×

শিক্ষা

শিক্ষকরা রাজপথে পড়াশোনা লাটে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:২৩ এএম

শিক্ষকরা রাজপথে পড়াশোনা লাটে

ফাইল ছবি

শিক্ষকরা রাজপথে পড়াশোনা লাটে
শিক্ষকরা রাজপথে পড়াশোনা লাটে
বেতন বৈষম্য কমাতে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকরা এবং এমপিওভুক্তির দাবিতে মাধ্যমিক শিক্ষকরা মাঠে নেমে আন্দোলন করছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা এবং দ্রুত আত্মীকরণের দাবিতে নতুন সরকারি হওয়া কলেজ শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়েছে। এ দিকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে নয় মাস ধরে বেতন না পেয়ে ঢাকায় এক কর্মসূচি থেকে সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন হাজারো শিক্ষক। ফলে শিক্ষাঙ্গনে তৈরি হয়েছে এক ধরনের অস্থিরতা। সবমিলিয়ে আন্দোলনের জন্য শিক্ষকরা মাঠে নামায় পড়াশোনা লাটে উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, জেএসসি ও জেডিসি, পিইসি, নির্বাচনী এবং বার্ষিক পরীক্ষার আগ মুহূর্তে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে আন্দোলন শুরু করেছেন। বছরের শেষে বহু পরীক্ষা থাকে। পরীক্ষার আগে আগে শিক্ষকদের আন্দোলনে অভিভাবকরা তাদের সন্তানের পড়াশোনা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ- এই তিন স্তরে প্রায় ৯ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৫ লাখই এখন আন্দোলন করছেন। আর বাকিরা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দেশের সবচেয়ে বড় এই পেশাজীবী গোষ্ঠীকে ঠিকভাবে সামাল দিতে না পারায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এমপিওভুক্তির দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত রবিবার রাতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক হলেও ফলপ্রসূ হয়নি। এর ফলে সোমবার (২১ অক্টোবর) থেকে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা অনশন শুরু করেছেন। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহদুন্নবী ডলার বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে রবিবারের বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়ায় অনশন শুরু হয়েছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। আর এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অবশ্য এসব নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী সোমবারও কিছু বলেননি। তবে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এমপিওভুক্তির বিষয়ে কথা বলার জন্য গণমাধ্যমের বিশিষ্টজনদের নিমন্ত্রণ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। অন্যদিকে বেতন বৈষম্য কমানোর দাবিতে সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষক আন্দোলন ঠেকানোর জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে আন্দোলনরত শিক্ষকদের শোকজ করা শুরু করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। কিন্তু তাতে আরো ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকের শিক্ষকরা বলছেন, শোকজ দিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলন ঠেকানো যাবে না। আগামীকাল ২৩ অক্টোবর প্রাথমিক শিক্ষকদের মহাসমাবেশে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। শিক্ষকরা বলেছেন, বেতন বৈষম্য কমানোর যে রূপরেখা মন্ত্রণালয় বলছে, সেটি শিক্ষকরা মানছেন না। একাধিক প্রাথমিক শিক্ষক বলেছেন, এখানে সরকারই জটিলতার সৃষ্টি করেছে। ২০১৪ সালেই যদি উভয় পক্ষের মধ্যে বৈষম্য কমানো হতো, তাহলে এখন এই জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন ভোরের কাগজকে বলেছেন, শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য কমাতে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। শিক্ষকদের আন্দোলনের দরকার নেই। তবুও যেসব শিক্ষক আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন তাদের চিহ্নিত করে শোকজ করা হচ্ছে। [caption id="attachment_171213" align="aligncenter" width="750"] ফাইল ছবি।[/caption] মন্ত্রণালয়ের এমন পদক্ষেপে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্ষেপেছেন। জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের প্রধান মুখপাত্র বদরুল আলম বলেন, সরকার যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি না মানবে ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। কাল মহাসমাবেশে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আন্দোলন ঠেকাতে শিক্ষকদের শোকজ করে হয়রানি করছে মন্ত্রণালয়। এগুলো করে শিক্ষকদের থামানো যাবে না, বরং শিক্ষকদের উত্তেজিত করে তোলা হচ্ছে বলে তিনি জানান। যেসব উপজেলায় একটিও সরকারি কলেজ নেই সেসব উপজেলায় একটি করে কলেজকে সরকারি করা হয়েছে। কিন্তু গত দু’বছরেও সরকারি হওয়া কলেজগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি আত্মীকরণ হয়নি। এ নিয়ে এসব কলেজের শিক্ষক কর্মচারীদের চাপা ক্ষোভ আছে। প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে এই মুহূর্তে আন্দোলনে না নামলেও যে কোনো সময় তারা মাঠে নেমে যেতে পারেন। জানতে চাইলে সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির (সকশিস) সভাপতি জহুরুল হক বলেছেন, শিক্ষাকে স্বাভাবিকভাবে চালাতে হলে শিক্ষকদের মধ্যে সচ্ছলতা আনার পাশাপাশি বৈষম্য দূর করতে হবে। তার মতে, শিক্ষকরা যদি অর্থের জন্য অন্য কোথাও যান তাহলে শিক্ষা চলবে কী করে? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছরের শেষ সময়ে এখন বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষাসহ ভর্তির মৌসুম শুরু হবে। বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক বিতরণের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। এই অবস্থায় বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকরা আন্দোলনে নামায় এসব কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই আন্দোলন নিয়ে সরকারের মধ্যেও অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। প্রবীণ শিক্ষকনেতা অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেছেন, আন্দোলন শুরু করার আগে কেন শিক্ষকদের সঙ্গে বসে এগুলো ঠিক করা হয়নি? তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, শিক্ষামন্ত্রী চৌকস, তবু কেন শিক্ষক আন্দোলনের সমাধান হয়নি? তার মতে, শিক্ষকরা বছরের পর বছর ধরে বিনা বেতনে দায়িত্ব পালন করছেন, যখন তারা দায়িত্ব পালন শুরু করেন তখনই তো বলে দেয়া যেত, তোমরা অন্যত্র অন্নের সংস্থান করো। তিনি বলেন, এখন যেসব শিক্ষক আন্দোলন করছেন তারা কিন্তু সরকারবিরোধী না। তারা তাদের যৌক্তিক দাবি নিয়েই আন্দোলন করছেন। এটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বুঝতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App