×

জাতীয়

৪ বছরের মধ্যে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালু হচ্ছে দেশে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০১৯, ১১:১৩ এএম

৪ বছরের মধ্যে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালু হচ্ছে দেশে

সরকারের চলতি মেয়াদেই দেশে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালুর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সরকারি সংস্থাটি বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রাথমিকভাবে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চালু করা হবে ইলেকট্রিক ট্রেন। আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে এই রুটে দেশের প্রথম ইলেকট্রিক ট্রেন চালু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্বয়ং রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালানোর প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তবে চলমান দুর্বল ট্র্যাকে দ্রুত গতির ইলেকট্রিক ট্রেন চালু করা কতটা নিরাপদ হবে- তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, আগে সংশ্লিষ্ট ট্র্যাকের উন্নয়ন ঘটাতে হবে, হাজার হাজার অবৈধ লেভেল ক্রসিং বন্ধ করতে হবে, তা না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালুর লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ট্র্যাক শক্তিশালী করার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। রেলওয়ের পরিকল্পনা বিভাগ ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সমীক্ষা প্রস্তাব তৈরি করে। ওই বছরের ৪ জুন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাই কমিটির প্রথম বৈঠকে এটি অনুমোদিত হয়। এরপর চলতি বছরের ৭ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনে ‘নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম’ পর্যন্ত ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন (ওভারহেড ক্যাটিনারি ও সাব স্টেশন নির্মাণসহ) প্রবর্তনের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।

এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী ভোরের কাগজকে জানান, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের অংশ হিসেবে রেলওয়েকে ঢেলে সাজাতে এবং একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার লক্ষ্যে বহু কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে দেশের প্রথম ইলেকট্রিক ট্রেন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদেই ইলেকট্রিক ট্রেন চালু হবে। এ বিষয়ে কারিগরি সহায়তার জন্য ভারত ও চীন উভয় দেশই রাজি আছে।

মন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমরা অনেকটাই এগিয়ে গেছি। শুধু ইলেকট্রিক বগি ও ইঞ্জিন আমাদের আমদানি করতে হবে। তবে তার আগে আমাদের চলমান রেল ট্র্যাকের কিছু সংস্কার করা জরুরি। বর্তমানে শক্তিশালী ও দ্রুত গতির ট্র্যাক বানানোর কাজ চলছে। যাতে করে ১০০-১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলতে পারে। আর বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য জোন অনুযায়ী বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন নির্মাণ করতে হবে।

মন্ত্রী আরো বলেন, আমরা ধাপে ধাপে নতুন লাইনগুলো বৈদ্যুতিকরণের প্রকল্প হাতে নেব। যেমন খুলনা থেকে মংলা, পদ্মা সেতুর ওপার ভাঙ্গা থেকে যশোর হয়ে খুলনা, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার, আখাউড়া-সিলেট, ঈশ্বরদী থেকে পাবর্তীপুরসহ সব নতুন রেল লাইনে ইলেকট্রিফিকেশনের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখা হবে।

এ বিষয়ে রেলওয়ের পরিকল্পনা ও অর্থনীতি বিভাগের প্রধান সলিমুল্লাহ বাহার বলেন, ইলেকট্রিক ট্রেন চালু হলে দেশের রেল যোগাযোগের চিত্রটাই পাল্টে যাবে। বছরের পর বছর ধরে লোকসানে থাকা রেল লাভের মুখ দেখবে। তিনি জানান, ইলেকট্রিক ইঞ্জিনের দাম অনেক কম। তা ছাড়া ডিজেল চালিত ইঞ্জিনের তুলনায় দ্বিগুণ বগি টানতে পারে ইলেকট্রিক ইঞ্জিন। আর ইলেকট্রিক রেক (বগি) অনেক কম ওজনের হওয়ায় তা আমাদের দেশের চলমান ট্রাকে চলতে সক্ষম। সর্বোপরি ইলেকট্রিক ট্রেন দ্রুত গতির হওয়ায় খুব কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। ফলে সেটি বারবার আসা-যাওয়া করতে পারবে।

রেলের ইঞ্জিনিয়ার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, একটি ইলেকট্রিক ইঞ্জিনের দাম ডিজেল ইঞ্জিনের চার ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ৭-৮ কোটি মাত্র। ডিজেল ইঞ্জিনের দাম গড়ে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনের মেরামত ব্যয়ও অনেক কম। ডিজেল ইঞ্জিন বড় ধরনের মেরামতে (ওভারহোলিং) যেখানে ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হয়, সেখানে বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে তা হবে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া রেলে প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার তেল লাগে। ইলেকট্রিক লাইন হলে তেলের অর্থ বেঁচে যাবে। রেলে তেলচুরির হিড়িক রয়েছে। ইলেকট্রিক ট্রেন হলে সেটা থেকেও রক্ষা পাবে কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, রেলে আমূল পরিবর্তন আনতে হলে ইলেকট্রিক ট্র্যাকশনের কোনো বিকল্প নেই। রেলে লোকসান কমিয়ে লাভের মুখ দেখতে হলে আধুনিক উপায়ে রেলকে সাজাতে হবে। এতদিন রেলের উন্নয়নে সরকার বিনিয়োগ বাড়ালেও ইলেকট্রিক রেলপথ নির্মাণ বাস্তবায়ন না হওয়াটা দুঃখজনক। দেশে বিদ্যুৎ বাড়ছে। বর্তমানে অনেক উন্নত বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন আবিষ্কার হয়েছে। তবে আমাদের চলমান ট্র্যাকের কিছু উন্নয়ন ঘটাতে হবে। ট্র্যাক উন্নয়ন ছাড়া দ্রুত গতির ট্রেন চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে।

আর রেলওয়ের সাবেক মহাব্যবস্থাপক সাগর কৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন, ইলেকট্রিক ট্র্যাকশনে যাওয়ার আগে বর্তমান লাইনের যে অবস্থা সেটি সংস্কারের ওপর জোর দিতে হবে। এ ছাড়া হাজার হাজার অবৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এগুলো একটি কাঠামোর মাধ্যমে আনতে হবে। এটা নিশ্চিত যে দ্রুত গতি কিংবা বুলেট ট্রেন চালাতে হলে দ্রুত গতির ট্রাকসন (লাইন) লাগবে।

রেলওয়ের লাভ-লোকসানের হিসাব দেখিয়ে বর্তমান অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়া জাহান ভোরের কাগজকে বলেন, একটা প্যাসেঞ্জার ট্রেন থেকে প্রতিদিন রেলের আয় গড়ে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা। কিন্তু ওই ট্রেনটি চালাতে ডিজেল খরচ, রেলের কর্মীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য বাবদ খরচ হয় প্রায় দু লাখ টাকা। যদি আমরা বিদ্যুতিক ট্রেন চালাতে পারি তাহলে ডিজেলের সিকি ভাগ খরচে ট্রেনটি আসা যাওয়া করতে পারবে। এর ফলে রেলের হাজার হাজার কোটি টাকার লোকসান আর থাকবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App