দুই সিটির মশা নিধন কার্যক্রমে স্থবিরতা
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০১৯, ১১:৪৩ এএম
রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসলেও এর ভয়াবহতা রীতিমতো ভুলতে বসেছে দুই সিটি করপোরেশন। মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। মাঠে দেখা যাচ্ছে না এ কাজে নিয়োজিত কর্মীদের। ডেঙ্গু মোকাবেলায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিলের আদেশও বাতিল করা হয়েছে ইতোমধ্যে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর রেকর্ড ভেঙেছে গত ১০ বছরের। গত ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ২৪৬ জনের মৃত্যুর তথ্য রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) কাছে এসেছে। এর মধ্যে ১৫১ জনের তথ্য পর্যালোচনা করে ৯৩ জনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন আইইডিসিআরের বিশেষজ্ঞরা। এখনো বিভিন্ন জেলা থেকে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর খবর আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বিশেষ মৌসুম বা নির্দিষ্ট সময় নয় বরং বছরব্যাপী ডেঙ্গু মশা নিধন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
এদিকে, সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ছড়িয়ে পড়ার পর গত ৩ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে ৫ আগস্ট ডিএনসিসি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে। অন্যদিকে ছুটি বাতিলের আদেশ বহাল রাখলেও মশক নিধন কর্মীদের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তাদের সপ্তাহে একদিন করে ছুটি দিচ্ছে ডিএসসিসি।
এ বিষয়ে উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে এটা অস্বীকার করা যাবে না। তবে কার্যক্রম থেমে নেই। আগামী সপ্তাহ থেকে আবারও জোরালোভাবে আরো একটি অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরো জানান, পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি আপতত বাতিলের আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি সে রকম হলে প্রত্যাহার আদেশ আবারো তুলে নেয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মশক নিয়ন্ত্রণে নেয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি শেষ হচ্ছে না। উত্তর সিটিতে বছরব্যাপী মশক নিধনে সমন্বিত কার্যক্রম হাতে নেয়া হলেও তার বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। এ ছাড়াও গত ৪ সেপ্টেম্বর ডিএনসিসির বাজেট ঘোষণাকালে এ সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের সহায়তায় ডেঙ্গু প্রতিরোধ সেল গঠন করে জনসচেতনা সৃষ্টিতে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এমনকি কীটনাশক প্রয়োগ কার্যক্রম মনিটরিং করতে আধুনিক ট্রাকিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু মাঠে এর বাস্তবায়ন নেই। ডেঙ্গু প্রতিরোধ সেলের প্রধান সমন্বয়ক ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের অনেকেই এ বিষয়ে জানেন না। চোখে পড়ে না কীটনাশক প্রয়োগ কার্যক্রম।
দুই সিটির মশক নিধনকর্মীরা জানান, কাউন্সিলররা ওষুধ ছিটানোর বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেন না। একনাগাড়ে কয়েক মাস কাজ করায় তারা (কর্মীরা) এখন ক্লান্ত। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ছুটি নিয়ে বিশ্রামে আছেন অনেকেই। এ ছাড়াও উপযুক্ত ফগার মেশিনের অভাবে বিদেশ থেকে আনা নতুন ওষুধগুলো পড়ে আছে।
হঠাৎ করেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে গত ২০ আগস্টের পর ডিএসসিসির দুই দফা ‘চিরুনি’ অভিযান নাম দিয়ে এডিস মশার লার্ভা নিধন অভিযান পরিচালনা করা হয়। ডিএসসিসি তার প্রতিটি ওয়ার্ডে এডিসের লার্ভা নিধন অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। অন্যদিকে, ডিএনসিসিও দুই দফা অভিযান সম্পন্ন করে। বর্তমানে ডেঙ্গুবিরোধী অভিযান তাদের নেই বললেই চলে। দুই সিটির তুলনায় উত্তর সিটিতে এডিসের লার্ভা ও লার্ভা উপযোগী পরিবেশ বেশি পাওয়া গেলেও সংস্থাটির কার্যক্রম বর্তমানে ঝিমিয়ে পড়েছে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আগের মতো তৎপরতা নেই এমন অভিযোগের জবাবে ঢাকা উত্তরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মমিনুর রহমান মামুন বলেন, নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে আমরা থেমে নেই। পুরো বছরব্যাপী সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। এডিস নিয়ন্ত্রণে সফলভাবে চিরুনি অভিযান সম্পন্ন হয়েছে। ডেঙ্গু পুরোপুরি না হলেও অনেকটাই এখন নিয়ন্ত্রণে। খুব শিগগিরই আমরা আবারো মাঠে নামবো।