×

জাতীয়

ক্যাসিনো মাফিয়ারা দুদকের জালে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০১৯, ১০:৫৩ এএম

আলোচিত ক্যাসিনো ব্যবসার আড়ালে জুয়া খেলা, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির মাধ্যমে যারা অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন, এমন অর্ধশতাধিক সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে মাঠে রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে খুব শিগগিরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তলবের মাধ্যমে তাদের সম্পদ বিবরণী চাইবে এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান টিম। একইভাবে তাদের পরিবারের সদস্যদেরও সম্পদ বিবরণী, আয়কর বিবরণী, পাসপোর্টের তথ্যও চাওয়া হবে। এ ছাড়া সম্প্রতি গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আরো যেসব ভিআইপির নাম বেরিয়ে এসেছে, দুদক এদের সবার সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে। সর্বোপরি এসব ব্যক্তি সার্বক্ষণিক দুদকের নজরদারিতে রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। ক্যাসিনো বন্ধে র‌্যাবের অভিযানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার তথ্য প্রকাশের পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খানকে তদারকি কর্মকর্তা ও পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। দলের অন্য সদস্যরা হলেন উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সালাউদ্দিন আহম্মেদ, সহকারী পরিচালক নেয়ামুল আহসান গাজী ও মামুনুর রশিদ চৌধুরী। সূত্র জানায়, ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িত রাঘববোয়ালরা বিভিন্ন পন্থায় দেশের বাইরে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। এসব টাকা হুন্ডি অথবা ব্যাংকিং চ্যানেলে আমদানি-রপ্তানির আড়ালে পাচারের বিষয়টি দুদক ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিআইএফইউ) অনুসন্ধানে প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং ক্যাসিনো বন্ধে অভিযান পরিচালনাকারী র‌্যাবের সঙ্গেও তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বৈঠক হয়েছে দুদকের। দুদকের হাতে যাদের নাম : দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলার মধ্যে যুবলীগ নেতা সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী এবং ভোলার সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, শাওনের স্ত্রী ফারজানা চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, সহসভাপতি এনামুল হক আরমান জিকেবি এন্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের মালিক জি কে শামীম, তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা ও মা আয়েশা খাতুন ও আলোচিত এই ঠিকাদারকে বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগে গণপূর্তের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হাই ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাফিজুর রহমানের নাম আছে দুদকের তালিকায়। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. কাওসার, গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু ও তার ভাই থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়া, ঢাকা দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা এ কে এম মোমিনুল হক ওরফে সাঈদ কমিশনার, আরেক কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বকুল, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি ও কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ এবং তাদের সহযোগীদের নামও তালিকায় রয়েছে। এসব বিষয়ে গত ১৫ অক্টোবর দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত সাংবাদিকদের বলেছেন, বিভিন্ন সংস্থা ও গণমাধ্যমের তথ্য থেকে আমরা ৪৬ জনের তালিকা পেয়েছি। তাদের অবৈধ সম্পদ এবং মুদ্রা পাচারের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এতে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কমিশন মামলা করবে। ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, আমাদের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা দেখবেন, তারা অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন কি না, করে থাকলে সেই অর্থ কোথায় ব্যবহার করেছেন, তা খুঁজে বের করবেন। সার্বিক বিষয়ে অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে এনবিআর থেকে আয়কর নথিসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। শিগগিরই সেই তালিকা ধরে সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিস দেয়া হবে। কাউকে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলবও করা হবে। এ বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, বিএফআইইউ প্রধান আমাদের চেয়ারম্যান স্যারের দেখা দেখা করেছেন। তিনি কয়েক ঘণ্টা কমিশনে ছিলেন। তবে কী বিষয়ে তারা কথা বলেছেন তা আমার জানা নেই। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, বিএফআইইউ প্রধান চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য দুদক চেয়ারম্যানের কাছে সরবরাহ করেছেন। ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের আর্থিক গোয়েন্দা তথ্যও অবহিত করেছেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App