×

শিক্ষা

বাউবির পরীক্ষা থেকে এমপি বুবলীকে বহিষ্কার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০১৯, ০১:৩৫ পিএম

পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে নরসিংদীর সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি তামান্না নুসরাত বুবলীর সব পরীক্ষা ও রেজিসস্ট্রেশন বাতিল করেছে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। রবিবার (২০ অক্টোবর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলরুমে মিটিংয়ে বসেন ডিন, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ উচ্চ পদস্থরা। ছিলেন নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের প্রতিনিধি এবং পরীক্ষার হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরাও। সভায় ভিসি বলেন, বুবলী নিজে পরীক্ষা না দিয়ে পরপর ৮টি পরীক্ষায় অংশ নেয় তার পক্ষে প্রক্সি পরীক্ষার্থীরা। তবে শেষ দিনের পরীক্ষা দিতে গিয়ে হলে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন এক শিক্ষার্থী। সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রাথমিক তদন্ত শেষে পরীক্ষা থেকে তাকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে জালিয়াতির বিষয়টি আরো তদন্তে কলেজের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সভায় বুবলীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার এবং ঘটনা তদন্তে বাউবির পক্ষে থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন পরীক্ষ নিয়ন্ত্রক মো. আসাদুজ্জামান উকিল, স্টুডেন্ট সাপোর্ট সার্ভিসেস ডিভিশনের পরিচালক ড. আনিস রহমান, ঢাকা আঞ্চলিক কেন্ত্রের পরিচালক আহমেদ সেলিম। তদন্ত কমিটিকে তিনদিন সময় দেয়া হয়েছে। সভায় বুবলীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়ার সুপারিশ করা হয়। তাছাড়া তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটিতে তোলা হবে এবং পরে তা বোর্ড অব গভর্নেসে নিয়ে যাওয়া হবে। তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বুবলী বাউবির কোনো প্রোগ্রামে আর ভর্তি হতে পারবেন না। যারা প্রক্সি পরীক্ষা দিয়েছে তাদের পরিচয় প্রাপ্তি সাপেক্ষে আইনশৃংখলা বাহিনীকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে। বুবলীর এ ধরণের কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করেছে। ভিসি বলেন, নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ওই পরীক্ষার সমন্বয়ক। পরীক্ষা চলাকালে তিনি কখনো কেন্দ্রে যাননি। অথচ প্রতিদিনই কেন্দ্রে উপস্থিত থাকার কথা। কলেজের পক্ষ থেকে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে যথাযথ দায়িত্ব পালন করা হয়নি। কারো প্রবেশপত্র হারিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক কেন্দ্রে জানালে তাকে ডুপ্লিকেট প্রবেশপত্র সরবরাহ করা হয়। কিন্তু জিডি কপি দিয়ে এভাবে পরীক্ষা নেয়া ঠিক হয়নি। তার নিয়মও নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থানীয়ভাবে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা না হলে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে টিকে থাকবে না। সেখানে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণও করা সম্ভব হবে না। উচ্চ মাধ্যমিক পাস নরসিংদীর মহিলা এমপি তামান্না নুসরাত বুবলীর শখ জেগেছিল বিএ পাস করার। এ জন্য উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু পরীক্ষাটা আর নিজে দিতে যাননি। সব নীতিনৈতিকতা ভুলে তিনি ভাড়াটে পরীক্ষার্থী নিয়োগ করেন। এ পর্যন্ত তার হয়ে আটজন ভাড়াটে ছাত্রী পরীক্ষাও দিয়েছেন। বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর শনিবার (১৯ অক্টোবর) কোনো গণমাধ্যমেই বক্তব্য দিতে রাজি হননি মহিলা এমপি বুবলী। তা ছাড়া দিনভর বাড়ি থেকেও বের হননি। তিনি বুবলী সন্ত্রাসী হামলায় নিহত নরসিংদীর সাবেক পৌর মেয়র লোকমান হোসেনের স্ত্রী। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি তামান্না নুসরাত বুবলী ঢাকায় থাকলেও তার হয়ে নরসিংদীতে বিএ পরীক্ষা দিতেন ভাড়াটে ছাত্রীরা। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ কোর্সে চারটি সেমিস্টারের তেরোটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও তিনি একটিতেও অংশ নেননি। কিন্তু তারপক্ষে এখন পর্যন্ত ৮ জন নারী পরীক্ষা দিয়েছেন। সবাই সবকিছু জানলেও এমপির ভয়ে কেউ কিছু বলেনি। শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) পরীক্ষার হলে সংসদ সদস্যের রোল নাম্বারের সিটে বসা পরীক্ষার্থীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি দাবি করেন, তার নাম তামান্না নুসরাত বুবলী। আপনার কি ন্যাশনাল আইডি কার্ড আছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আছে কিন্তু নিয়ে আসেননি। এ সময় প্রশ্ন করা হয়, তামান্না নুসরাত বুবলী একজন সংসদ সদস্য। তিনিই কি আপনি? তখন ওই পরীক্ষার্থী নিজেকে সংসদ সদস্য তামান্না নুসরাত বুবলী বলে দাবি করেন। এ সময় কক্ষ পরিদর্শক জানান, ওই পরীক্ষার্থী দাবি করেছেন তার আইডি কার্ড হারিয়ে গিয়েছে। সে জিডির কপি নিয়ে এসেছে। তাই তাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়া হচ্ছে। ধরা খেয়ে যাওয়ার এক পর্যায়ে প্রক্সি পরীক্ষা দিতে আসা ছাত্রীটি পরীক্ষার হল থেকে দ্রুত পালিয়ে যান। আর তাকে পালাতে সাহায্য করেন এমপি বুবলীর এপিএস ওমর ফারুক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরীক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান আকন্দ বলেন, পরীক্ষার্থী মহিলা এমপির এই জালিয়াতির ঘটনা তিনি জানতেনই না। শুক্রবার পৌনে ৩টার দিকে জানার পর তিনি ওই ভাড়াটে পরীক্ষার্থীসহ মহিলা এমপিকে বরখাস্তের সুপারিশ করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। এ ঘটনা তদন্তে নরসিংদী সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান প্রফেসর মোহাম্মদ উল্লাহ কাজলকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এই কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ মান্নান ভোরের কাগজকে বলেন, একজনের পরীক্ষা আরেকজন দিতে পারে না। এটি খুবই খারাপ ঘটনা। যিনি এই কাজ করেছেন, তিনি এমপি কিংবা যত ক্ষমতাধরই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে অবশ্যই কড়া ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App