×

মুক্তচিন্তা

ভোলার ঘটনা ধর্মান্ধদের মদদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:৪১ পিএম

ফেসবুকে একটি বিভ্রান্তিকর পোস্টের সূত্র ধরে গত রবিবার (২০ অক্টোবর) ভোলার বোরহানউদ্দিনে ঘটে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক যুবকের বিচারের দাবিতে ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ থেকে পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসীর ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ভোলা ইস্যুতে আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ধৈর্যধারণ ও গুজবে কান না দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একটি মিথ্যা অপপ্রচার বা গুজব কত সহজেই যে জনগণের কোনো কোনো অংশকে উত্তেজিত করে ভয়ঙ্কর কাণ্ড তথা লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে পারে তার অসংখ্য দৃষ্টান্ত আমাদের দেশেই রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজার জেলার রামুতে হামলা চালিয়ে লুটপাটসহ ১২টি বৌদ্ধমন্দির ও ৩০টি বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে রসরাজ নামে এক মৎস্যজীবীর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনে লোকজনকে ক্ষেপিয়ে তুলে ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলা চালানো হয়। আমরা প্রায়ই দেখতে পাই এসব ধর্মীয় উগ্রবাদী ও স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা অপপ্রচার এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে থাকে। বিশেষ করে দেশে যখন কোনো ক্রান্তিকাল উপস্থিত হয় আবার যখন কোনো ইস্যু থাকে না তখন ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের লক্ষ্যে এরা কখনো ধর্ম অবমাননাসহ নানা ইস্যু সামনে এনে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। আসলে খতমে নবুয়ত বলুন আর তৌহিদী জনতা আর ইমান রক্ষা কমিটি বা তাহফুজে খতমে নবুয়ত, যে নামেই তারা মাঠে নামে, এরা মূলত জামায়াতে ইসলামীরই ভিন্নরূপ। এরা একেক সময় একেক নাম দিয়ে মাঠে নামে আর রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে। পাকিস্তানে যেমন ধর্মকে ব্যবহার করে দেশটাকে বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছে ঠিক একইভাবে এ দেশকেও চাচ্ছে উগ্র ধর্মান্ধদের কেন্দ্রে পরিণত করতে। এর আগে আমরা দেখেছি ধর্ম অবমাননার কথা বলে বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। ধর্মের নামে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ কখনো ইসলাম সমর্থন করে না। আজ যারা বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের নামে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করছে এবং বড় ধরনের নাশকতার চিন্তাভাবনা করছে তাদের বলতে চাই, মহানবী (সা.)-এর মর্যাদা কি জ্বালাও-পোড়াও করে অর্জিত হবে, নাকি তাঁর উত্তম আদর্শ স্থাপন করার মাধ্যমে অর্জিত হবে? ইসলাম ধর্মের মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব হলো, এটা প্রত্যেক মানুষকে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করে। এই স্বাধীনতা কেবল ধর্ম-বিশ্বাস লালন-পালন করার স্বাধীনতা নয় বরং ধর্ম না করার বা ধর্ম বর্জন করার স্বাধীনতাও এই ধর্মীয় স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তুমি বল, তোমার প্রতিপালক-প্রভুর পক্ষ থেকে পূর্ণ সত্য সমাগত, অতএব যার ইচ্ছা সে ইমান আনুক আর যার ইচ্ছা সে অস্বীকার করুক’ (সুরা কাহাফ : ২৮)। সত্য ও সুন্দর নিজ সত্তায় এত আকর্ষণীয় হয়ে থাকে যার কারণে মানুষ নিজে নিজেই এর দিকে আকৃষ্ট হয়। বলপ্রয়োগ বা রাষ্ট্রশক্তি নিয়োগ করে সত্যকে সত্য আর সুন্দরকে সুন্দর ঘোষণা করানো অজ্ঞতার পরিচায়ক। যেমন সূর্যোদয়ই সূর্যের অস্তিত্বের প্রমাণ। এই নিয়ে গায়ের জোর খাটানোর বা বিতণ্ডার অবকাশ নেই। ঠিক তেমনি কে আল্লাহকে মানল বা মানল না, কে ধর্ম করল বা করল না এটা নিয়ে এ জগতে বিচার বসানোর কোনো শিক্ষা ইসলাম ধর্মে নেই। ভোলার নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে মূলত উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর মদদ রয়েছে। কেননা তাদের দাবি আর খতমে নবুয়ত, হেফাজতে ইসলাম এবং তৌহিদী জনতার দাবি একই, শুধু ভিন্ন নামে মাঠে নেমেছে। দেশকে শান্তিময় এবং নিরাপদ রাখতে হলে এসব ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর বিষয়ে সরকারকে যেমন আরো কঠোর হতে হবে তেমনি সমগ্র দেশবাসীকেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

আবু আফিয়া আহমদ : সাংবাদিক ও লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App