×

অপরাধ

কাউন্সিলর হয়েই স্বরূপে আবির্ভূত রাজীব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:৩১ এএম

যুবলীগের যে প্রভাবশালী নেতাকে এক কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদটি বাগিয়ে নিয়েছিলেন গ্রেপ্তারকৃত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব। গ্রেপ্তারের পর দল থেকে বহিষ্কার করা প্রভাবশালী এই নেতাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এতদিন পর রাজীবের অত্যাচারের শিকার হওয়া স্থানীয় বাসিন্দারাও মুখ খুলতে শুরু করেছেন। এদিকে র‌্যাব গত দুই দিনে রাজীবের প্রধান সহযোগীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালালেও তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে রাজীবকে অস্ত্র ও মাদকের দুই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৪ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদ রোডের বাসিন্দা আমানত আলী জানান, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র দীর্ঘদিন ধরে মোহাম্মদপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতো। ওই চক্রের নেতা তখন কারাগারে ছিল। ওই চক্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল রাজীব। ওই চক্রের কেউ কোনো নির্মাণাধীন ভবনে চাঁদা দাবি করলে রাজীব গিয়ে তাদের বাধা দিত। এ কারণে রাজীব সাধারণ মানুষের কাছে আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানকের কাছেও পৌঁছে যায়। পরবর্তী সময়ে যুবলীগের নেতা ও আরো পরে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। কিন্তু কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমূল বদলে যায় রাজীবের। ক্ষমতাসীন দল, প্রশাসন ও নিজের পদের প্রভাব খাটিয়ে একচেটিয়া দখল ও চাঁদাবাজির রাজত্ব কায়েম করে। একের পর এক জমি দখল করে নেয়। মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড, টেম্পুস্ট্যান্ড, কাঁচাবাজারসহ অর্থের উৎস আছে এমন সব স্থানে নিজের ঘনিষ্ঠ লোকজনকে দায়িত্ব দেয়। আদাবর এলাকার বাসিন্দা মাহমুদ হাসান জানান, রাজীব কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা বাবদ কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ঢাকা উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যানসহ বেড়িবাঁধ সংলগ্ন সব হাউজিং কোম্পানির কাছ থেকেও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। কাদেরাবাদ হাউজিং এলাকার অপর এক বাসিন্দা জানান, রাজীব ফুটপাত, কাঁচাবাজার, মাছ ও তরকারির আড়ত থেকেও বেপরোয়াভাবে চাঁদাবাজি করেছে। এদিকে র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, রাজীবকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীর নাম জানা গেছে। এলাকায় রাজীবের হয়ে তারাই সবকিছু নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ করতো। এদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে, তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এর আগে রোববার (২০ অক্টোবর) রাতে র‌্যাব রাজধানীর ভাটারা থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে রাজীবের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে। রাজীবকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ তাকে ওই রাতেই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম ইয়াসমিন আরা বেগমের আদালতে হাজির করে এবং ২ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এ সময় আদালতে বলেন, আসামির কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। আসামির সহযোগীদের গ্রেপ্তার এবং মাদকের উৎস সম্পর্কে জানার জন্য তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য তাকে জরুরিভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড প্রয়োজন। এ সময় আসামি পক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব একজন জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি। এ কারণে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়েই তার বিরুদ্ধে এই মামলা দেয়া হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে চাপ প্রয়োগ করা হতে পারে। এ অবস্থায় রিমান্ড মঞ্জুর করা সঠিক হবে না। আদালত উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে কাউন্সিলর রাজীবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিন করে মোট ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App