শামসুর রাহমান আমাদের চেতনার কাব্যিক রূপকার। তার কবিতা ধারণ করেছে আমাদের সমাজসত্তার সামগ্রিক বিবর্তন। ভাষা আন্দোলন পূর্ববাংলার কবিতাকে যেভাবে বদলে দিয়েছে শামসুর রাহমানের কবিতাকেও সে প্রেক্ষাপটে বিচার করতে হবে। নিভৃত কাব্যলোক থেকে তিনি সমকালের রক্তক্ষতে আলোড়িত হয়েছেন, জাতীয় জীবনের মূল কেন্দ্রস্বরকে তাঁর জীবনচেতনায় ভাস্বর করে তুলেছেন। নির্জনতা ও নিঃসঙ্গতা থেকে শামসুর রাহমান যেভাবে জনতার স্বাধীনতাকামী ময়দানে কবিতাকে নিয়ে এসেছেন- তা বাংলা কবিতার জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা। বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানের ৯১তম জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে যৌথভাবে বাংলা একাডেমি, জাতীয় কবিতা পরিষদ এবং শামসুর রাহমান স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শামসুর রাহমানকে ঘিরে স্মৃতিচারণ ও আলোচনায় অংশ নেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী, কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ। অনুষ্ঠানে শামসুর রাহমানের পুত্র ফাইয়াজ রাহমান, পুত্রবধূ টিয়া রাহমান, পৌত্রী নয়না রাহমান, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল, লেখক-সাংবাদিক নাসিমুন আরা হক, গবেষক ড. ইসরাইল খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কবিকে নিবেদিত কবিতাপাঠে অংশ নেন রবিউল হুসাইন, আনোয়ারা সৈয়দ হক, কাজী রোজী, লিলি হক, শিহাব সরকার, ফারুক মাহমুদ, হাসান হাফিজ, রেজাউদ্দিন স্টালিন, নাহার ফরিদ খান, পিয়াস মজিদ, হানিফ খান। কবির কবিতা আবৃত্তি করেন রফিকুল ইসলাম, লায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী, ফয়জুল আলম পাপ্পু এবং শাহাদাৎ হোসেন নিপু।

বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশের সমাজমানসের বিবর্তনের সঙ্গে শামসুর রাহমানের কবিতাকে মিলিয়ে পাঠ করলে দেখা যায় এ অঞ্চলের সমস্ত সংগ্রামী, সদর্থক ও শুভবাদী আকাক্সক্ষার সঙ্গে যোগাযোগ অনুভব করেছেন। শিল্পমান অক্ষুণ্ণ রেখেও কবিতাকে যে মানুষের কাছাকাছি নিয়ে আসা যায়- সে সত্য তাঁর কাব্যিক করতলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। উদ্ভট উটের পিঠে স্বদেশকে চলতে দেখেও তিনিই সেই কবি- যিনি বলতে পারেন ‘বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে।’ শুরুতে কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষের সামনে কবির প্রতিকৃতি উন্মোচন করা হয় এবং বাংলা একাডেমির সাবেক কর্মকর্তা প্রাবন্ধিক-অনুবাদক আরশাদ আজিজের প্রয়াণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, শামসুর রাহমান স্বৈরাচার-মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা এবং সব অশুভের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে, অসাধারণ শিল্পনৈপুণ্যে কবিতা রচনা করে গেছেন। যতদিন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য থাকবে ততোদিন শামসুর রাহমানের কবিতা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে পঠিত হবে। আলোচনা ও কবিতাপাঠ শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শামসুর রাহমানের কবিতা থেকে সংগীত পরিবেশন করেন রফিকুল আলম এবং আবিদা রহমান সেতু। কবির কবিতা অবলম্বনে নৃত্য পরিবেশন করেন সাহিদা রহমান সুরভি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি তারিক সুজাত এবং বাংলা একাডেমির উপপরিচালক কবি আমিনুর রহমান সুলতান ও শাহাদাৎ হোসেন নিপু।