×

বিনোদন

‘ছোটরা সবসময় একটা গল্প খুঁজে’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০১৯, ০১:২০ পিএম

‘ছোটরা সবসময় একটা গল্প খুঁজে’

মোরশেদুল ইসলাম

নন্দিত নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম নির্মাণ করেছেন বেশকিছু শিশুতোষ চলচ্চিত্র। যুক্ত আছেন চিলড্রেন ফিল্ম সোসাইটির সঙ্গে। মেলার সঙ্গে কথা বলেছেন শিশুতোষ চলচ্চিত্রের নানা প্রসঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আহমেদ জামান শিমুল
শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণের চ্যালেঞ্জগুলো কী? ছোটদের মনস্তত্ত¡ বুঝে ছবিগুলো করতে হয়। গল্প নির্বাচন থেকে শুরু করে সবকিছু এমনভাবে করতে হয় যেটা শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় এবং তাদের মনে দাগ কাটবে। অভিনেতা-অভিনেত্রী নির্বাচন করতে হয় শিশুদের মধ্যে থেকে। আমি সাধারণত যারা কোনোদিন অভিনয় করেনি তাদের বাছাইয়ের চেষ্টা করি। তাদের গ্রুমিং, ট্রেন-আপ করানোটাও চ্যালেঞ্জিং কাজ। সঠিক বাজেট ও প্রযোজক পাওয়াটাও তো বেশ কষ্টসাধ্য। অনেকের ধারণা ছোটদের ছবি করা যায় কম বাজেটে। সেটা ভুল ধারণা। ছোটদের ছবি করতে তুলনামূলক বেশি বাজেট লাগে। কারণ ছোটদের ফাঁকি দেয়া যায় না। তারা ফাঁকিটা ধরে ফেলে। আমাদের দেশে ছোটদের জন্য ছবি প্রযোজনার জন্য কোনো প্রযোজক এগিয়ে আসে না। সবাই মনে করেন যে ছোটদের ছবি চলবে না। কোনো বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নেই। যদি সুন্দরভাবে বানানো যায় তাহলে ছোটদের ছবিও চলে আমার অভিজ্ঞতায় বলে। ছোটদের কাজকে আমরা সবসময় ছোট কাজ বলে মনে করি। অনেকে ভাবেন যে ছোটদের ছবি এটা আর এমন কী! যার কারণে আমি যতগুলো ছোটদের ছবি করেছি প্রায় সবগুলো সরকারি অনুদানে করা। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আলাদা কোনো বিভাগও নেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ‘শ্রেষ্ঠ ছবি’, ‘শ্রেষ্ঠ পরিচালক’ এই ক্যাটাগরিগুলোতে ছোটদের ছবিকে ধরাই হয় না। ‘শ্রেষ্ঠ শিশুতোষ চলচ্চিত্র’ পুরস্কার নেই। ছোটদের ছবিও যে বড়দের ছবির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুরস্কার পেতে পারে এটা মনেই করা হয় না। হয়তো শুধু শিশুশিল্পীদের পুরস্কার দেয়া হয়। ছোটদের ক্ষেত্রে যদি বলি সে হয়তো মূল চরিত্রে অভিনয় করল, কিন্তু কখনই মূল ভ‚মিকায় অভিনয়ের জন্য পুরস্কার দেয়া হয় না যতই ভালো অভিনয় করুক। এই জিনিসগুলো আমাকে পীড়া দেয়। প্রতি বছরই ‘শিশুতোষ চলচ্চিত্র’ বিভাগে অনুদান দেয়া হয়। দুয়েকটা ব্যতিক্রম ব্যতীত অধিকাংশ সিনেমাই আলোর মুখ দেখে না, কিংবা যেগুলো দেখে সঠিক প্রচারণার অভাবে দর্শক সেগুলোর কথা জানতে পারে না ছবি যদি ভালো না হয় তাহলে তো লাইমলাইটে আসবে না। হয়তো অনেক ভালো গল্প নিয়েই ছবিগুলো হচ্ছে। জাফর ইকবালের গল্প নিয়ে হচ্ছে। কিন্তু মেকিংয়ের কারণে ছবিগুলো ছোটরা দেখছে না, আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছেও না। ফলে আড়ালে পড়ে যাচ্ছে। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে আমি আমাদের প্রতিষ্ঠিত চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যেও ছোটদের জন্য ছবি করার ব্যাপারে অনাগ্রহ লক্ষ করছি। বাণিজ্যিক কারণে... আমি জানি না কী মানসিকতা তাদের মধ্যে কাজ করে। বাইরে যদি দেখি অনেকেই এগিয়ে আসছে। সত্যজিৎ রায়ের মতো বড় মাপের পরিচালকের কথাই ধরি। ‘গুপি গাইন বাঘা গাইন’ থেকে শুরু করে ‘হিরক রাজার দেশে’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘জয়বাবা ফেলুনাদ’ কতগুলো ছবি করেছেন ছোটদের জন্য। শিশুতোষ সিনেমার ক্ষেত্রে ভালো শিশুসাহিত্যের অভাবও কি পরিলক্ষিত হয়? হ্যাঁ, শিশুতোষ সাহিত্যের যথেষ্ট অভাব আছে। খুব একটা নেই। আমি ছবি বানাতে গিয়ে অনেকের গল্পই পড়েছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জাফর ইকবালের কাছেই ধরা দিতে হয়েছে। উনি যতটা সুন্দরভাবে ছোটদের গল্প লিখতে পারেন সেটা অনেকেই পারেন না। অন্য অনেকেই লিখেছেন, কিন্তু সেই গল্পগুলো ওই মাপের হয়নি। ছোটদের মনকে ছুঁয়ে যেতে পারেনি সেভাবে। ছোটদের ছবি করতে গেলে ভালো গল্প না ফেলে মুশকিল করাটা। ছোটরা সবসময় একটা গল্প খুঁজে। হল মালিকদেরও কি অনিহা কাজ করে? আমার সর্বশেষ ছবি ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’র সময় স্টার সিনেপ্লেক্স ও ব্লকবাস্টার ছাড়া কোনো হল মালিক চালায়নি। একটু অন্যরকম ছবি হলেই তারা মুক্তি দিতে চান না। আর ছোটদের ছবি তো আরো না। তারা মনে করে এই ছবি চলবে না। যদি চালাতে দিত তাহলে আমার মনে হয় ছবিটা চলত। আমার ‘দীপু নাম্বার টু’ কিন্তু অনেক হলে চলেছে। ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ও মোটামুটি চলেছে। বিভিন্ন উৎসব কর্মশালায় অনেকেই অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তো পরবর্তী জীবনে নির্মাণে আসেননি বা যারা এসেছেন তারা হয়তো শিশুতোষ সিনেমা বানাননি... আমাদের চিলড্রেন ফিল্ম সোসাইটির অনেক বাচ্চারা কিন্তু এখন ছবি বানাচ্ছে বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে। সে বাচ্চাগুলোর অনেকেই খুব ভালো ভালো ছবি বানাচ্ছে। অনেকের ছবি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও দেখানো হচ্ছে, পুরস্কারও পাচ্ছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন বেরিয়ে এসেছে, যারা নির্মাতা হিসেবে মোটামুটি সম্ভাবনার জায়গাটা তৈরি করেছে। আর শিশু একাডেমি ২০ বছর আগে ছোটদের জন্য ছবি করত। তারা আবার শুরু করেছে। এই বছরই তারা দুটো পূর্ণদৈর্ঘ্যকে ইতোমধ্যে তারা প্রযোজনা করছে। আরেকটা ছবিকেও তারা করবে। এটা ভালো লক্ষণ। টেলিভিশনে শিশুদের জন্য ওইভাবে অনুষ্ঠান নেই। আমরা কোনো দেশি কার্টুন চরিত্রও সৃষ্টি করতে পারিনি। এ ক্ষেত্রে কি মেধার ঘাটতিকে দোষ দেয়া যায়? মেধার ঘাটতি তো আছেই। ছোটদের জন্য ভালো অ্যানিমেশন ছবি আমাদের এখানেই হতে পারে বলে আমি মনে করি। টেলিভিশনগুলো ছোটদের অনুষ্ঠান করতে খুব একটা আগ্রহী হয় না। ঈদ বা বিভিন্ন উৎসবে এত এত নাটক হয়, এর মধ্যে কয়টা ছোটদের নাটক হয়? আমি কয়েকটা করেছিলাম, এনটিভির উদ্যোগে পর পর কয়েক বছর। সে নাটকগুলো জনপ্রিয়ও হয়েছিল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App