×

মুক্তচিন্তা

রোধ করা যাচ্ছে না স্বর্ণের চোরাচালান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:০০ পিএম

ঢাকার শাহজালাল, চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও সিলেটের ওসমানী- এই তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়েই দেশে অবৈধভাবে স্বর্ণ প্রবেশ বলা যায় নিয়মিত ঘটনা। প্রতিদিনই কোনো না কোনো বিমানবন্দরে অবৈধভাবে আসা স্বর্ণ আটক হচ্ছে। গত শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মধ্যপ্রাচ্যের শারজাহ থেকে আসা এয়ার এরাবিয়ার ফ্লাইটের এক যাত্রীর কাছ থেকে ১৩০ পিস স্বর্ণের বার উদ্ধার করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। চার্জার লাইটের ভেতরে করে আনা এই স্বর্ণের বারগুলোর আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। ৬টি চার্জার লাইটের ভেতরে স্বর্ণের বারগুলো পাওয়া যায়। জব্দ স্বর্ণের বারের ওজন ১৫ কেজি ১৬৩ গ্রাম। কী পরিমাণ স্বর্ণ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে তা হিসাবের বাইরে। এমন বাস্তবতা অবশ্যই উদ্বেগজনক। স্বর্ণ চোরাচালান দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি ফেলছে নেতিবাচক প্রভাব। একে ঘিরে গড়ে উঠছে একশ্রেণির অপরাধী, যা আইনশৃঙ্খলার প্রতি হুমকিস্বরূপ। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, স্বর্ণ চোরাচালানের শক্তিশালী ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সিট, টয়লেট, লাগেজ এমনকি যাত্রীর জুতার সুকতলায়ও মিলছে স্বর্ণের বার। চালান ধরা পড়ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, আবুধাবি, শারজাহ, মাস্কাটের ওমান, সৌদি আরবের জেদ্দা, কাতার থেকে আসছে স্বর্ণের চোরাচালান। জানা যায়, গত চার বছরে দেশের বিমানবন্দরে দুই হাজার কেজির বেশি পরিমাণ স্বর্ণের বার জব্দ করা হয়। এ ছাড়া গত এক বছরে শুধু চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বর্ণের বারের ১৪টি বড় চালান ধরা পড়ে। প্রায় ৮০ কেজি ওজনের এসব স্বর্ণের আনুমানিক মূল্য ৩৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ভয়াবহ খবর হলো, গত ৩ মার্চ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জোরারগঞ্জ এলাকা থেকে প্রায় ২৭ কোটি টাকা মূল্যের ৬০০ পিস স্বর্ণের বার উদ্ধারের ঘটনায় প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। ঘটনা পরিক্রমায় দেখা যায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বর্ণ চোরাচালান জব্দের সংখ্যা বেড়েছে। একটা হিসাবে পাওয়া গেছে, যে পরিমাণ স্বর্ণ চোরাইপথে ঢুকছে দেশে, আবার সেগুলো পাচারও হচ্ছে। বৈধ পথে আমদানি কিংবা রপ্তানি হলে সরকারের রাজস্ব খাত আরো মজবুত হতো। দেশে অস্ত্র, মাদক, স্বর্ণ ও বিস্ফোরক চোরাচালানের বহু সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, যাদের আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রের সঙ্গে রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। এখনই যদি এদের নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে দ্রুত এই অপরাধ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে পড়বে। চোরাচালান প্রতিরোধ আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। সংশোধিত আইন অনুযায়ী চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের পর জামিন দেয়া হবে না। সংশোধিত আইনটি এখনো জারি হয়নি। প্রচলিত আইনের ফাঁকফোকরে গ্রেপ্তার হওয়ার পরও চোরাকারবারিরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। তাই আইনটি দ্রুত কার্যকর করা দরকার। অর্থনীতিই শুধু নয়, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেও স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App