×

বিনোদন

এক সন্ধ্যায় ঢাকার মঞ্চে দুই জোড়া নাটক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:০৪ পিএম

এক সন্ধ্যায় ঢাকার মঞ্চে দুই জোড়া নাটক
এক সন্ধ্যায় ঢাকার মঞ্চে দুই জোড়া নাটক

একই দিনে ঢাকার মঞ্চে সন্ধ্যায় নাট্যরসিকরা উপভোগ করেছেন ভিন্ন ভিন্ন গল্পের দুই জোড়া নাটক।সোমবার মঞ্চস্থ হলো সেলিম আল দীন রচিত ঢাকা থিয়েটারের নাটক ‘পুত্র’। ‘পুত্র’ ঢাকা থিয়েটারের নতুন প্রযোজনা তবে সেলিম আল দীনের সর্বশেষ রচনা। পুত্র হারানো এক দম্পতির অবিশ্রান্ত বিলাপ ও স্মৃতিমন্থনতার উপাখ্যান এ নাটক। ‘পুত্র’ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন শিমূল ইউসুফ।

যার কাহিনীতে দেখা যায়, মাইট্যাল সিরাজ ও তার স্ত্রী যমুনাপারের মেয়ে আবছা। তাদের পুত্র মানিক আমগাছে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। নিয়ম অনুযায়ী ধর্মীয় কৃত্যহীন লাশ মাটিতে পুঁতে ফেলতে হয় এবং সেই আমগাছটিও কেটে ফেলতে হয়। এ ঘটনার দুই বছর পর এক প্রবল শীতের রাতে কিছুটা উষ্ণতা পেতে এ দম্পতি আমগাছটির শেকড় তুলে এনে আগুন জ্বালায়। একদিকে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে আসতে থাকে আমগাছটির শেকড়, অন্যদিকে বাবা-মায়ের অন্তরে পুত্র হারানোর যন্ত্রণা যেন দ্বিগুণ তীব্রতায় জ্বলতে থাকে। মৃত পুত্রের জন্য উদ্বেগ, আশঙ্কা, ভীতি এবং কখনও কখনও ক্ষোভের মধ্য দিয়ে তারা জীবিত পুত্রের অপূর্ণ সব ইচ্ছা-আকাঙ্খার স্মরণ করতে করতে একসময় গাছের শেকড়কেও পুত্র ভাবতে শুরু করে।

এই আখ্যানে এক জটিল সমীকরণের সৃষ্টি করে। সেলিম আল দীনের সৃষ্টিশীল লেখনীর শক্তি ও নতুন নাট্যভাষার চিরচেনা মানব জীবন হয়ে ওঠে পরাবাস্তব এক অদেখা জীবন। পুত্র বিয়োগের অব্যহতিতে জটিল এক মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়নে আখ্যানের চরিত্রগুলো আধুনিক কবিতার আদলে মঞ্চে নির্মিত হতে থাকে।

‘পুত্র’ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন এশা ইউসুফ, সামিউন জাহান দোলা, আসাদুজ্জামান আমান, মিলু চৌধুরী প্রমুখ। কোরিওগ্রাফি করেছেন এশা ইউসুফ, আলোক পরিকল্পনায় নাসিরুল হক, যন্ত্রসংগীত পরিকল্পনায় সৌজন্য অধিকারী। নাটকটির শিল্প নির্দেশনা দিয়েছেন প্রখ্যাত শিল্পী ঢালী আল মামুন।

সুতায় সুতায় হ্যানা ও শাপলা 

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে সন্ধ্যায় থিয়েটার আর্ট ইউনিটের সুতায় সুতায় হ্যানা ও শাপলা’ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়।

আনিকা মাহিনের লেখা ও রোকেয়া রফিক বেবী নির্দেশিত এ নাটকে পৃথিবীর দুই প্রান্তের দুই নারীর উপাখ্যান উঠে এসেছে।

হ্যানা বিংশ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে জন্ম নেওয়া সুইডেনের এক সূচশিল্পী। অন্যদিকে শাপলা বাংলাদেশের এক গার্মেন্টসের শ্রমিক। নাটকটি এই দুই মৃত নারীর পরস্পরের গল্প কথন।

নাটকটির মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন আবীর সায়েম ও সহযোগী হিসেবে আছেন রানা সিকদার। সংগীত পরিকল্পনা করেছেন সেলিম মাহবুব। কোরিওগ্রাফি করেছেন সঙ্গীতা চৌধুরী ও মেহমুদ সিদ্দিকী এবং আলোক পরিকল্পনায় আছেন নাসিরুল হক। অভিনয় করছেন সুজন রেজাউল, সঙ্গীতা চৌধুরী, মিতালী দাস, মেহমুদ সিদ্দিকী, নূরুজ্জামান বাবু, এস আর সম্পদ, সজল চৌধুরী, আবীর সায়েম, অপ্সরা মৌ।

নাটকটির মূল গায়েন সেলিম মাহবুব। গায়েন দে ল ছিলেন চন্দন রেজা, কামরুজ্জামান মিল্লাত, আনিকা মাহিন একা, মাহফুজ সুমন।

ক্রাচের কর্নেল

ক্রাচের কর্নেল এক ভাগ্য বিড়ম্বিত বীর কর্নেল তাহেরের জীবন এবং মুক্তিযুদ্ধ পূর্বাপর রাজনৈতিক বাস্তবতার এক অসাধারণ আলেখ্য। সেই জীবনটি এবং ওই সময়টিকে সুনিপুণ মুন্সিয়ানায় আমাদের চোখের সামনে তুলে এনেছে বটতলা। কর্নেল তাহের কে তা আমাদের বর্তমান প্রজন্ম জানে না। এই না জানার কারণটি হল ষড়যন্ত্রের রাজনীতি তাহেরকে আমাদের কাছ থেকে অন্ধকারে রেখেছে। সেই অন্ধকারকে আলোর পথ দেখিয়েছে প্রথমত এর লেখক শাহাদুজ্জামান এবং দ্বিতীয়ত, নাটকের দল বটতলা এটিকে মঞ্চে উপস্থাপন করে। গতকাল বাংলাদেশ মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে এর মঞ্চায়ণ হয়। নাট্যরূপ দিয়েছের সৌম্য সরকার ও সামিনা সুৎফা নিত্রা, নির্দেশনা দেন মোহাম্মদ আলী হায়দার। আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মহিউদ্দিন আহমেদ আর বিবি অশরাফুন্নেছার দশ ছেলেমেয়ের মধ্যে চতুর্থ সন্তান নান্টুর একজন কর্নেল তাহের হয়ে উঠবার গল্প আমাদের সামনে একের পর এক উপস্থাপিত হতে থাকে। মহড়া কক্ষে মাঝে মাঝে অভিনয় শিল্পীদের মধ্যে দ্বন্দ্বও হতে দেখা যায়। কাজী রোকসানা রুমার কণ্ঠে, ‘জিয়া মালটা কিন্তু অত সহজ লোক ছিল না।’ তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ শোনা যায়, ‘একজন শহীদ প্রেসিডেন্টকে নিয়ে আমরা এভাবে কথা বলতে পারি না।’ এই সংলাপ যেন আমাদের সীমাহীন বিভেদপূর্ণ বাংলাদেশের আপামর জনতার কথা জানিয়ে দেয়। দশজন অভিনয় শিল্পী অসংখ্য চরিত্রের মাঝে ঢুকেছেন আবার বেরিয়েছেন। শরীরে জড়ানো এক টুকরা অতিরিক্ত কাপড়ের সামান্য আড়ালে, লাঠির ব্যবহারে এবং একবার পাপেট সদৃশ্য পুতুলের মুখোশের আড়ালে প্রতিনিয়ত বদলে গেছে চরিত্র। মুক্তিযুদ্ধে তাহেরের পা হারানো এবং যুদ্ধ শেষ পর্যায়ে লুৎফার সঙ্গে তাহেরের কণ্ঠে উচ্চারিত সংলাপ, ‘যুদ্ধটা আসলে হাতছাড়া হয়ে গেল। ঠিক স্বাভাবিক বিজয় হলো না আমাদের। একটা নতুন দেশের জন্ম হলো ঠিকই কিন্তু হলো অনেকটা ফোরসেপ ডেলিভারির মতো, অন্যের সাহায্য নিয়ে।’ কিংবা বুদ্ধিজীবী হত্যার হিসেব মিলাতে গিয়ে অভিনয় শিল্পীদের কণ্ঠে করুণ সুর বেজেছে। দর্শকের চোখ জল ছল ছল করেছে।

বাংলা নাট্যদলের ‘মেঘ’

বাংলা নাট্যদলের প্রযোজনা ‘মেঘ’ নাটকটি রচনা করেছেন উৎপল দত্ত। নির্দেশনা দিয়েছেন বাংলা নাট্যদলের হ ম সহিদুজ্জামান।

‘মেঘ’ নাটকের গল্পে দেখা যায় সমরেশ স্যানাল কলকাতা শহরের একজন নামকরা সাহিত্যিক। সদ্য সিজোফ্রেনিয়া থেকে সেড়ে উঠেছে। তার সাহিত্যের লেখনীর মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে প্রেমে পড়েন মাধুরী। তারা বিয়ে করেন। কিন্তু অসুস্থ সমরেশকে সুস্থতার জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন মাধুরী। বন্ধুসম ডাক্তারের বারবার নিষেধ সত্ত্বেও জটিল ও মনস্তাত্ত্বিক রহস্যময় লেখার মাঝেই নিজেকে হারিয়ে ফেলে সমরেশ। অনিদ্রা ও মানসিক চাপে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে হঠাৎ উপস্থিত হয় সমরেশের কলেজ জীবনের প্রাক্তন প্রেমিকা সুজাতা। পুরনো প্রেম এবং তাদের একান্ত ঘনিষ্ঠতার অনেক চিহ্ন দেখিয়ে সমরেশকে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ দাবি করে বসে সুজাতা। উপায়ন্তর না দেখে সুজাতাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে ফেলে সমরেশ। প্রতিবেশী তারাপদ বাড়–য্যের ছেলে প্রণব এসে উপস্থিত হয় সমরেশের বাড়ি। নিজের বোকামিতে সুজাতাকে হত্যার কথা প্রণবের কাছে অকপটে স্বীকার করে বসে সমরেশ। সুজাতাকে হত্যার প্রমাণ নিশ্চিহ্ন করতে প্রণবকেও হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সমরেশ। অপরদিকে সুজাতাকে না পেয়ে পুলিশ অফিসার যতীন নন্দী এসে হাজির হয় সমরেশের বাড়ি। তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন পুলিশ অফিসারের কৌশলী প্রশ্নে এবং ছোটখাট ক্লুতে ধরা পড়ে ঘটনাটি আরও রহস্যময় করে তোলে সমরেশ। আর এভাবেই এগিয়ে যায় নাটকের গল্প।

অভিনয় করেন আবিদ আহমেদ, সুবর্ণা মীর, হ ম সহিদুজ্জামান সেলিম বহুরূপী, সৈয়দ গোলাম মুর্তুজা, জামিল উদ্দিন খান লোটাস, নাসির আহমেদ দুর্জয়, লিটন খান, আফসানা আক্তার যুথি। নাটকের জন্য মঞ্চ নির্মাণ করেছেন আবিদ আহমেদ এবং শব্দ ও আলোক পরিকল্পনায় নাসির আহমেদ দুর্জয় এবং প্রক্ষেপণে রয়েছেন মিজান রহমান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App