ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে আসামীদের ফাঁসির রায়কে নারী নির্যাতনকারীদের জন্য একটি ধাক্কা বা সতর্কবার্তা বলে অভিহিত করেছে জাতীয় সংসদের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। দ্রুত বিচারে সন্তোষ প্রকাশ করে এর ফলে নারী নির্যাতন কিছুটা হলেও কমবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করে। এ হত্যাকাণ্ডের বিচারে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকায় কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপণ করেছে কমিটি। রবিবার  (২৭ অক্টোবর) জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে কমিটির অধিকাংশ সদস্যরা বলেছেন, সম্প্রতি নুসরাত হত্যার দায়ে আসামীদের ফাঁসির রায়ে কিছুটা হলেও নারী ও শিশু নির্যাতনকারীরা ধাক্কা খেয়েছে। এতে নির্যাতন - নির্মমতা কিছুটা হলেও কমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে কমিটি। এসময় নারী নির্যাতন বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে  তোলারও আহ্বান জানান তারা। জাতীয় সংসদের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৮ম বৈঠকটি রবিবার কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সদস্য এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেছা, মোঃ আব্দুল আজিজ, শবনম জাহান, লুৎফুন নেসা খান ও সৈয়দা রাশিদা বেগম উক্ত বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে নারীদের স্বাবলম্বী হতে সহায়তার জন্য মানুষের চাহিদা রয়েছে এমন ধরনের গ্রহণযোগ্য পণ্য সামগ্রী উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ সম্পর্কে আলোচনা হয়। জয়িতা ফাউন্ডেশ, অঙ্গনা ও সোনার তরীর মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য পণ্য সামগ্রী বাজারজাত করা হচ্ছে মর্মে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে জানানো হয়। নির্মাণকৃত ও নির্মিতব্য সকল কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের সাথে ডে-কেয়ার সেন্টার যুক্তকরণ এবং গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল নির্মাণ ও শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের অগ্রগতিও হচ্ছে বলে জানা গেছে। এসময় কমিটি যে সকল প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন হয়েছে সেগুলো চালু করার বিষয়েও স্থায়ী কমিটি জোরালোভাবে গুরুত্বারোপ করেন। বৈঠকে জানান হয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়) এর আওতায় ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৪৯০টি উপজেলায় তথ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে ডোর টু ডোর সেবা দেয়া ও উঠান বৈঠক আয়োজনের মাধ্যমে আজ পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ ৭৪ হাজার ২৬৫ জন গ্রামীণ অনগ্রসর মহিলাকে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের দৈনন্দিন সমস্যা সমাধান এবং তথ্যসেবা দেয়া  হয়েছে। এছাড়া  নগর ভিত্তিক প্রান্তিক মহিলা উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়) এর মাধ্যমে শহর ভিত্তিক গরীব, দুঃস্থ ও বিত্তহীন মহিলাদেরকে যথোপযুক্ত দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপাদনমুখী, কর্মক্ষম ও আত্মনির্ভর হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্প (৩য় পর্যায়) এর আওতায় ফ্যাশন ডিজাইন, বিউটিফিকেশন, ক্যাটারিং, ইন্টেরিয়র ডিজাইন এন্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, মৌমাছি ও মাশরুম ও বিজনেস ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে কেউ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বা কেউ ঘরে বসে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে স্বাবলম্বী হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানান হয়েছে।