×

জাতীয়

মধ্যপ্রাচ্য থেকে বেকার হয়ে ফিরছেন বাংলাদেশিরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০১৯, ১১:১৫ এএম

মধ্যপ্রাচ্য থেকে বেকার হয়ে ফিরছেন বাংলাদেশিরা

ঘটনা এক. দুবাইয়ের একটি পাঁচতারকা হোটেলে গত সাত বছর ধরে কাজ করছেন সৃজন দেব (নাম পরিবর্তিত)। গত জানুয়ারিতে ছুটিতে এসেছিলেন দেশে। ছয় মাসের ছুটি কাটিয়ে গত জুন মাসে দুবাইয়ে ফিরে গিয়ে দেখেন, যা দেখে এসেছিলেন তেমনটি আর নেই। তার হোটেল থেকে বহু শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। গত ১০ অক্টোবর এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, মন্দার কারণে শুধু তারই হোটেল নয়, দুবাইয়ের বহু কোম্পানি থেকে বিদেশি শ্রমিক ছাঁটাই করা হচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকরাই বেশি চাকরিচ্যুত হচ্ছেন।

ঘটনা দুই. দীর্ঘদিন ধরে ওমানে কর্মরত মো. আবদাল মিয়া আরো বেশি রুজির আশায় দুবাইয়ে আসার জন্য বাংলাদেশি রহমত মিয়ার দ্বারস্থ হন। রহমত এবং আবদাল মিয়া বাংলাদেশেও পরস্পর প্রতিবেশী। রহমত মিয়া দুবাইয়ে কাজ করছেন গত আট বছর ধরে। এই সুবাদে আবদাল মিয়া রহমত মিয়ার কাছে ধরনা দিলেও রহমত মিয়া তাকে নিষেধ করেন। কারণ দুবাইয়ের শ্রমিক ছাঁটাই চলছে। কিন্তু আবদাল মিয়া রয়েছেন মহাদুশ্চিন্তায়, কারণ ওমানেও পরিস্থিতি ভালো নেই। এমন চিত্র দুবাইয়ে এখন অহরহ ঘটলেও মধ্যপ্রাচ্যে এসব ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে সৌদি আরবে। সেখানে নির্যাতন সয়েও শ্রমিকরা কাজ করছেন কিন্তু প্রাপ্য টাকা পাচ্ছেন না। পরিস্থিতির চাপে পড়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন।

কাতারে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করার জন্য বাংলাদেশ থেকে বহু শ্রমিক নিয়ে যায়। এখন নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পথে। ফলে শ্রমিকরাও বেকার হচ্ছেন। এ ছাড়া কাতারে মাত্রাতিরিক্ত গরমও তাদের দেশে ফেরার আরেকটি কারণ। চলতি বছরের ৯ মাসের মধ্যেই প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক ফিরে এসেছেন। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে প্রায় ১৭ হাজার, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রায় ৩ হাজার, কাতার থেকে এক হাজার ৪শ ও বাহরাইন থেকে ফিরেছেন প্রায় ৮শ বাংলাদেশি শ্রমিক। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দাসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা, নানা কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বেকার হচ্ছেন।

জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা ভোরের কাগজকে বলেন, কী কারণে কাজ হারিয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে শ্রমিকরা দেশে ফিরছেন, তা খতিয়ে দেখতে হবে। সব জানার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, সমস্যার উত্তরণ ঘটাতে না পারলে ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধীরে ধীরে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির বাজারে ছন্দপতন ঘটছে। নতুন শ্রমবাজার খোলা তো দূরের কথা, পুরনো শ্রমবাজারই একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবে তাদের মতে, এশিয়ার অন্য অনেক দেশ কম শ্রমিক বিদেশে পাঠালেও রেমিট্যান্স পাচ্ছে বেশি। কিন্তু দ্বিগুণের বেশি শ্রমিক পাঠিয়েও বাংলাদেশ রেমিট্যান্স পাচ্ছে কম। অদক্ষ শ্রমিক বিদেশে গিয়ে পদে পদে হয়রানি ও শোষণের শিকার হচ্ছে। কম মজুরিতে নিয়োগ, নিচু পদে কাজ করা, এমনকি চাকরিচ্যুত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে ১৫-১৬টি দেশে জনশক্তি রপ্তানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, বাহরাইন, ওমান, সিঙ্গাপুর, জর্ডানে পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকও যাচ্ছে। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে শ্রমিক দেশে ফেরত আসা, ফ্রি ভিসার নামে গিয়ে কাজ না পাওয়া, দুবাই ও কাতারে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। সবমিলিয়ে বর্তমানে বেকার শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে কাতারের ওপর সৌদি আরবসহ প্রতিবেশী ছয়টি দেশ অবরোধ আরোপ করেছে। এতে দেশটিতে থাকা লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক এখন চাকরি হারানোর শঙ্কায় দিন গুনছেন। কাতারের অবরোধ যদি দীর্ঘায়িত হয় তাহলে আমাদের অনেক শ্রমিককে চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App