বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কার নিয়ে বিভ্রান্তি
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ১২:৫১ পিএম
বাংলাদেশের পত্রিকা পাঠকরা বুধবার এক বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোর এক তৃতীয়াংশের ডেটলাইনে গতকাল ৩১ আশ্বিন ছাপা হয়েছে। আর বাকি দৈনিকগুলোতে ছাপা হয়েছে ১ কার্তিক। কোনো প্রচার-প্রচারণা ছাড়া বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কারের কারণেই এ বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কারের মতো একটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সামান্যতম প্রচার-প্রচারণা না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। আবদুর রহিম নামে পাবনার এক কলেজ শিক্ষক গতকাল ভোরের কাগজ কার্যালয়ে ফোন করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, একেক পত্রিকা একেক তারিখ লিখছে, আমরা কোনটা অনুসরণ করব? কত কত বিষয়ে সরকার বিজ্ঞাপন বা বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে; অথচ এই বিষয়ে কিছুই করা হলো না। শুধু সরকারি ক্যালেন্ডারে ৩১ আশ্বিন লিখেই দায়িত্ব শেষ করল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়! অন্তত মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জানালেও জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হতো না। সাজেদা রহমান নামে রাজধানীর এক অভিভাবক বলেন, স্কুলের সাধারণ জ্ঞানের বইয়ে লেখা আছে আশ্বিন মাস ৩০ দিনে। আজকে বাসার পত্রিকায় দেখলাম লিখেছে ৩১ আশ্বিন। কেউ কেউ বর্ষপঞ্জি সংস্কারের কথাও বলছেন। এ অবস্থায় বাচ্চা-কাচ্চাদের এখন কোনটা শেখাব বুঝতে পারছি না। আর সংস্কার যদি করেই থাকে তাহলে ব্যাপক ঢাকডোল পিটিয়ে তা প্রচার করল না কেন?
আগে বৈশাখ থেকে ভাদ্র এই পাঁচ মাস ৩১ দিনে গণনা করা হতো। আশ্বিন থেকে চৈত্র এই সাত মাস গণনা করা হতো ৩০ দিনে। লিপইয়ারে ফাল্গুন মাস হতো ৩১ দিনে। এ কারণে শহীদ দিবস, বিজয় দিবসের মতো জাতীয় দিবসগুলোতে বাংলা ও ইংরেজি তারিখে পার্থক্য দেখা দেয়। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল ৮ ফাল্গুন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছিল ১ পৌষ। কিন্তু ইংরেজি বছরের সঙ্গে মিল রাখতে গিয়ে গত কয়েক দশক ধরে শহীদ দিবস পালিত হয় ৯ ফাল্গুন, বিজয় দিবস পালন করা হয় ২ পৌষ।
জাতীয় দিবসগুলো যে দিনে সংঘটিত হয়েছিল, সেই বাংলা তারিখ ঠিক রাখতে ২০১৫ সালে অধ্যাপক অজয় রায়কে প্রধান করে কমিটি গঠন করে বাংলা একাডেমি। কমিটির সুপারিশ মেনে ২০১৯ সালের সরকারি ছুটির তালিকায় বাংলা তারিখ সংস্কার করা হয়। নতুন বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বৈশাখ থেকে আশ্বিন বছরের প্রথম ছয় মাস গণনা করা হবে ৩১ দিনে। কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ ও চৈত্র এই পাঁচ মাস গণনা করা হবে ৩০ দিনে। আর ফাল্গুন মাস গণনা করা হবে ২৯ দিনে। তবে লিপইয়ারে ফাল্গুন মাস হবে ৩০ দিনে। ২০২০ সাল অধিবর্ষ বা লিপইয়ার হওয়ায় সে বছর ফাল্গুন মাস হবে ৩০ দিনে।
বাংলা বর্ষপঞ্জি এর আগেও দুই দফা সংস্কার হয়েছে। পঞ্চাশের দশকে জ্যোতি পদার্থবিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহার নেতৃত্বে এবং ১৯৬৩ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে এ সংস্কার হয়। মেঘনাদ সাহার সুপারিশে বৈশাখ থেকে ভাদ্র ৩১ দিন, আশ্বিন থেকে চৈত্র ৩০ দিন ছিল, অধিবর্ষে একদিন যুক্ত হতো চৈত্র মাসে।