×

জাতীয়

চাঞ্চল্যকর নুসরাত হত্যা মামলার রায় আজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০১৯, ১০:৪৩ এএম

চাঞ্চল্যকর নুসরাত হত্যা মামলার রায় আজ
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে বর্বরোচিত কায়দায় আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হবে আজ বৃহস্পতিবার। আসামিদের জবানবন্দি, সাক্ষ্যগ্রহণ, বাদী, বিবাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে গত ৩০ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ। মাত্র ৬১ কার্য দিবসে ৮৭ আসামির সাক্ষ্যগ্রহণ এবং যুক্তিতর্ক শেষে এমন চাঞ্চল্যকর মামলার নিষ্পত্তি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একটি বিরল ঘটনা। এদিকে শুধু সোনাগাজী বা ফেনী নয়, গোটা দেশবাসী এই রায়ের অপেক্ষায়। নুসরাতের মা শিরিন আখতারসহ তার স্বজনদের দাবি, আসামিদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়। বাদীপক্ষের আইনজীবীও সর্বোচ্চ শাস্তির প্রত্যাশা করছেন। একই প্রত্যাশার কথা শোনা যাচ্ছে ফেনীর নাগরিক সমাজেও। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই কামনা করছেন তারা। অন্যদিকে মামলায় ‘দুর্বল সাক্ষী ও বেশ কিছু অসঙ্গতি’ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে আসামিরা খালাস পাবেন বলে আশা করছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। নুসরাতের মা গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, আমি আমার কলিজার টুকরা মেয়ে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এমন শাস্তি হোক, যেন পৃথিবীর অন্য কোথাও কোনো মায়ের বুক এভাবে খালি না হয়। আর মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, আমি ন্যায় বিচার চাই। আমার বোনকে (নুসরাত) যারা হত্যা করেছে আদালত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেবেন। সারা দেশের মানুষ নুসরাত হত্যার বিচারের দিকে তাকিয়ে আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করি আমরা ন্যায় বিচার বঞ্চিত হবো না। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, এ মামলার আসামিরা যে ভিকটিম নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তা আদালতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা আশা করি এ মামলার আসামিরা সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে। এ মামলাটি বাংলাদেশে উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। আর আসামিপক্ষের আইনজীবী ফেনী বারের সিনিয়র এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন নান্নু ও কামরুল হাসান বলেন, ন্যায় বিচারে আসামিরা খালাস পাবেন। কারণ রাষ্ট্রপক্ষ তাদের মামলার কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি। পিবিআই পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. শাহ আলম জানিয়েছেন, রায়কে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। মামলায় অভিযুক্ত ১৬ আসামিকেই আদালতে আনা হবে। গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় অধ্যক্ষের সহযোগীরা। ৮ এপ্রিল নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান আট জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেয়ায় তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় বলে বলা হয় মামলায়। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় নুসরাতের। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক’দিনের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় আসামিদের। গ্রেফতার ও তদন্তের পর গত ২৮ মে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে ১৬ জনকে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সেদিন অভিযোগপত্রসহ মামলার নথি বিচারক ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে পাঠিয়ে দেন। এরপর ৩০ মে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে আসামিদের হাজির করা হলেও বিচারক সেদিন অভিযোগপত্র গ্রহণের ওপর শুনানি না করে ১০ জুন শুনানির তারিখ ধার্য করেন। পরে ১০ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ফেনীর পরিদর্শক মো. শাহ আলম আদালতে মোট ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন। তারা হলেন- মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, আওয়ামী লীগ নেতা ও মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহসভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল। মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হলেও তদন্তে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় অন্য পাঁচ জনকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করা হয়। পরে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের, জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। অন্যদিকে, অধ্যক্ষের যৌন হয়রানির বিষয়ে নুসরাতের অভিযোগ গ্রহণের সময় তার ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনেরও বিচার চলছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App