×

জাতীয়

পরীক্ষা কেলেঙ্কারিতে ফাঁসলেন সাংসদ বুবলী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০১৯, ১০:২৫ এএম

পরীক্ষা কেলেঙ্কারিতে ফাঁসলেন সাংসদ বুবলী
পরীক্ষা কেলেঙ্কারিতে ফাঁসলেন সাংসদ বুবলী
উচ্চ মাধ্যমিক পাস নরসিংদীর মহিলা এমপি তামান্না নুসরাত বুবলীর শখ জেগেছিল বিএ পাস করার। এ জন্য উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু পরীক্ষাটা আর নিজে দিতে যাননি। সব নীতিনৈতিকতা ভুলে তিনি ভাড়াটে পরীক্ষার্থী নিয়োগ করেন। এ পর্যন্ত তার হয়ে আটজন ভাড়াটে ছাত্রী পরীক্ষাও দিয়েছেন। বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর গতকাল কোনো গণমাধ্যমেই বক্তব্য দিতে রাজি হননি মহিলা এমপি বুবলী। তা ছাড়া দিনভর বাড়ি থেকেও বের হননি তিনি। প্রসঙ্গত, বুবলী সন্ত্রাসী হামলায় নিহত নরসিংদীর সাবেক পৌর মেয়র লোকমান হোসেনের স্ত্রী। অন্যান্য দিনের মতো শুক্রবারও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ছিল। যথারীতি ভাড়াটে পরীক্ষার্থীও হলে বসে পরীক্ষা দিতে শুরু করেন। কিন্তু গণমাধ্যমের তৎপরতায় ধরা খেয়ে যান। এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি পাঠায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আজ রবিবার বেলা ১১টায় জরুরি বৈঠক ডেকেছে। সূত্র জানিয়েছে, নিজের পরীক্ষা আরেকজনকে দিয়ে দেয়ানোর অভিযোগে মহিলা এমপি বুবলীকে বহিষ্কার করতে পারে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। তবে তার এমপি পদ থাকবে কিনা তা জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্ধারণ করবেন। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি তামান্না নুসরাত বুবলী ঢাকায় থাকলেও তার হয়ে নরসিংদীতে বিএ পরীক্ষা দিতেন ভাড়াটে ছাত্রীরা। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ কোর্সে চারটি সেমিস্টারের তেরোটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও তিনি একটিতেও অংশ নেননি। কিন্তু তারপক্ষে এখন পর্যন্ত ৮ জন নারী পরীক্ষা দিয়েছেন। সবাই সবকিছু জানলেও এমপির ভয়ে কেউ কিছু বলেনি। শুক্রবার পরীক্ষার হলে সংসদ সদস্যের রোল নাম্বারের সিটে বসা পরীক্ষার্থীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি দাবি করেন, তার নাম তামান্না নুসরাত বুবলী। আপনার কি ন্যাশনাল আইডি কার্ড আছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আছে কিন্তু নিয়ে আসেননি। এ সময় প্রশ্ন করা হয়, তামান্না নুসরাত বুবলী একজন সংসদ সদস্য। তিনিই কি আপনি? তখন ওই পরীক্ষার্থী নিজেকে সংসদ সদস্য তামান্না নুসরাত বুবলী বলে দাবি করেন। এ সময় কক্ষ পরিদর্শক জানান, ওই পরীক্ষার্থী দাবি করেছেন তার আইডি কার্ড হারিয়ে গিয়েছে। সে জিডির কপি নিয়ে এসেছে। তাই তাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়া হচ্ছে। ধরা খেয়ে যাওয়ার এক পর্যায়ে প্রক্সি পরীক্ষা দিতে আসা ছাত্রীটি পরীক্ষার হল থেকে দ্রুত পালিয়ে যান। আর তাকে পালাতে সাহায্য করেন এমপি বুবলীর এপিএস ওমর ফারুক। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোটা প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে মূল ভূমিকা পালন করেছেন বুবলীর এপিএস ওমর ফারুক। তিনিই প্রভাব খাটিয়ে ভাড়াটে পরীক্ষার্থী জোগাড় করে এমপির হয়ে তাদের পরীক্ষার হলে পাঠাতেন। তা ছাড়া পরীক্ষার দিন কিছু সন্ত্রাসীকে নিয়ে কলেজ চত্বরে এসে বসে থাকতেন ওমর ফারুক। তাকে সহযোগিতা করতেন স্থানীয় চিনিশপুর ইউনিয়ন পরিষদের একজন সচিব। স্থানীয় লোকজন এসব ঘটনা জানলেও ভয়ে মুখ খুলতেন না। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল বহুবার এমপি বুবলী ও তার এপিএস ওমর ফারুকের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তারা ফোন ধরেননি। জানতে চাইলে পরীক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাবিবুর রহমান আকন্দ বলেন, পরীক্ষার্থী মহিলা এমপির এই জালিয়াতির ঘটনা তিনি জানতেনই না। শুক্রবার পৌনে ৩টার দিকে জানার পর তিনি ওই ভাড়াটে পরীক্ষার্থীসহ মহিলা এমপিকে বরখাস্তের সুপারিশ করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে নরসিংদী সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান প্রফেসর মোহাম্মদ উল্লাহ কাজলকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এই কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ মান্নান ভোরের কাগজকে বলেন, একজনের পরীক্ষা আরেকজন দিতে পারে না। এটি খুবই খারাপ ঘটনা। যিনি এই কাজ করেছেন, তিনি এমপি কিংবা যত ক্ষমতাধরই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে অবশ্যই কড়া ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ জন্য আজ রবিবার বেলা ১১টায় বৈঠক ডাকা হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ডিন, শৃঙ্খলা কমিটি ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে থাকতে বলা হয়েছে। কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ হতে দেবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App