×

জাতীয়

একক আধিপত্যে ঝুঁকি বাড়ছে চট্টগ্রাম বন্দরে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০১৯, ১০:৫৯ এএম

একক আধিপত্যে ঝুঁকি বাড়ছে চট্টগ্রাম বন্দরে
চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি না করে বরং একটি কোম্পানিকেই বারবার সুবিধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কখনো টেন্ডার ছাড়া, আবার কখনো কিছু শর্ত জুড়ে দেয়ায় গত ১২ বছর ধরে ৩ টার্মিনালের ২টির কাজই পেয়ে আসছে সাইফ পাওয়াটেক নামে একটি মাত্র কোম্পানি। সম্প্রতি আরো ৬ বছরের জন্য কাজ দেয়া হয়েছে তাদের। অন্যদিকে বাকি ১টি টার্মিনাল পরিচালনা করছে ৬ প্রতিষ্ঠান মিলে। কাজের গতি ও সেবার মান নিশ্চিত করতে এ অবস্থাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম বন্দরে ৩টি টার্মিনালের মধ্যে চিটাগাং কন্টেইনার টার্মিনালে (সিসিটি) ৩টি, নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) ৪টি ও জেনারেল কন্টেইনার বার্থে (জেসিবি) ৬টি বার্থ রয়েছে। প্রত্যেকটি বার্থে একটি করে জাহাজ ভিড়তে পারে। আগে টেন্ডারের মাধ্যমে বার্থ পরিচালনায় অপারেটর নিয়োগ দেয়া হতো। তবে ২০০৭ সালে টেন্ডার ছাড়াই ‘ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড’ বা ডিপিএমের মাধ্যমে সাইফ পাওয়ারটেক সিসিটির বার্থগুলো পরিচালনার দায়িত্ব পায়। কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা সত্তে¡ও কাজ পাওয়ার পেছনে তৎকালীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি মহলের প্রভাব ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তী সময় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ভেতরে ও নৌমন্ত্রণালয়ে সাইফ পাওয়ারটেকের পক্ষে একটি সুবিধাভোগী বলয় তৈরি হয়। ফলে কিছুদিনের মধ্যে এনসিটির ৪টি বার্থও চলে যায় তাদের হাতে। এরপর যত টেন্ডার হয়েছে, সবগুলোতেই বিশেষ কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে সাইফ পাওয়ারটেককে এককভাবে সুযোগ করে দেয়া হয়। শুধু জেসিবির ৬টি বার্থ এফ কিউ খান এন্ড ব্রাদার্স, ফজলে এন্ড সন্স, বশির আহাম্মদ, এ এন্ড জে ট্রেডার্স, এভারেস্ট এন্টারপ্রাইজ এবং এম এইচ চৌধুরী নামে ৬ প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকে। বার্থ অপারেটর এসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে একরাম চৌধুরী বলেন, মূলত সাইফ পাওয়াটেককে কাজ পাইয়ে দিতে প্রতিবারই টেন্ডারের সময় বিশেষ কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। বিশাল অংকের ব্যাংক গ্যারান্টি চাওয়া হয়। এতে দেখা যায়, ৩০-৪০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানও টেন্ডারগুলোতে অংশ নিতে পারে না। তিনি বলেন, শর্তগুলো পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) অনুযায়ী হলে টেন্ডারে অনেক প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারত। সেটি না হওয়ায় ২০১৫ সালে সিসিটির দরপত্রে শুধু ওই কোম্পানি ছাড়া আর কেউ অংশ নিতে পারেনি। ফলে প্রায় ১৯ শতাংশ বেশি দরে কাজটি পায় সাইফ পাওয়াটেক। চলতি বছরেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে একক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সেবা নেয়ার বিষয়টিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন খোদ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত ২৮ আগস্ট সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি বলেন, আগামী ৬ বছরের জন্য সাইফ পাওয়াটেককে সিসিটি পরিচালানার কাজ দেয়া হয়েছে। তবে আরো বিকল্প খোঁজা বা বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেই পরিচালনা করতে পারে কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কারণ একটি মাত্র সোর্স থেকে সেবা নেয়ার নানা ধরনের ঝুঁকি থাকে। বেশিরভাগ বার্থ একটি কোম্পানির হাতে থাকায় কাজের গতি ও সেবার মানে প্রতিযোগিতা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে বন্দর ব্যবহারকারীদের। ডেকো গ্রুপের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, বন্দরের সিসিটি ও নিউমুরিংয়ের ৭টি বার্থে জাহাজ অগ্রাধিকার পায়। জাহাজগুলোকে আগে সেখানে ভিড়তে হয়। কিন্তু দেখা গেছে, সেখানে পণ্য ওঠানামায় কোনো প্রতিযোগিতা নেই, সেবার মানও ভালো না। অন্যদিকে জেসিবিতে দ্রæত হ্যান্ডেলিং করে আরেকটি জাহাজ পাওয়ার আশায় ৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিযোগিতা দেখতে পাই আমরা। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, টার্মিনালগুলোতে কোন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে এ নিয়ে আমাদের অভিযোগ নেই। আমরা দেখি, অপারেটরদের কাছে পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্ট ও ট্রেইলর আছে কিনা। সেদিক থেকে সিসিটি ও এনসিটির তুলনায় জিসিবি অনেক বেশি দক্ষ। কারণ তারা ম্যানুয়ালি কাজ করে এবং তাদের দক্ষতা অনেক বেশি। সূত্র জানায়, জিসিবির বার্থগুলোতে জাহাজের গড় অবস্থান সর্বনিন্ম ৪৮ ঘণ্টা ও সর্বোচ্চ ৬০ ঘণ্টা। কিন্তু সিসিটি ও এনসিটিতে জাহাজের গড় অবস্থান সর্বনিন্ম ৭২ ও সর্বোচ্চ ৯৬ ঘণ্টা। অথচ এ টার্মিনাল দুটিতেই গ্র্যান্ডি ক্রেনসহ অত্যাধুনিক অনেক যন্ত্রপাতি রয়েছে। এ প্রসঙ্গে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বক্তব্য জানতে ফোন করা হলে তিনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজের বক্তব্য নেয়ার পরামর্শ দেন। পরে কয়েকবার চেষ্টা করেও চবক চেয়ারম্যানকে ফোনে পাওয়া সম্ভব হয়নি। পরে এ বিষয়ে বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুকের সঙ্গে কথা হলে তিনি কোনো বিশেষ কোম্পানির পক্ষে টেন্ডারে শর্ত জুড়ে দেয়ার অভিযোগটি অস্বীকার করেন। কাজের মান ও গতি বাড়াতে আরো সোর্স থেকে সেবা নেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে এখনো অর্থমন্ত্রণালয় বা নৌমন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা পাইনি। মন্ত্রণালয় যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা সেভাবেই দরপত্র আহ্বান করব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App