×

জাতীয়

বিধি প্রণয়ন না হওয়ায় ঝামেলার আশঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০১৯, ১১:০৮ এএম

বিধি প্রণয়ন না হওয়ায় ঝামেলার আশঙ্কা
সব মহলের দাবির মুখে অবশেষে আগামীকাল ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হচ্ছে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে এ আইনের বেশ কয়েকটি ধারার সংশোধনী প্রস্তাব করা হলেও সরকার শেষ পর্যন্ত কোনো ধারাতেই পরিবর্তন আনেনি। তবে আইনটি কার্যকর হতে চললেও এখনো এই আইনের বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়নি। ফলে এর প্রয়োগ নিয়ে নানা ঝামেলা তৈরির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে ধারা সংশোধন না করা হলেও পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা কোনো ধরনের আন্দোলনে যাচ্ছেন না। বরং তারা সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বছরখানেক আগেই জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। সরকার দ্রুত তা কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু পরিবহন সংগঠনের কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাবের কারণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো সংশোধন ছাড়াই আইনটি কার্যকর হতে যাচ্ছে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবিগুলো পূরণের জন্য আইনটি কতটুকু শিথিল করা যায়, আগামীতে তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়। এরপর ওই বছরের ৬ আগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনটির খসড়ায় অনুমোদন দেয়া হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বিল’ সংসদে উত্থাপন করা হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে পাস হয়। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর ওই বছরের ৮ অক্টোবর আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটলে ৯৮ ও ১০৫ ধারায় শাস্তির বিধান রয়েছে। ১০৫ ধারায় বেপরোয়া ও অবহেলাজনিত গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে এবং সেই দুর্ঘটনায় কেউ আহত বা নিহত হলে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আইনের ৯৮ ধারায় সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আর গাড়ি চালিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হত্যা করলে বা ইচ্ছাকৃত দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ক্ষেত্রে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ ছাড়া সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ৬ ধারার (ক) উপধারায় বলা হয়েছে, অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে বয়স হতে হবে ন্যূনতম ১৮ বছর, পেশাদারদের ক্ষেত্রে ২০ বছর। একই ধারার (গ) উপধারায় বলা হয়েছে, চালকের শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস। এই আইনের খসড়া প্রকাশের পরই কয়েকটি ধারা নিয়ে আপত্তি তুলে তা সংশোধনের দাবি জানিয়ে ছিল পরিবহন নেতৃবৃন্দ ও সংগঠনগুলো। সংশোধন ছাড়া এই আইন পাস করা হলে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়ার কথাও বলেছিল তারা। সংসদে আইনটি পাস হওয়ার পরও সংশোধনের দাবিতে অনড় ছিলেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। তাদের বক্তব্য ছিল সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনার মামলায় নতুন আইনে শাস্তির মাত্রা ‘অযৌক্তিক’ বেশি। এই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে উপ-কমিটির সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আইন সংশোধনের সুপারিশ সংবলিত একটি প্রতিবেদন জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের কাছে দেবেন বলে জানান। তবে পরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আইনটি সংশোধনের প্রস্তাব নাকচ করে দেন। এরপরই আইনটি কার্যকরের উদ্যোগ নেয়া হয়। সরকারের এই কঠোর মনোভাবের প্রেক্ষাপটে কিছুটা নমনীয় হয়ে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। তারা সরকারকে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। ফলে আইনটি কার্যকর হলে পরিবহন ধর্মঘটের সম্ভাবনা আর থাকছে না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমরাও আইনটি কার্যকর করার পক্ষে। আমরাও সড়কের নিরাপত্তা চাই। আইনটি কার্যকর হলে সবাই উপকৃত হবে। তবে আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনের জন্য আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আমরা মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ধারা সংশোধনের সুপারিশ করেছি। সেগুলো সংশোধন করা হয়নি। তারপরও আমরা সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করব। আইন কার্যকরের ব্যাপারে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। তিনি বলেন, আইন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিধিমালা প্রণয়ন করা হোক। এটা খুবই জরুরি। দ্রুত বিধিমালা না হলে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এই দিকে সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষিত ও ভালো মানের চালক তৈরিতে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। তাই ভালো চালক এখনই পাওয়া সম্ভব নয়। এ ব্যাপারেও সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। শ্রমিক নেতা ওসমান গনি বলেন, সড়ক পরিবহন আইনে শ্রমিকদের সমস্যাগুলো গভীরভাবে দেখা হয়নি। শ্রমিকদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়নি। তারপরও আমরা আইন কার্যকর করতে সরকারকে সহযোগিতা করব। তবে সংশোধনীর প্রস্তাবগুলো নিয়েও সরকারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্য, কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরে এলে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। আইনটি কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়ে সরকার সঠিক কাজ করেছে। দাবি-দাওয়ার ক্ষেত্রে উভয় পক্ষকেই এ জন্য কিছুটা ছাড় দিতে হবে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, এই আইনটি কার্যকর করা দেশের জনগণ ও সময়ের দাবি ছিল। এখন আইন সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে সারাদেশের সড়কের বিশৃঙ্খল অবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App