ভারতের ‘এলা এখন’ ঢাকার মঞ্চে
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:৪৫ পিএম
গঙ্গা-যমুনা উৎসবের নবম দিনে ভারতের বেলঘরিয়া রূপতাপসের ‘এলা এখন’ মঞ্চে প্রদর্শিত হলো। শনিবার (১৯অক্টোবর) সন্ধ্যায় শিল্পকলার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে এ মঞ্চায়ন হলো। এর নাট্যভাবনা ও নির্দেশনায় ছিলেন কৌশিক ঘোষ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এলাকে এখনকার প্রেক্ষাপটে এনে বর্তমান সময়ের আতশকাচের তলায় বিছিয়ে বিশ্লেষণ এবং আপাদমস্তক একটি রাজনৈতিক ভাষ্যরচনা।
দেখা যায়, গণ আন্দোলনের প্রহরীরাও বেশিরভাগ সময়ে স্বৈরাচারী হয়ে যান। মানবতা শব্দটা হারিয়ে যায় তখন। রবীন্দ্রনাথ এরই বিরোধিতা করেছিলেন তার লেখায়। এলা নাটকে সেটিই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।
১৯৩৪ সালে রবীন্দ্রনাথ চার অধ্যায় উপন্যাসে লিখছেন-দেশের আত্মাকে মেরে দেশের প্রাণ বাঁচিয়ে তোলা যায়, এই ভয়ংকর মিথ্যে কথা পৃথিবীসুদ্ধ ন্যাশানালিস্ট আজকাল পাশবগর্জনে ঘোষনা করতে বসেছে। আজও এই সময়ে দাঁড়িয়ে সেই গর্জনের উন্মত্ততা উগ্র জাতীয়তাবাদ, সেই মৌলবাদের হিংসা আমাদের আশংকিত করছে। মানুষের আত্মশক্তির উন্নতি না হলে দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। মানুষের স্বভাবকে মেরে তাকে পুতুল বানালে যে কোনও বিপ্লব পথ হারাবে এই সত্য ইতিহাসে বারবার দেখেছি। তাই চার অধ্যায় সমকালীন। রবীন্দ্রনাথ সমকালীন।
চার অধ্যায় উপন্যাসকে এই সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে ‘এলা এখন’ নামে মঞ্চায়ণ করল বেলঘরিয়া রূপতাপস। রবীন্দ্রনাথের সংলাপের সঙ্গে মিশে গিয়েছেন অভিনেতা নবারুণ ভট্টাচার্য, মণিভুষন, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিপুল চক্রবর্তীর কবিতা। অভিনয়ে ছিলেন গৌতম চক্রবর্তী, নীলাভ চট্টোপাধ্যায়, তথাগত চৌধুরী, শিপ্রা মুখার্জি। কোরাসে গলা মেলান অনির্বাণ, নানক, সুবীর, সুচরিতা। প্রযোজনা নিয়ন্ত্রণে তারাশঙ্কর চক্রবর্তী। পোশাক অলংকরণে হিরণ মিত্র, মঞ্চ নির্মানে মদন হালদার, আবহ সংগীতে শুভেন্দু মাইতি, আবহ প্রক্ষেপণে রানা দাস, আলোক প্রক্ষেপণে ঠান্ডু রায়হান সুজিত ঘোষ, অলক দেবনাথ, প্রজেকশনে মহাদেব, নাট্যভাবনা ও নির্দেশনায় কৌশিক ঘোষ।
এ ছাড়া একই সময়ে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে নাট্যচক্রের নাটক ‘ভদ্দরনোক’। এর রচনা মলিয়ের, রূপান্তর ও নির্দেশনায় গোলাম সারোয়ার। স্টুডিও থিয়েটার হলে নাট্যম রেপার্টরীর নাটক ‘ডিয়ার লায়ার’। এর রচনা জেরমে কিলটি, অনুবাদ করেছেন আব্দুস সেলিম, নির্দেশনায় আইরিন পারভীন লোপা। বাংলাদেশ মহিলা সমিতি মিলনায়তনে শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্রের নাটক ‘তৃতীয় একজন’ রচনা সমীর দাশগুপ্ত, নির্দেশনা দিয়েছেন অনন্ত হীরা।
শুরুতে মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকেলে। পথনাটক পরিবেশন করে বৃত্ত নাট্যদল, মুক্তমঞ্চ নাট্যদল। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে ঢাকা স্বরকল্পন। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ওস্তাদ মোমতাজ আলী খান সঙ্গীত একাডেমি। দলীয় নৃত্য পরিবেশনায় ছিল স্বপ্ন বিকাশ কলা কেন্দ্র। শিশু কিশোর পরিবেশনায় ছিল আমরা কুঁড়ি ও সন্ধান লিটল থিয়েটার।
নৃত্যকলা মিলনায়তনে সন্ধ্যায় দর্শনীর বিনিময় পরিবেশিত হয় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর প্রযোজনা ভালোবাসা ও প্রশান্তির পৃথিবী, আবৃত্তি সংসদ কুমিল্লার আবৃত্তি প্রাকযুগে পুরোভাগে, কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রের আবৃত্তি তথাগত।