বিপিএল চলাকালে মাশরাফিকে অপরিচিত একজন এসেছে কী যেন বলেছিল। মাশরাফি সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ঘটনাটি জানালে জল বেশি দূর এগোতে পারেনি। শফিকুল হক হীরা আরো বলেন, সাকিব যদি ঘটনাটা কারো সঙ্গে শেয়ার করত তা হলে হয়ত শাস্তিটা এড়ানো যেত। যাই হোক ও ভুল করেছে। বিসিবি সভাপতি আন্তরিক হলে সাকিবের শাস্তি আরো কম হতো কিংবা এড়ানোও যেত। এখানে আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। স্পট ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত ভারতীয় জুয়াড়ির নাম দীপক আগারওয়ালকে আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট অনেকদিন থেকে নজর রেখেছিলেন। এর আগে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগ এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্পট ফিক্সিংয়ের চেষ্টার কারণে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। এই দীপক আগারওয়াল আইসিসির মোস্ট ওয়ান্টেড জুয়াড়ি। ২০১৩ সালে আইপিএলে ম্যাচ পাতানোর দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সাবেক সভাপতি এন শ্রী নিবাসনের জামাতা গুরুনাথ মায়াপ্পান এবং বলিউড অভিনেতা বিন্দু দারা সিং। দুজনেই সেসময় ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে আগারওয়ালের জড়িত থাকার কথা জানিয়েছিলেন। এ জুয়াড়ির প্রস্তাবের কথা আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিটকে না জানিয়ে সাকিব আল হাসান যে ভুল করেছেন তা দেশের ক্রিকেটের জন্য বেশ ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক স্পিনার আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে দেশের ক্রিকেটে যে ধাক্কা লেগেছে তা সামলিয়ে উঠতে বেশ সময় লাগবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সাকিবের পাশে রয়েছে। আশা করছি বিসিবি আপিল করলে হয়ত সাকিবের শাস্তির মেয়াদ কমতেও পারে। সাকিবের শাস্তির পেছনে বিসিবি প্রধানের কোনো ভ‚মিকা নেই বলে মনে করেন এ ক্রিকেটার। তিনি বলেন, নাজমুল হাসান পাপন ক্রিকেটারদের অভিভাবক। খেলোয়াড়দের সুখ দুখ যিনি দেখেন তিনি কি করে অন্যকে বিপদে ফেলেন? বাংলাদেশ ভালো ফলাফল করলে তো বোর্ডের সুনাম বৃদ্ধি পাবে। জাতীয় দলের আরেক স্পিনার মোহাম্মদ রফিক বলেন, ওর তো কোনো দোষ নাই। সে একটা ভুল করেছে, কোনো অপরাধ তো করেনি। সাকিবকে আমি পছন্দ করি, ওর প্রতি আমার সমর্থন থাকবে। তাকে আগের মতোই ভালোবাসব। দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়েস্ট উইন্ডিজের বিপক্ষে ব্যাট করতে নেমে সেঞ্চুরি হাঁকানো এ ক্রিকেটার আরো বলেন, সাকিব ইস্যুতে কাদা ছোড়াছুড়ি না করে কিভাবে শাস্তি কমানো যায় এ বিষয়ে কাজ করা উচিত। সাকিব ভুল স্বীকার করেছেন। এখন আমাদের উচিত ওর পাশে থেকে ওকে সহায়তা করা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App