×

পুরনো খবর

শাহ আমানত বিমানবন্দর যেন ‘সোনার খনি’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০১৯, ১১:৫২ এএম

শাহ আমানত বিমানবন্দর যেন ‘সোনার খনি’
** এবার সাড়ে ৭ কোটি টাকার স্বর্ণের বার উদ্ধার : মূল হোতারা থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে **
স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সিট, টয়লেট, লাগেজ এমনকি যাত্রীর জুতার সুকতলায়ও মিলছে স্বর্ণের বার। এটিকে কেউ কেউ সোনার খনি বলেও মন্তব্য করছেন। অভিযোগ রয়েছে, বিমান ও বিমানবন্দরের কর্মীদের সহায়তায় চোরাকারবারিরা এই রুট ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে অবৈধভাবে সোনা আনছেন। কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দারা মাঝে মধ্যে দুয়েকজন স্বর্ণ বহনকারীকে গ্রেপ্তার করলেও মূল হোতারা থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। কথিত আছে, প্রবাসে বসেই স্বর্ণের চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছে শক্তিশালী একটি চক্র। চোরাকারবারি চক্রের শীর্ষ ব্যক্তিদের পুলিশি তদন্তে চিহ্নিত করা সম্ভব না হওয়ায় বিচারের আওতায় আনা যায়নি। মূল হোতাদের গ্রেপ্তার করা না গেলে বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধ সম্ভব নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বেশ কয়েক বছর ধরেই স্বর্ণ চোরাকারবারে জড়িত দেশি-বিদেশি চক্র বাংলাদেশকে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। বিশেষ করে বিমানবন্দরকেন্দ্রিক স্বর্ণ চোরাচালান অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি এবং বহনকারীদের গ্রেপ্তার ও দ্রুততম সময়ে বিচার সম্পন্ন করেও বন্ধ করা যাচ্ছে না বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালান। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বর্ণের অবৈধ প্রবেশ আগের তুলনায় অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হলেও বন্ধ করা যায়নি। প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালান অব্যাহত রয়েছে। স্বর্ণ চোরাচালানে কেবল শুল্ক ফাঁকি দেয়াই নয়, অন্যান্য অপরাধও সংশ্লিষ্ট থাকে। যেহেতু স্বর্ণের একটি আস্তর্জাতিক বাজার মূল্য রয়েছে, সেহেতু নানা অপরাধের সঙ্গেই এই স্বর্ণের অবৈধ লেনদেনের কানেকশন থাকে।’ শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মধ্যপ্রাচ্যের শারজাহ থেকে আসা এয়ার এরাবিয়ার ফ্লাইটের এক যাত্রীর কাছ থেকে ১৩০ পিস স্বর্ণের বার উদ্ধার করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। চার্জার লাইটের ভেতরে করে আনা এই স্বর্ণের বারগুলোর আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। বিমানবন্দরে দায়িত্বরত চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার রিয়াদুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কর্মরত জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই সদস্যদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে স্বর্ণের বার বহনকারী জয়নাল আবেদীন নামে ওই যাত্রীকে আটক করা হয়। বেল্ট থেকে লাগেজ সংগ্রহের সময় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে আমরা জয়নালকে হেফাজতে নিই। তার একটি লাগেজ তল্লাশি করি। সেখানে ৬টি চার্জার লাইটের ভেতরে স্বর্ণের বারগুলো পাওয়া যায়। জব্দ স্বর্ণের বারের ওজন ১৫ কেজি ১৬৩ গ্রাম। বিমানবন্দর ও কাস্টমস সূত্র বলছে, চট্টগ্রামকে স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নেয়ার অনেক কারণ আছে। এর অন্যতম কারণ প্রবাসী অধ্যুষিত চট্টগ্রামের অধিকাংশ মানুষ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে থাকে। শ্রমিক পেশায় নিয়োজিত এসব মানুষকে সহজেই স্বর্ণ চোরাচালানের বাহক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বিশেষ করে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান ও হাটহাজারীকেন্দ্রিক একটি বেল্টের পেছনে কাজ করে। সম্প্রতি বিমানবন্দরে স্বর্ণের যেসব চালান ধরা পড়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, আবুধাবি, শারজাহ, মাস্কাটের ওমান, সৌদি আরবের জেদ্দা, কাতার থেকে আসছে স্বর্ণের চোরাচালান। ফলে এসব দেশ থেকে আসা বিমানগুলোর প্রতি নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আগে থেকে তৎপরতা বাড়িয়ে দেয়ার কারণেই হয়তো এখানে বেশি চালান ধরা পড়ছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বর্ণ ধরা পড়লেও এর দায়িত্ব কেউ স্বীকার করেন না। স্বর্ণ পাচারের সঙ্গে বিমান এবং বিমানবন্দরের কর্মীরাও জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু কখনো তাদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার নূর-ই আলম বলেন, স্বর্ণ চোরচালানে যদি কোনো স্টাফ জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ ছাড়া চোরাচালান বন্ধের লক্ষ্যে আমরা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাড়িয়েছি। তা আরো জোরদার করা হচ্ছে।’ এর আগে গত ১১ অক্টোবর চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শারজাহ থেকে আসা দুই যাত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণের বার জব্দ করা হয়। এর আগে গত ২ অক্টোবর ৩৬টি স্বর্ণের বারসহ বাংলাদেশ বিমানের মোহাম্মদ ইলিয়াস (৩০) নামে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে আটক করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ওই পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পরিহিত জুতায় লুকানো অবস্থায় জব্দকৃত সোয়া ৪ কেজি ওজনের স্বর্ণের বারগুলোর দাম আনুমানিক ২ কোটি টাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App