×

জাতীয়

কাউন্সিলর রাজীবের টাকার পাহাড়!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০১৯, ১০:৪৪ এএম

কাউন্সিলর রাজীবের টাকার পাহাড়!
গ্রেপ্তারকৃত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবের ব্যাংক হিসাবে বড় ধরনের লেনদেনের আলামত পেয়েছে র‌্যাব। মাত্র কিছুদিন আগে ব্র্যাক ব্যাংকে ৫ কোটি টাকা জমা দেয়ার প্রমাণ মিলেছে। তবে তার কাছে বড় অংকের নগদ অর্থ পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে রাজীব নগদ অর্থ সরিয়ে ফেলেছে। রাজীবের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাকে মারধর, নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে জমি দখল, মার্কেট ও বাসস্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণসহ নানান অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। যুবলীগের এক প্রভাবশালী নেতাকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে রাজীব মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদটি বাগিয়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এদিকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল রাজীবকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে অস্ত্র এবং মাদক আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাজীবের বিচারের দাবিতে মোহাম্মদপুর এলাকায় স্থানীয় জনগণ বিক্ষোভ মিছিল করেছে। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর তার বাসা ও অফিসে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় নগদ ৩৩ হাজার টাকা, বিদেশি মদ ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ধারণা করছি তার বাড়িতে আর্থিক লেনদেনসংক্রান্ত সব ডকুমেন্ট তিনি আগেই সরিয়ে ফেলেছেন। আমরা তার এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীর আত্মীয় বাড়ি থেকে একটি চেকবই উদ্ধার করেছি। ব্র্যাক ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে একদিনে তিনটি চেকের মাধ্যমে ৫ কোটি টাকা জমা দেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই টাকা কোথা থেকে এসেছে এ ব্যাপারে রাজীব কোনো উৎস জানাতে পারেনি। তার টাকার উৎস এবং কোথাও অর্থ পাচার করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। যদি অর্থ পাচারের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মামলা হবে। কিন্তু আপাতত অবৈধ অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথকভাবে দুটি মামলা করা হবে। জানা গেছে, সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানকের হাত ধরে রাজীবের রাজনীতিতে হাতেখড়ি। এর আগে তার কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখা যায়নি। এরপর অল্পসময়ের মধ্যেই সে মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পদটি বাগিয়ে নেয়। এরপর আর থেমে থাকেনি। যুবলীগের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে এলাকায় ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, ডিশ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর কেন্দ্রীয় যুবলীগের এক নেতাকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা উপঢৌকন দিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পর রাজীবের ক্যাডাররা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা পাইন আহমেদকে মারধরের মাধ্যমে পেশিশক্তির প্রদর্শন শুরু করে। ২০১৫ সালে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার আগে রাজীবের দৃশ্যমান কোনো ধরনের ব্যবসা বা পেশা ছিল না। বর্তমানে সিটি করপোরেশন থেকে পাওয়া সম্মানীই প্রধান আয়। তারপরেও অল্পসময়ের মধ্যেই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। বর্তমানে যে বাড়িতে থাকেন তার মূল্য কম করেও হলেও ১০ কোটি টাকা। ব্যাংকেও কোটি কোটি টাকা জমা আছে। গত চার বছরে ১০টি দামি গাড়ি কিনেছেন। গুলশান ও মোহাম্মদপুরে ৮টি ফ্ল্যাটের মাািলক। মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ১ নন্বর রোডে পানির পাম্পের জন্য নির্ধারিত জমি দখল করে সেখানে বাড়ি বানিয়েছেন। রাজকীয় এই বাড়ির ফিটিংস, আসবাবপত্র থেকে শুরু করে শোপিস সবই বিদেশি। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ২০১৩ সালে মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির একটি বাড়ির নিচতলার গ্যারেজের পাশেই ৬ হাজার টাকার এক বেডরুমের ফ্ল্যাটে রাজিব বসবাস করত। অল্পসময়ের ব্যবধানেই রাজীব এখন শত কোটি টাকার মালিক। মোহাম্মদপুর, বেড়িবাঁধ, বসিলা এলাকার পরিবহনে চাঁদাবাজি তার নিয়ন্ত্রণে। অটোরিকশা, লেগুনা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও বাস থেকে প্রতিদিন প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা চাঁদা পায়। গত ৫ বছর ধরে স্থানীয় কুরবানির পশুর হাটের ইজারা তার নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। স্থানীয় যুবলীগ নেতা শাহ আলম জীবন, সিএনজি কামাল, আশিকুজ্জামান রনি, ফারুক ও রাজীবের স্ত্রীর বড় ভাই ইমতিহান হোসেন ইমতি ছিল রাজীবের সব অপকর্মের সঙ্গী। মোহাম্মদপুরে রাজীবের ডুপ্লেক্স বাড়িটি দখলকৃত। বারি চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি আগে এ জমির মালিক ছিলেন। পানির পাম্প বসানোর কথা বলে জমিটি সে নিজের নামে করিয়ে নেয়। রহিম ব্যাপারি ঘাট মসজিদের কাছে আব্দুল হকের ৩৫ কাঠার একটি প্লট যুবলীগের কার্যালয়ের নামে দখলে নেয়। এর পাশেই জাকির হোসেনের একটি প্লট দখল করে। মোহাম্মদুপর বাসস্ট্যান্ডের পাশের ময়ূর ভিলার মালিক রফিক মিয়ার জমিও দখল করে। পাবলিক টয়লেট নির্মাণের জায়গায় পাঁচটি দোকান তুলে ভাড়া দিয়েছে। আল্লাহ করিম মসজিদ ও মার্কেটের নিয়ন্ত্রণও এখন রাজীবের হাতে। স্ত্রীর বড় ভাই ইকরাম হোসেনকে মসজিদ ও মার্কেট পরিচালনা কমিটির সভাপতি করে ৩৯টি দোকান বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টাও করে। র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম জানান, রাজীবের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, চাঁদাবাজি এবং দখলদারিত্বের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ার পরেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App