×

সাময়িকী

ঈর্ষণীয় সব গদ্যের জনক মোহাম্মদ রফিক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০১৯, ০৭:৪৫ পিএম

ঈর্ষণীয় সব গদ্যের জনক মোহাম্মদ রফিক

আধুনিকতার একটি নিজস্ব ধারণা অর্জন করেছেন তিনি, আর সেই ধারণা থেকে বাংলা সাহিত্যের বা কবিতার আধুনিকতা সম্পর্কেও একটি উপসংহারে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

জীবনকে ছুঁয়ে-ছেনে পানপাত্রের তলানির স্পর্শ নিতে নিতে কবি মোহাম্মদ রফিক কি এখন আরও উজ্জীবিত, আরও দুরন্ত এক ঘোড়সওয়ার? আর সে জন্যেই তিনি কি উদাত্ত আহ্বান জাগিয়ে তোলেন তার কলমে?

বলো, বলে দাও আমি ভালোবাসি, তুমি ভালোবাসো ভালোবাসা বিপ্লব বিপ্লব ভালোবাসা গাইছে ভূমণ্ডল।

বন্ধুর জন্যে শোকপ্রশস্তি রচনা করতে গিয়ে একদা তাকে বলতে শুনেছিলাম, ‘পিতৃপরিচয় মুছব বলে শেষাবধি মুছি নিজেকে’; কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি মুছে দিতে পারছেন তিনি নিজেকে? নাকি কচি লেবুপাতার ঘ্রাণের মতো নিজেরই উদ্বোধন ঘটাচ্ছেন নতুন করে সব বন্ধন ছিন্নভিন্ন করে? জাগিয়ে তুলছেন সেই আকুতি, যা থাকে কেবল সৃষ্টির শুরুতে- ক্রমাগত যা সখ্য ও যৌথতার উদ্বোধন করে চলে? তার কাব্যগ্রন্থ ‘মানব পদাবলি’তে বিচ্ছেদের কোনো সুর নেই, বিদায়ের কোনো ঘণ্টাধ্বনি নেই। বরং যেন আবহ হয়ে ভেসে থাকে রবীন্দ্রসঙ্গীত, ‘তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে, যত দূরে আমি ধাই/ কোথাও দুঃখ, কোথাও মৃত্যু কোথা বিচ্ছেদ নাই’। জীবনানন্দ দাশের রিক্ত হাহাকার আমাদের কতই না নিঃস্ব করে, ‘এ পৃথিবী একবার পায় তাকে, পায় না কো আর’, কিন্তু মোহাম্মদ রফিক অসম্ভব স্বপ্নময়তায় এখনও বিভোর, লেখেন তিনি, ‘একবার পায় যাকে, বহুবার পায়/ বহুভাবে পায়/ মিলনের নেই কোনো পরিসীমা/ সীমা বা অসীম’। এক প্রচণ্ড আশ্বাস আর নির্ভয়তা তার কণ্ঠে, অনায়াসে বিশ্বাসী হওয়ার সাহস জোগায়,

তুমি থাকো আমি আসছি, উড়িয়ে পুড়িয়ে যানবাহনের হাহাকার মৃত্যুস্তূপ, আমি আসছি, দিগ্দিগন্ত কাঁপিয়ে ধসিয়ে নেই নেই, ছায়া-ছায়া, মূর্তি নয়, বীর নয়, আমি উজানে নায়ের মাঝি ভাটিতে-বা নই দিশেহারা আমি আসছি

মূলত কবিই তিনি, কিন্তু ঈর্ষণীয় সব গদ্যেরও জনক মোহাম্মদ রফিক সেইসব মানুষের একজন, যারা মনে করেন, আধুনিক হতে হবে আর সেজন্যে প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে- এমন কোনো তাগিদ থেকে আধুনিক হয়ে ওঠা যায় না; এমন কোনো তাগিদের কোনো প্রয়োজন নেই। আধুনিকতার একটি নিজস্ব ধারণা অর্জন করেছেন তিনি, আর সেই ধারণা থেকে বাংলা সাহিত্যের বা কবিতার আধুনিকতা সম্পর্কেও একটি উপসংহারে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এই মীমাংসাই তার সাহিত্য ও সাহিত্যভাবনাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। সাধারণভাবে মনে করা হয়, তিরিশের দশকের সাহিত্যিকদের নন্দনতাত্ত্বিকতার ধারণাই সৃষ্টি করেছে বাংলা সাহিত্যের মূল আধুনিকতার স্রোত। তবে যুক্তিশীলতা ও সৃজনশীলতার উদাহরণ দেখিয়ে মুষ্টিমেয় যে কয়েকজন এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসেন, মোহাম্মদ রফিক তাদেরই একজন। আর ওই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে তিনি তার শয্যা পেতেছেন এই অনুভূতির ছায়ায়- যার বা যাদের কাছ থেকে তিনি সবচেয়ে বেশি শিখেছেন, সবচেয়ে বেশি ঋদ্ধ হয়েছেন, তিনি বা তারাই তার কাছে সবচেয়ে আধুনিক।

এই অর্থে মোহাম্মদ রফিকের বিবেচনায় বাংলা ভাষায় আধুনিকতার সূত্রপাত চর্যাপদ থেকে এবং এখনও সেই আধুনিকতারই চর্চা অব্যাহত রয়েছে। এই বিশ্বাস, এই যুক্তিশীলতা ও এই বিবেচনা মোহাম্মদ রফিকের কবিতাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে নিজস্ব ভূমির ওপরে, মুক্ত করেছে উপনিবেশিক ধারাবাহিকতা থেকে। অন্য এক ভাবেও তিনি এই ধারাবাহিকতা থেকে নিজেকে মুক্ত করেন- যুক্তি দিয়ে দেখান, আধুনিকতা এক ধরনের বিশ্ববোধ; আর তাই যদি হয়, তা হলে দেখা যাবে বিশ্বসাহিত্যে বা সাহিত্যে বিশ্ববোধের ধারণাও ঠিক ইংল্যান্ড থেকে আসেনি। কেননা পৃথিবীতে বিশ্ববোধের ধারণার প্রকাশ ঘটে প্রথম লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মধ্যে। আর কে না জানে, ভিঞ্চি শুধু চিত্রশিল্পীই নন, জ্ঞান ও শিল্পচর্চার নানা শাখায় ছিল তার বিচরণ। ভিঞ্চির ওই বিশ্ববোধের ধারণা পরে সঞ্চারিত হয়েছে গ্যেটের মধ্যে- কোনো ইংরেজের মধ্যে নয়। আর গ্যেটের এই ধারণাকে মোহাম্মদ রফিকের বরং অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে যে, আদর্শ হিসেবেই যদি বিবেচনা করতে হয়, তা হলে গ্রেকো-রোমান সাহিত্যবোধকেই তা করা উচিত। এবং ইউরোপব্যাপী আধুনিকতার মূলবিন্দুটিও তার বিবেচনায় গ্রিক-রোমান প্রভাবের অধীন।

আধুনিকতার এমন ধারণায় স্পন্দিত রফিক এক দশকেরও আগে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আধুনিকতা মানে যদি হয় মানুষের খণ্ডিত রূপকে উৎসাহিত করা, তাহলে তাকে আমি আধুনিকতা বলব না।’ কিন্তু তার চিন্তা বা চিন্তার সম্প্রসারণ কিংবা বিবর্তন এখানেই স্থির হয়ে যায় না। মনে পড়ে, অন্য কোথাও, কোনো এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আধুনিকতা তো বিচ্ছিন্নতারই ফসল। সুতরাং এটা বললে হবে না যে আধুনিকতা বিচ্ছিন্নতা তৈরি করেছে, বিচ্ছিন্নতা থেকেই এসেছে আধুনিকতা। এটা পারস্পরিক। আবার এটা বিচ্ছিন্নতা থেকে কাটিয়ে ওঠার প্রয়াসও তৈরি করেছে।’ তার এই চিন্তা আমাদের চর্যাপদের অভ্যুদয় ও বাংলা ভাষার বিকাশকে বুঝতেও সাহায্য করে। যে শ্রেণিকার্যকারণ এই ভাষায় সাহিত্যের বিকাশকে অনিবার্য করে তুলেছিল, তাকে অনুভব করতে শেখায়। আর এসবের ফলে মোহাম্মদ রফিকের কবিতাও হয়ে ওঠে বাংলার লোকমানসের ফসল। তার কবিতা তাই হয়ে ওঠে মানুষের সামগ্রিকতাকে ছন্দোবদ্ধ করার প্রয়াস, মানুষ ও মহাকালের নিরন্তর প্রবহমানতার গভীরে বসবাসের প্রয়াস। তার কর্ষিত প্রতিটি বাক্যে মিশে থাকে প্রেমস্পন্দিত গাঢ় অঙ্গীকার, যার প্রেক্ষাপট আর পরিপ্রেক্ষিতই মানুষকে দেয় বেঁচে থাকার অফুরান শক্তি। প্রেমকেই মূর্ত করেন তিনি, কিন্তু তা সর্বজনীন হয়ে ওঠে প্রকৃতি ও সমাজ ঘিরে। তার এই শক্তির প্রকাশ ঘটছে শুরু থেকেই, বিশেষত ‘কপিলা’তে, কিন্তু ‘মানব পদাবলী’তে এসে তা যেন উদগ্র চঞ্চলতায় অস্থির হয়ে স্থিরতা খুঁজছে যৌথতার অমোঘ আবর্তে। জীবনের প্রতি এই ঘোর লাগা টান, অনুভব করি, মোহাম্মদ রফিক অর্জন করেন তার রাজনৈতিক অঙ্গীকারের মধ্যে থেকে। আর তা অর্জনের সূত্রও ছিল সাহিত্য। মার্কস, এঙ্গেলস পড়ে নয় কিংবা প্রাত্যহিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের কারণে নয়, বামপন্থার দিকেও তার ঝুঁকে পড়ার অন্যতম কারণ ছিল মাত্র অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকার সময় পড়া ফিওদর দস্তয়েভস্কির ‘বঞ্চিত লাঞ্ছিত’! বাবার এক সম্পর্কিত ভাইয়ের নতুন বানানো টিনের ঘরের দোতলায় বসে বসে পড়া তাকে পাল্টে দেয় ভীষণভাবে। তারপর শহরে এসে তিনি বন্ধুদের কাছে, বইবিপণিতে, পাঠাগারে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেন দস্তয়েভস্কির লেখা। একের পর এক পড়ে ফেলেন ‘ইডিয়ট’, ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’, ‘দি ব্রাদার্স কারামাজভ’, ‘নোটস ফ্রম দ্য আন্ডারগ্রাউন্ড, ‘ডেভিলসে’র মতো গ্রন্থ। দস্তয়েভস্কি থেকে তিনি পৌঁছান একে একে তলস্তয়, পুশকিন, গোগল আর তুর্গেনিভের কাছে।

এইভাবে সাহিত্যে ঋদ্ধ মোহাম্মদ রফিক অনায়াসে ষাটের দশকে মার্কস-এঙ্গেলস-লেনিনের সৃজন ও সৃষ্টির, জ্ঞান ও মেঠো খেরোখাতার সান্নিধ্য না পেলেও অনায়াসে পৌঁছান ‘নিবিড় ভেতর থেকে’ বামপন্থা ও সাম্যবাদী মন্ত্রের মহাসমুদ্রতটে। আবার এই মহাসমুদ্রতট, মানে ষাটের দশক সম্পর্কে তাকেই বলতে শুনি, ‘আমরা যখন ষাটের দশকে লিখতে শুরু করেছি- তখন আমাদের পক্ষে স্বাভাবিক লেখা সম্ভবই ছিল না। আমি আমার যত বন্ধুবান্ধবকে জানি তারা স্বীকার করবে কিনা জানি যে, তাদের সবারই যৌনজীবন শুরু হয়েছে এক ধরনের অস্বাভাবিকতার ভিতর দিয়ে। একজন লোকের যৌনজীবন যদি অস্বাভাবিকতার ভিতর দিয়ে তৈরি হয় তবে কী করে আশা করা যায় যে বাকি জীবনে তার দৃষ্টিভঙ্গি খুব স্বাভাবিক এবং জীবনমুখী হয়ে উঠবে।’ বিশেষত ষাট ও সত্তরের দশক জুড়ে বাংলা সাহিত্যে এই অস্বাভাবিকতার ফসল কীভাবে ফলেছে, তা নিয়ে কোনো গবেষণা বা লেখালেখি দ্রষ্টব্য হয়ে চোখে পড়েনি বটে; কিন্তু বিচ্ছিন্নতার যে চালচিত্র মোটা দাগে ফুটে ওঠে, তা থেকে অনুমান করে নেয়া যায়, এখনও আমাদের সাহিত্যের ন্যূনতম একটি গড়পড়তা নন্দনতাত্ত্বিকতা সৃষ্টি হয়নি, তার কারণ ওই অস্বাভাবিকতা। মোহাম্মদ রফিক যখন এ নিয়ে কথা বলেন, তখন তার এই পরিভ্রমণগত চিন্তার একটি ব্যাখ্যাও ভেসে ওঠে। আমরা দেখি, নারীকে তিনি প্রতিস্থাপন করেন প্রবল এক শক্তিরূপে; বিশেষত যার ঈর্ষণীয় প্রকাশ ঘটে ‘কপিলা’তে। অবশ্য শুধু কপিলা কেন, তার আরও অনেক কবিতা ও লেখাতেই ঘটেছে এই বিশ্বাসের প্রকাশ। বাঙালি জীবনের প্রতিভূ হিসেবে তিনি দাঁড় করাতে চেয়েছেন ‘কপিলা’কে, আর তা কেবল এই জীবনযাপনের অর্থে নয়, শুধু সামাজিক বিবেচনার অর্থে নয়, বাংলা কবিতার ছন্দ-প্রকরণের অর্থেও বটে। ‘কপিলা’য় তিনি শুধু কবিতার বিভিন্ন অঙ্গের মধ্য দিয়ে নয়, প্রত্যঙ্গের মধ্যে দিয়েও সঞ্চরণ ঘটিয়েছেন তিন চরিত্রের ছন্দ-প্রকরণের, সঞ্চরণ ঘটিয়েছেন লোকমানসের ও লোকসংস্কৃতির বিবিধ ধ্বনিবৈষম্য ও সুষমার। এ আমাদের এক বড় দুর্ভাগ্য, আমাদের কোনো সাহিত্য সমালোচকের মাথা কিংবা হৃদয় থেকে এখনও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কপিলার পাশে রেখে মোহাম্মদ রফিকের কপিলাকে অবলোকনের স্বপ্ন এখনও জাগল না (অবশ্য এমনও হতে পারে, এই লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুনাম কুড়ানোর আশায় কোনো চালিয়াত সাহিত্যিক এই কাজে নেমে পড়বেন এবং একটা অশ্বডিম্ব এই মৃত্তিকায় গড়াগড়ি দিতে থাকবে)। মহাভারতের দুগ্ধদায়িনী এই গাই তার ‘কপিলা, কাদায় জলে, ঘামেশ্রমে অন্নদা স্বদেশ’। এমনভাবে তিনি লিখতে পারেন, কেননা তিনি বাস্তবতই হৃদয়ের গহিন থেকে বিশ্বাস করেন নারীশক্তি যত বিকশিত হবে, একটি সমাজ তত বিকশিত হবে। এমন ঘোষণা দিয়ে নারীশক্তির ওপর প্রবল, প্রগাঢ়, শর্তহীন বিশ্বাসের কথা আমরা আমাদের কালে বোধকরি আর মাত্র একজন সাহিত্যিককেই বলতে শুনেছি- কথাসাহিত্যিক অমিয়ভূষণ মজুমদারও নারীকে মানতেন জগতের সব ইতিবাচকতা ও সৃজনশীলতার আধার বলে। জ্ঞান ও ইতিহাসবোধের যে অন্তহীন প্রবাহ খেলা করে, সেসবের তরঙ্গে ভাসতে ভাসতে আর মাত্র একজনের কথাই হয়তো মনে পড়ে- তিনি বিষ্ণু দে। আপন আধুনিকতার অন্বেষণ করেছিলেন বিষ্ণু দে তার সময়ের প্রতিকূল স্রোতে দাঁড়িয়ে, বাংলার ঐতিহ্যকে রোপণ করে কাব্যিক স্বদেশযাত্রাকে নিশ্চিত করেছিলেন, ‘শেষ রোমান্টিকের’ কাল নির্মাণ করেছিলেন; মোহাম্মদ রফিকও তেমনি স্থিত হয়েছেন আপন আধুনিকতায়, লোকজীবনের মধ্যে থেকে তুলে এনেছেন তার কাব্যিকতাকে আবার বৈশ্বিক মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাংলা কবিতাকে উন্নীত করেছেন নতুন এক পর্বে।

শেষ করছি নিতান্তই এক ব্যক্তিগত স্মৃতি দিয়ে। সেটা বোধহয় ২০০৫ অথবা ২০০৬ সালের কথা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি এক চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উদ্যোক্তাদের আমন্ত্রণে কথা বলতে। শেষ পর্যন্ত তা আমার কাছে হয়ে উঠল দু-চারটে কথা বলার চেয়ে কথা শোনার বিরল মহোৎসব। অনুষ্ঠানে এসেছিলেন সেলিম আল দীন আর মোহাম্মদ রফিক। সেলিম আল দীন তার বক্তব্যে বিমূর্ত শিল্পের সমালোচনা করেছিলেন আর সে আলোচনার সূত্র ধরে মোহাম্মদ রফিক যে বক্তব্য রেখেছিলেন, তা এখন আর ঠিকঠাক মনে না থাকলেও এটুকু বলতে পারি, যে ঐশ্বর্য অদৃশ্য বা হারিয়ে যাওয়ার পরও মানুষকে একটি ধারণায় সমৃদ্ধ করে রাখে, তিনি সে দিন আমাদের সেই ঐশ্বর্য উজাড় করে দিয়েছিলেন। ল্যাটিন আমেরিকার সাহিত্য-শিল্প থেকে শুরু করে বিশ্বের আরও অনেক উদাহরণ উপস্থিত করে তিনি বলেছিলেন, বিমূর্ত শিল্প বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। বরং তা বিকশিত ও সমৃদ্ধ করেছে শিল্পকে, শিল্পচিন্তাকে। উদ্যোক্তাদের কাছে যদি সেই বক্তব্যের কোনো অডিও থেকে থাকে আর তা থেকে শ্রুতিলিখন সম্ভব হয়, তা হলে এই গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যটিকে পৌঁছানো সম্ভব আরও অসংখ্য পাঠকের কাছে। কবিতার জন্যে যে কত পথে হাঁটতে হয়, কত জগতকে ছুঁতে হয়, তা আমরা অনুভব করতে পারি মোহাম্মদ রফিকের এমন বিচিত্র হঠাৎ-উদ্ভাসনে। যেমন, ‘আত্মরক্ষার প্রতিবেদন’ নামে একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন তিনি লাতিন আমেরিকায় কবিতার উদ্ভব প্রসঙ্গে; কিন্তু তা হয়ে উঠেছে বিশ্বের তাবৎ কবিতাপ্রেমীদের কাছে এক পরম সম্পদ ও ব্যাকরণ। এই যে মোহাম্মদ রফিকের উঠে আসা- সাহিত্য থেকে রাজনীতিতে, রাজনীতি থেকে সাহিত্যে, সাহিত্য থেকে মননে, মনন থেকে সাহিত্যে- এ তো একদিনের নয় আর পাঠকও তো তাকে আবিষ্কার করেননি একদিনে। তিনি নিজেকে প্রস্তুত করেছেন, উন্মোচন করেছেন দীর্ঘ পরিভ্রমণ ও আত্মক্ষরণের মধ্য দিয়ে; পাঠকও তাকে আবিষ্কার করেছেন বহুদিনে, বহু যাত্রার মধ্যে দিয়ে। তা হলে কী করে সম্ভব তাকে ফিরে দেখা এক লেখাতে?

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App