×

বিনোদন

সিনেমা হলের পতন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০১৯, ০২:২০ পিএম

সিনেমা হলের পতন

সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গেছে ‘রাজমনি’ সিনেমা হল

সিনেমা হলের পতন

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি এই মুহূর্তে এক ক্রান্তিকাল পার করছে। সারাদেশে একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে বন্ধ হয়েছে ঢাকার ‘রাজমনি’। একদিকে সিঙ্গেল স্ক্রিন বন্ধ হচ্ছে আবার অন্যদিকে বাড়ছে মাল্টিপ্লেক্স। লিখেছেন শিমুল আহমেদ

কোনো সিনেমা মুক্তি দিতে হলে প্রযোজক-পরিচালকরা সবার আগে ঢাকার সিনেমা হলকে অগ্রাধিকার দিতেন। কারণ এখানকার হলগুলো থেকে তারা সহজেই সিনেমাটির ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা নিতে পারতেন। মফস্বলের বা গ্রামের অধিকাংশ হল মালিক থেকে টিকেটের সঠিক হিসাব পাওয়া যেত না। ঢাকার হলে ব্যবসা করলে অন্যান্য হলেও ব্যবসা করবে এমন একটা ধারণাও প্রচলিত ছিল। সারাদেশের মতো ঢাকার সিনেমা হলগুলোও আশঙ্কাজনক হারে বন্ধ হচ্ছে। তার তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে ‘রাজমনি’।

আরো খারাপ খবর দিলেন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতা মিয়া আলাউদ্দিন। জানালেন, পূর্ণিমা, রাজমনির পর রাজিয়া, জোনাকি, অভিসার সিনেমা হল মালিকরাও বন্ধ করে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

কেন বন্ধ হচ্ছে একের পর এক হল? ‘কেন বন্ধ হবে না সিনেমা হল?’ এমন পাল্টা প্রশ্ন করে মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, মূল কারণ হচ্ছে ব্যবসা নেই। একটা স্কুল তৈরি করলে যেমন ছাত্রের প্রয়োজন, মসজিদের জন্য মুসল্লি। কিন্তু হলে দর্শক নেই।

একটা সিনেমা হলকে টিকিয়ে রাখতে হলে তো সবার আগে দরকার কনটেন্ট অর্থাৎ সিনেমা। খালি সিনেমা হলেই তো হবে না ভালো সিনেমা হতে হবে। এখন মৃত্তিকা মায়া, ঘানি এগুলো পুরস্কারের জন্য ঠিক আছে, কিন্তু সিনেমা হলের জন্য ঠিক না। সিনেমা হলের দর্শক হচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। তাদের জন্য দরকার জনপ্রিয় ধারার সিনেমা। তিনি জানালেন, স্বাধীনতার পূর্বে ঢাকায় ১৩টি সিনেমা হল ছিল। যেটা একসময় গিয়ে ঠেকে ৪৪টিতে। রাজমনি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এর সংখ্যা ২৬।

তবে ভালো সিনেমা হচ্ছে না এটি পুরোপুরি মানতে নারাজ পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন। তিনি বলেন, ভালো সিনেমা এখন কম হচ্ছে এটা যেমন সত্য, তেমনি একদমই হচ্ছে না তা সত্য নয়। কারণ খালি ভালো সিনেমা হলে তো হবে, তা চালানোর মতো হল তো লাগবে। অনেক হল মালিক প্রযোজকের ন্যায্য পাওনা দিচ্ছেন না। ১৫০-২০০ টাকার টিকেটে যদি একজন প্রযোজক যদি ৩০-৩৫ টাকা পায় মাত্র তা হলে কীভাবে পরবর্তী সিনেমা বানাবে। আর ভালো ছবির জন্য ভালো বাজেট দরকার। সেটা টাকা ওঠে আসার গ্যারান্টি না থাকলে কেন কেউ বিনিয়োগ করবে?

মধুমিতা সিনেমা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ চান ভারতীয় সিনেমার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা শিথিল করা হোক। তিনি ক্ষোভের সুরেই বলেন, আমরা চাইলেই এ দেশে হলিউডের সিনেমা একই দিনে মুক্তি দিতে পারছি, কিন্তু বলিউডে যত আপত্তি। আমরা তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে গত মার্চ মাসের মিটিংয়ে হলগুলো টিকেয়ে রাখার জন্য চেয়েছিলাম বছরে ৬-৮টি হিন্দি ছবি ভারতের সঙ্গে একই সময়ে মুক্তির সুযোগ দিতে। আমাদের কথা দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত তার কোনো অগ্রগতি দেখছি না।

তিনি আরো বলেন, যৌথ প্রযোজনার আইন কড়াকড়ি হওয়ার কারণে এখন সিনেমা নির্মাণ কমে গেছে। যৌথ প্রযোজনার ছবিগুলোতে ঝকঝকে লোকেশন, দুই দেশের তারকা, ভালো বিনোদন থাকায় দর্শক হলে আসতো বেশি। কিন্তু আইন কড়া করে লাভটা হলো কী?

পরিচালক জাকির হোসেন রাজু দায়ী করলেন হলের পরিবেশকে। তিনি বলেন, এখন অধিকাংশ সিনেমা হলের পরিবেশক ভালো না। একটা বাথরুম ভালো না। সিট ছেঁড়া। তাহলে কেন দর্শক যাবে হলে? ওনার যদি হলের কিছু সংস্কার করেন তাহলে কিন্তু কিছু দর্শক বাড়বে।

হল সংস্কারের বিষয়টি মানতে নারাজ ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ ও মিয়া আলাউদ্দিন। ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, আমার হলের বাথরুমগুলো আমি নতুন করে করেছি। সিটগুলো মোটামুটি সব ঠিক করা হয়েছে। তারপরও এই বছর ‘পাসওয়ার্ড’র পর কোনো সিনেমা বলার মতো ব্যবসা করেনি আমার হলে।

প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, আমরা বিভিন্ন খবরে বা মিটিংয়ে শুনেছি সিনেমা হল বন্ধ করে মার্কেট করতে হলে সেখানে একটা সিনেপ্লেক্স না থাকলে তার অনুমোদন দিবে না রাজউক। অথচ এর কোনো লিখিত নির্দেশনা আছে বলে আমাদের জানা নেই। এটা হলে ভালো হতো।

অভিযোগের সুরেই তিনি বলেন, রাজমনি হলের মালিক এই হল দিয়েই রাজমনি ইশা খাঁর মতো হোটেল করেছেন। বানিয়েছেন বাংলার তাজমহল। অথচ তিনি রাজমনি বন্ধ করে দিয়ে সে জায়গায় মার্কেট করছেন, সেখানে কোনো সিনেমা রাখবেন না বলছেন।

সিঙ্গেল স্ক্রিণ বন্ধকে স্বাভাবিক বলে এর জন্য মাল্টিপ্লেক্স সংখ্যা বাড়ানোর দরকার মনে করেন তিনি। সরকার একটা করতে পারে হল মালিকদের স্বল্প সুদে বা অনুদান হিসেবে অর্থ দিতে হল সংস্কারের জন্য। যেটার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে বলে আমি জানি। খুব শিগগিরই এর বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পারব বলে মনে করি। আর যেটা করতে হবে আমাদের এখানে সিনেপ্লক্সে বাড়াতে হবে। প্রতিটা সরকারি তথ্য কেন্দ্রগুলো সিনেমা হল রাখার কথা বলছে সরকার। আইসিটি মন্ত্রণালয়ও বলছে ২৩টি সিনেমা হল রাখবে আইটি টাওয়ারে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে হয়তো সংকট অনেকাংশেই ঠিক হয়ে যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App