×

জাতীয়

নেতৃত্বে শাসনতন্ত্র আন্দোলন নেপথ্যে জামায়াত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:০৮ এএম

নেতৃত্বে শাসনতন্ত্র আন্দোলন নেপথ্যে জামায়াত
নেতৃত্বে শাসনতন্ত্র আন্দোলন নেপথ্যে জামায়াত
তৌহিদী জনতার ব্যানারে ভোলার বোরহানউদ্দিনে সংঘর্ষ ও অরাজকতার নেতৃত্ব দিচ্ছে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন। নেপথ্যে তাদের সঙ্গে রয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি মৌলবাদী রাজনৈতিক দল। তারা সাধারণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার (২০ অক্টোবর) বোরহানউদ্দিনে স্থানীয় ‘তৌহিদী জনতার’ সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একাধিক গোয়েন্দা সূত্র ও স্থানীয়রা এ তথ্য জানিয়েছে। এদিকে যে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা মোকাবেলায় ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিনকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে। ৪ প্লাটুন বিজিবি, ১ প্লাটুন কোস্টগার্ড, বিপুল সংখ্যক র‌্যাব এবং পুলিশ শহরজুড়ে টহল দিচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছাড়াও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। আলেম সমাজ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছে স্থানীয় প্রশাসন। গত রবিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় সরকারি কর্মকর্তাদের কাজে বাধাদান, অতর্কিত হামলা চালিয়ে পুলিশ সদস্যদের আহত করা এবং দাঙ্গা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অভিযোগে বোরহানউদ্দিন থানার এসআই আজিজুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৫ হাজার জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর-১৮। মামলার পর স্থানীয়রা গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন। তবে নিরীহ ও নিরপরাধ কাউকে হয়রানি না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রাসুলুল্লাহ হজরত মুহাম্মদকে (স.) কটাক্ষ করে এক পোস্টের জেরে বোরহানউদ্দিনে পুলিশ ও স্থানীয় তৌহিদী জনতার সংঘর্ষে ৪ জন নিহত ও পুলিশসহ দুই শতাধিক লোক আহত হয়। নিহত ৪ জনের মধ্যে ৩ জনের লাশ রবিবার রাতেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি সাপেক্ষে বিনা ময়নাতদন্তে নিয়ে দাফন করে। আরেকজনের লাশ সোমবার (২১ অক্টোবর) সকালে নিয়ে পারিবারিকভাবে দাফন করা হয়। বোরহানউদ্দিনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা লালমোহনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান রুমি জানান, বর্তমানে বোরহানউদ্দিনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যাপক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় বোরহানউদ্দিন পৌর শহরে সব ধরনের সভা-সমাবেশ না করার মৌখিক অনুরোধ জানানো হয়েছে। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন গঠিত ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি সোমবার জেলা সদরে সভা করেছে। ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, তদন্ত কমিটি হোমওয়ার্ক করছে। কমিটিকে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সরেজমিন তদন্ত করে বুধবারের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এদিকে বোরহানউদ্দিনের ঘটনায় পুলিশ সদর বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজিকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও সোমবার দুপুর পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোনো আদেশ পাননি বলে জানিয়েছেন বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, পত্রিকায় আমিও কমিটির খবর দেখেছি। ওই আদেশের কপি হাতে পাওয়ার পর তদন্ত কার্যক্রম শুরু করব। অন্যদিকে বোরহানউদ্দিনের ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সকাল ১১টায় ভোলা সরকারি স্কুল মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছিল সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদ। পরে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জননেতা তোফায়েল আহমেদের মধ্যস্থতায় প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে তারা ভোলা প্রেসক্লাবে বেলা সাড়ে ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করে। রবিবারের সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় প্রশাসনকে দায়ী করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হযরত মোহাম্মদ (স.), আল্লাহ তায়ালা ও ইসলাম নিয়ে কটূক্তিকারীর বিরুদ্ধে দেশে কঠিন শাস্তির আইন থাকলে এ বিষয়ে কোনো আন্দোলন হতো না, কাউকে জীবন দিতে হতো না। ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন ভোলার সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মো. মিজানুর রহমান। দাবিগুলো হলো- ভোলার পুলিশ সুপার ও বোরহানউদ্দিন থানার ওসিকে প্রত্যাহার, নিহত ৪ জনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, গুলির হুকুমদাতা ও গুলিবর্ষণকারীদের আইনের আওতায় আনা, আহতদের সরকারি খরচে চিকিৎসা প্রদান, ফেসবুকে পোস্ট দেয়া বিপ্লব চন্দ্র শুভর ফাঁসি, ইসলাম ধর্মকে কটাক্ষকারীদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ করা, গ্রেপ্তারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি ও হয়রানিমূলক মামলায় কাউকে আটক না করা। ৬ দফা দাবির আলোকে দোষীদের বিচারের আহ্বান জানিয়ে সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মাওলানা বশিরউদ্দিন বলেন, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দাবি পূরণে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ঘোষণা না এলে বৃহত্তর কঠিন কর্মসূচি দেয়া হবে। দাবি আদায়ের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) ভোলার প্রত্যেক উপজেলায় বিকেল ৪টায় বিক্ষোভ মিছিল, বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১১টায় জেলা শহরে মানববন্ধন ও শুক্রবার নিহতদের স্মরণে ভোলা হাটখোলা জামে মসজিদের সামনে বিকেল ৪টায় দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠানের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ভোলা-২ আসনের সাংসদ আলহাজ আলী আজম মুকুল বলেন, সংঘর্ষের খবর শুনে তাৎক্ষণিক এলাকায় এসে প্রশাসনের পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে সহযোগিতা করি। রবিবার রাতেই আলেম সমাজকে নিয়ে বোরহানউদ্দিন থানায় বসেছি। তাদের আশ্বস্ত করেছি, নিরীহ কেউ হয়রানির শিকার হবে না। ফেসবুকে কটূক্তিকারীদের বিচার হবে। এ ঘটনায় কেউ যাতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে সে দিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App