×

জাতীয়

বাবার ওপর প্রতিশোধ নিতে মেয়েকে পাশবিক নির্যাতন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০১৯, ১১:৪৩ এএম

বাবার ওপর প্রতিশোধ নিতে মেয়েকে পাশবিক নির্যাতন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বাবার ওপর প্রতিশোধ নিতে মেয়েকে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। এদিকে বরগুনার পাথরঘাটায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষিত এক স্কুলছাত্রী অবশেষে সন্তান প্রসব করেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বাবার ওপর প্রতিশোধ নিতে মেয়েকে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে উপজেলার ছোট কুড়িপাইকা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার শিশুটি অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। রাতে ছাত্রীটিকে চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত বিল্লাল মিয়া (৩৫) ও মোশারফ মোল্লা (৩৬) নামে দুই যুবককে পুলিশ রাতেই আটক করেছে। আটক বিল্লাল উপজেলার আনোয়ারপুর গ্রামের শেখ আলী আশরাফের ছেলে ও মোশারফ একই গ্রামের সাদেক মিয়ার ছেলে। পুলিশ জানায়, ছাত্রীটিকে ঘরে একা রেখে তার মা ও বাবা চিকিৎসার জন্য বিকেলে শহরে যান। এ সুযোগে বিল্লাল ও মোশারফসহ আরো ২-৩ যুবক ঘরে ঢুকে শিশুটির মুখে কাপড় গুঁজে দেয়। পরে তারা হাত ও পায়ের চামড়া ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা-ছেঁড়া করে। পাশবিক নির্যাতনে শিশুটি অজ্ঞান হয়ে পড়লে তারা চলে যায়। সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যরা তাকে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ছাত্রীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। মেয়ের বাবা জানান, কিছু দিন আগে আনোয়ারপুরের মাদক ব্যবসায়ী কাজলের সঙ্গে তার দেনা-পাওনার বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়। এ সময় সে দেখে নেবে বলে হুমকিও দিয়েছিল। কয়েক দিন আগেও তারা তার মেয়েকে নির্যাতনের চেষ্টা করে। মাদক ব্যবসায়ী কাজলের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। কিছু দিন আগে সে স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির হলে বিচারক তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। কাজলের বাহিনীই তার মেয়ের ওপর পাশবিক নির্যাতন করেছে বলে তিনি মনে করেন। থানার পরিদর্শক (ওসি, তদন্ত) আরীফুল আমীন জানান, পূর্বশত্রু তার জের ধরে ছাত্রীটিকে নির্যাতন করা হয়। রাতেই পুলিশ দুজনকে আটক করেছে। বাকিদের ধরতে পুলিশ মাঠে কাজ করছে। আখাউড়া থানার ওসি রসুল আহমদ নিজামী বলেন, অপরাধী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। বিশেষ অভিযান চালিয়ে খুব তাড়াতাড়িই বাকি অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হবে। পাথরঘাটা (বরগুনা) : বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বরগুনার পাথরঘাটায় মাসের পর মাস স্কুলছাত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে একই এলাকার কলেজ পড়–য়া রাজু আহমেদ (২০)। একসময় অন্তঃসত্ত্বা হয় ওই স্কুলছাত্রীটি। শুরু হয় সম্পর্কের ভাঙন। ধর্ষক চলে যায় নিজ ক্যাম্পাস বরিশাল অমৃত লাল দে কলেজে। একপর্যায়ে ওই স্কুল শিক্ষার্থীর শারীরিক পরিবর্তন হলে পরিবারের চাপে সে অন্তঃসত্ত্বার খবর তার বোনকে জানায়। অভিযুক্ত ছাত্র রাজু আহমেদ বরিশাল অমৃত লাল দে কলেজ থেকে সদ্য এইচএসসি পাস করেছে এবং সে বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল জলিলের ছেলে। ধর্ষিতা স্থানীয় কাঁঠালতলী স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী ও দিনমজুরের মেয়ে। ধর্ষিতা গত রবিবার রাত ৮টার দিকে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করে। এর আগে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভীনকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি ভুক্তভোগী ছাত্রীকে নিয়ে পাথরঘাটা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পাথরঘাটা থানা পুলিশ অভিযুক্ত রাজুর বাবা আব্দুল জলিলকে আটক করে কারাগারে পাঠালেও রাজুকে আটক করতে পারেনি। ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর সন্তান প্রসবের খবর পেয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুব্রত মল্লিক, এডিশনাল এসপি আশরাফ উল্লাহ তাহের ও পাথরঘাটা থানার ওসি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন নবজাতকের জন্য নতুন পোশাক নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে মা ও সন্তানের খোঁজখবর নেন। এ সময় তারা নবজাতকের নাম রাখেন সংগ্রাম। এ সময় এডিশনাল এসপি আশরাফ উল্লাহ তাহের বলেন, নিষ্পাপ শিশুটি যাতে তার পিতৃপরিচয় পায় সে লক্ষ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করে দেখা হবে বলেও জানান তিনি। ভুক্তভোগী ছাত্রী সাংবাদিকদের জানায়, স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে রাজু আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিত। একপর্যায়ে আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার দৈহিক মিলন ঘটায়। স্কুলছাত্রীর বড় বোন বলেন, তার বোনের শারীরিক পরিবর্তন দেখে সন্দেহ হলে জানতে পারি সে ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তখন তার কাছ থেকে জানতে পারি একই গ্রামের রাজুর সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্কের কথাও। এরপর রাজুকে ফোন দিলে সে শারীরিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করে বলে ভুলে হয়ে গেছে আপা, বাচ্চা নষ্ট করে দেন সব খরচ আমি দেব। তিনি আরো জানান, এ নিয়ে প্রথমে এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দিলে অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় বাচ্চা নষ্ট করে দিয়ে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করার আশ্বাস দেন। এতে আমরা রাজি না হয়ে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভীনের কাছে জানালে তিনি আমাদের আইনি সহায়তা পেতে থানায় নিয়ে যান। ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভীন বলেন, আমার কাছে সালিশ-মীমাংসার জন্য আসছিল, কিন্তু বিষয়টি ধর্ষণের তাই মামলা করতে সহায়তা করেছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App