×

আন্তর্জাতিক

ছুটির দিনে জমজমাট সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০১৯, ১০:২৪ এএম

ছুটির দিনে জমজমাট সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে

সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে

সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশ এমনিতে কাজের ফাঁকে মেরিনা বে স্যান্ডসের ক্যাসিনোতে ঢুঁ মারলেও সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবার দিন-রাতের প্রায় পুরোটা সময় তারা কাটান সেখানে। হারজিতের এই খেলায় মগ্ন থেকে কারো কারো হাসিমুখ দেখা গেলেও বেশিরভাগই ঘরে ফেরেন ঢুলুঢুলু চোখ আর মলিন মুখে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চারতলা মেরিনা বে স্যান্ডস বা এমবিএস পরিচালনা করছে আমেরিকার কোম্পানি লাসভেগাস স্যান্ডস করপোরেশন। রবিবার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এর দোতলা ও নিচতলায় বাংলাদেশিদের ব্যাপক আনাগোনা হয়। অনেকে খেলেন, আবার কেউ কেউ ঘুরে ঘুরে দেখেন। আবার খেলে নিঃস্ব হওয়া অনেকে নতুন খেলতে যাওয়া বাংলাদেশিদের পাশে থেকে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন কিছু বকশিশের আশায়। অবশ্য পাইজা প্লাটিনাম মেম্বার কার্ড ও পাইজা চেয়ারম্যান কার্ডধারীদের সঙ্গে ছুটির দিনের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা ইচ্ছামতো সময়ে যাওয়া-আসা করেন মেরিনা বেতে। একাধিক বাংলাদেশি শ্রমিক জানান, রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মোস্তফা সেন্টারের পাশে মিনি মার্ট ও আমতলা মার্ট বাঙালিদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। কয়েক হাজার বাংলাদেশি জড়ো হন সেখানে। মোস্তফা ও আশপাশের মার্কেটে কেনাকাটা করে কুরিয়ার সার্ভিস ও লোক মারফত দেশে জিনিসপত্র পাঠান। এই মিলনমেলার মধ্যে চলে হুন্ডি ব্যবসা। লাখ লাখ টাকা হাতবদল হয় সেখানে। মূলত যেসব অঞ্চলের বাসিন্দা বেশি সে সব অঞ্চলে রয়েছে হুন্ডি সিন্ডিকেট। চাঁদপুরের মবিন, চট্টগ্রামের শাহীন চৌধুরী, শাহেদ শফিক, আবদুল হক, মাদারীপুরের সজীব, মুন্সীগঞ্জের আলম ও মুসলিম হুন্ডি ব্যবসায়ী হিসেবে সেখানে পরিচিত মুখ। দেশে রয়েছে তাদের বড় নেটওয়ার্ক। তারা বিকাশ ও এম ক্যাশের মাধ্যমে হুন্ডির টাকা লেনদেন করছে। সিঙ্গাপুরে অবৈধ হলেও বিকাশে লেনদেন অনেকটা ওপেন সিক্রেট। তবে যে টাকা দেশে পাঠানো হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি টাকা লেনদেন হয় ক্যাসিনোর টেবিলে। সিঙ্গাপুর প্রবাসী বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি জানান, ব্যবসা, চাকরি ও অন্যান্য পেশায় জড়িত প্রায় সোয়া লাখ বাংলাদেশি বর্তমানে সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। সেখানে সার্বিকভাবে বাংলাদেশি শ্রমিক ও অন্য পেশাজীবীদের ইমেজ ভালো। তবে এর মধ্যেও কিছু সংখ্যক প্রবাসী ব্যবসায়ী বিভিন্ন ব্যবসার আড়ালে রমরমা হুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের শত শত এজেন্ট সারাদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে ডলার সংগ্রহ করে তুলে দিচ্ছেন মূল ব্যবসায়ীদের হাতে। মোস্তফা সেন্টারের আশপাশের রোবাটস লেন, সৈয়দ আলওয়ি রোড, রয়েল রোড, কেজি কাপুর রোড, সেরাঙ্গন রোড, লিটল ইন্ডিয়া, তোয়াজ, তোরাজ ভিউ, কেরেনভি, লেক সাইড এলাকায় বসবাসকারী বাংলাদেশিদের অনেকে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে হুন্ডি করে টাকা লেনদেন করে আসছেন। এর মূল কারণ হিসেবে জানা গেছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে ব্যাংকের শাখা নেই সেখানেও টাকা পৌঁছে দিচ্ছে হুন্ডি এজেন্টরা। তারা ব্যাংক থেকে রেটও কিছুটা বেশি দিচ্ছে। ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠালে শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে টাকা তোলা যায় না; এমনকি ব্যাংকিং সময়ের আগে পরে গেলেও টাকা পাওয়া যায় না। সরকার নির্ধারিত হারের বেশি টাকাও লেনদেন করাযায় না। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে বৈধ চ্যানেলে সর্বোচ্চ ১ হাজার ডলারের বেশি পাঠানো যায় না। ফলে বিদেশে যারা বাড়ি, দোকানপাট ও শিল্প কারখানা কেনায় টাকা পাচার করে তাদের হুন্ডির আশ্রয় নিতে হয়। চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রেও হুন্ডির মাধ্যমে ডলার যাচ্ছে দেশ থেকে। দেশের কালো টাকার মালিকরা ব্যাংকিং চ্যানেল এড়িয়ে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাঠাচ্ছে। সেখানে তারা জায়গাজমি ও বাড়িঘর কিনছে, ব্যাংকে ডলার জমাচ্ছে। আন্ডার ইনভয়েস করে আমদানি পণ্য, মেশিনারিজ আনছে। চোরাকারবারিরাও টাকা লেনদেনে হুন্ডির মাধ্যমটি বেছে নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে চোরাচালান পণ্যের পুরো টাকাই একসঙ্গে পরিশোধ করতে হয়। ফলে আমদানি-রপ্তানির বিকল্প হিসেবে দুটো অবৈধ প্রক্রিয়া হুন্ডি ও চোরাচালান একসঙ্গে কাজ করছে সিঙ্গাপুরসহ দেশে দেশে। এদিকে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ভিসা কিনতেও হুন্ডির মাধ্যমে ডলার পাচার হচ্ছে দেশ থেকে। এ ছাড়া চিকিৎসা ব্যয়, বিদেশে লেখাপড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে টাকা লেনদেনে হুন্ডির আশ্রয় নেয়া হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App