×

জাতীয়

শরীয়তপুরের জাজিরায় মা ইলিশ নিধনের মহোৎসব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০১৯, ১২:১৬ পিএম

শরীয়তপুরের জাজিরায় মা ইলিশ নিধনের মহোৎসব
শরীয়তপুরের জাজিরায় মা ইলিশ নিধনের মহোৎসব
শরীয়তপুরের জাজিরায় মা ইলিশ নিধনের মহোৎসব
শরীয়তপুরে জাজিরার পদ্মানদীতে অবাধে চলছে মা ইলিশ নিধন। প্রতিদিনই জেলেরা জাল ফেলছে নদীতে। নদীর পাড়ের চর সমুহে ইলিশ বিকিকিনির অস্থায়ী বাজার বসছে। এসব বাজারে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মোটসাইকেল, ভ্যান নিয়ে কমদামে ইলিশ কিনতে ভির জমাচ্ছে ক্রেতারা। মা ইলিশ নিধন ও বিক্রি যেন এখন মেলায় পরিনত হয়েছে পদ্মার পারে। ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের মা ইলিশ রক্ষা কর্মসুচি। জাজিরা উপজেলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যলয় সূত্র জানায়, প্রজনন মৌসুম হিসেবে ৯ অক্টোবর থেকে ৩০শে অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ শিকার, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এই সময়ে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে সরকারি খাদ্য সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে জেলেদের। তারপরেও থেমে নেই মা ইলিশ নিধন। জাজিরা উপজেলার নাওডোবা থেকে কান্ডেচরের সফি কাজির মোড় পর্যন্ত পদ্মা নদীতে দিন রাত মাছ শিকার করছে জেলেরা। শত শত নৌকা ও ট্রলার দিয়ে নদীতে মাছ শিকার যেন এখন উৎসবে পরিনত হয়েছে। এসব এলাকার পদ্মারপাড়ে মাছ বিক্রির অস্থায়ী বাজার বসছে। জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মোটসাইকেল, ভ্যান নিয়ে কমদামে ইলিশ কিনতে ভির জমাচ্ছে ক্রেতারা। প্রশাসনের নজর এড়াতে অভিনব কায়দায় (ট্রাভেল ব্যাগ) ব্যাবহারের কাপর চোপড় আনা নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত ব্যাগে করে ইলিশ মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছে ক্রেতারা। মাত্র এক হাজার টাকায় মিলছে এক কেজি সাইজের এক হালি (চারটা) ইলিশ। যা কয়েক দিন পরেই বাজারে বিক্রি হবে তিন থেকে চার হাজার টাকায়। সরেজমিনে ঘুড়ে দেখা যায়, নাওডোবা থেকে সফি কাজির মোড় পর্যন্ত অন্তত ৫০ স্পর্টে শত শত মানুষ মাছ কেনার জন্য ভিড় জমিয়েছে। নদী থেকে জেলেরা মাছ নিয়ে এসে ৫ মিনিটেই বিক্রি করে দিচ্ছে। আবারো চলে যাচ্ছে নদীতে। এভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা আর সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত। জেলে আর ক্রেতা কেউ যেন থামছে না। সবাই মিলে এ যেন মা ইলিশ নিধনের এক মাহোৎসব। দুর্গারহাট গ্রামের গৃহবধু রহিমা জানান, আমাদের এ নদীতে সবসময় ইলিশ মাছ পাওয়া যায় না। অভিযানের সময় আমরা ইলিশ মাছ পাই। আমার স্বামী দেবর দুই দিন যাবত মাছ ধরছে। বাসায় খেতে যাওয়ার সময়ও পায়না। কয়েক বার নদীর পাড়ে এসেছি তাদের খুজতে, তাও পাই নাই। মাছের আনন্দে নাওয়া খাওয়া ভুলে গেছে তারা। দূর্গারহাট পদ্মার পাড়ে কথা হয় জাজিরা থেকে আশা দুই গৃহবধু আছিয়া ও করিমন এর সাথে। তারা জানায়, বাসায় কোন পুরুষ ছেলে নেই। মাছ সস্তা হয়েছে। শুনে নিজেই মাছ কিনতে এসেছেন। কাজিয়ারচর গ্রামের ছাত্তার মাদবর বলেন, প্রশাসনের লোকজনের চোখের আড়ালে থেকে মাছ শিকার করতে হয়। পুলিশ প্রশানের লোকজন আসতে দেখলে অনেক সময় জাল ছেড়ে দিয়ে জেলেরা চলে আসে। আমার একটি নৌকা রয়েছে। ভরা মৌশুমে মাছ ধরতে না পারলে সারা বছরের লোকসান পোশাতে পারবোনা। তাই ঝুকি নিয়ে মাছ শিকার করছি। পুলিশ আসলে সব লোকজন মাছ ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যায়। জাজিরা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা উজ্জল কুমার রায় জানায়, প্রতিদিন আমরা অভিযান করছি। জেল জরিমানা দিচ্ছি। অধিকাংশ জেলেদের অন্য জেলা থেকে ভাড়ায় নিয়ে এসেছে কিছু অসাধু প্রভাবশালীরা। এসব জেলেরা স্থানীয় না হওয়ায় প্রশাসনের উপরও চড়াও হচ্ছে। কোন কিছু ভয় করছে না তারা। এছাড়া আমাদের জনবল এবং বরাদ্দ অপ্রতুল। এতবড় নদী পাহাড়া দিতে সরকারকে আরো জনবল ও বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমরা উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, আমরা সধ্যমত চেষ্টা করছি। আমাদের এ অভিযানের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ঠিক রাখতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় জনবল আমাদের নেই। সীমিত জনবল দিয়ে সর্বচ্চো সেবা দিতে চেষ্টা করছি। জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: জাহিদুল ইসলাম বলেন, মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল করতে প্রতিদিন নদীতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গত ১০ দিনে ২শ ১০ জন জেলেকে মা ইলিশ শিকারে দায়ে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ সময় ২০ হাজার টাকার জরিমানা আদায় সহ প্রায় ৫ লক্ষ মিটার কারেন্ট জাল উদ্ধার করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App