×

জাতীয়

নামেই ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০১৯, ১২:১১ পিএম

নামেই ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

ডাক্তার ও ওষুধ সংকটে চিকিৎসাসেবার বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে রাজশাহী দুর্গাপুর উপজেলা একমাত্র ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। উপজেলায় প্রায় দুই লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হলেও উন্নত হয়নি চিকিৎসাসেবার মান। দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও এ পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসেবার মান চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন ঘটেনি। ফলে দুর্গাপুর উপজেলার হাজার হাজার রোগী স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ছাড়া সিরিয়াস রোগী হলেই পাঠিয়ে দেয়া হয় জেলা শহরে।

উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির পুরনো ভবনের পাশে ২০০৩ সালে দোতলা নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। এরপর ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও স্বাস্থ্যসেবার তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি এখানে। কমপ্লেক্সটিতে ২৮ জন চিকিৎসক কর্মরত থেকে সেবা দেয়ার কথা থাকলেও সেবা দিচ্ছেন মাত্র চারজন, ২০ জন নার্সের স্থানে রয়েছে ১৮ জন, বাকি পদ রয়েছে শূন্য। চারজন ওয়ার্ডবয়ের স্থলে আছেন দুজন। এ ছাড়া দুটি আয়ার পদও রয়েছে শূন্য। গত দুই সপ্তাহ আগে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দেওয়ান নাজমুল আলম অবসরে গেলে সেই পদটিও শূন্য হয়ে পড়ে। জনবল সংকটের কারণে বহির্বিভাগে শত শত রোগীর চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের।

ডাক্তারদের শূন্য স্থান পূরণ করতে পারলেই উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগীদের দুঃখ লাঘব করা সম্ভব বলে মনে করেন রোগীরা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার ধরমপুর গ্রামের আফসার আলী বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক না থাকায় সেবা পেতে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পরে চিকিৎসা নিতে পেরেছেন বলে তিনি জানান।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে দুটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও একটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে কয়েক বছর ধরে। ফলে অনেক রোগী জেলা হাসপাতালে যাওয়ার ভরসা হয়ে দাঁড়ায় ভাড়ায় চালিত মাইক্রো। এতে করে বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়িত।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে নেই কোনো জেনারেটরের ব্যবস্থা। বিদ্যুৎ চলে গেলে রোগীদের থাকতে হয় অন্ধকারে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে আসা রিপ্রেজেন্টেটিভদের ভিড়ে ডাক্তারদের সঙ্গে সময় মতো কথা বলতে পারছেন না রোগীরা। এমনকি রোগীদের বসে থাকার আসনটিও দখল করে রাখেন তারা।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিরত কয়েকজন রোগী অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর চালু করার নিয়ম থাকলেও রোগীদের কাছে সেটা স্বপ্নই থেকে যায়। পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে। বিদ্যুৎ চলে গেলে হাসপাতালজুড়ে ভুতুড়ে অবস্থার সৃষ্টি হয়। উপজেলার সাফলগাছি গ্রাম থেকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা ফাইমা বেগম জানান, এ পর্যন্ত হিস্টাসিন আর নাপা ছাড়া কোনো ওষুধ জুটল না কপালে। সরকার নাকি সব রোগের দামি দামি ওষুধ দেয়। তাহলে ওষুধ কোথায় যায়?

এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত অফিসার (আরএমও) ডা. আসফাক হোসেন সুইট বলেন, ডাক্তার স্বল্পতার কারণে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪শ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। প্রয়োজন মতো চিকিৎসা পেতে হাসপাতলটিতে শূন্য স্থান পূরণ করা জরুরি। তিনি আরো বলেন, চাহিদা অনুযায়ী আবেদন করা হয়েছে। তবে আশা করছি আগামী দুই মাসের মধ্যে কিছু শূন্যপদ পূরণ হবে। ওষুধ যেটা পাওয়া যায় তা রোগ নির্ণয়ের পরে রোগীদের মাঝেই বিতরণ করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App