×

জাতীয়

নার্সারিই যেখানে প্রধান পেশা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ১১:৩৬ এএম

নার্সারিই যেখানে প্রধান পেশা
নীলফামারীর ডোমারে হরিণচড়া ইউনিয়নের খানাবাড়ী গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে চারা উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবান ও স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকেই। নার্সারি থেকে নানা প্রজাতির চারা স্থানীয় বাজার ছাড়াও যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। যার কারণে গ্রামটি এখন চারা গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এ ছাড়া নার্সারি করে ওই এলাকার বেকার যুবকদের হয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। নার্সারি করে স্বাবলম্বী হওয়া ওই গ্রামের একজন হলেন মো. কসমুদ্দিন (৬৮)। চলতি বছর তিন বিঘা জমিতে তিনি চারা প্রস্তুত করেছেন। তার নার্সারিতে ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারার দৃষ্টিনন্দন সমারোহ। সেখানে মাটির বেডে চারা রোপণ, বেড প্রস্তুতের কাজও চলছে। আবার কিছু কিছু চারা রোপণের জন্য জমি তৈরি করা হচ্ছে। জমির অন্য প্রান্তে বিক্রিযোগ্য চারাও রয়েছে। কসমুদ্দিন বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নদী ভাঙনের ফলে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী থেকে বসতবাড়ি হারিয়ে প্রথমে দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ছেলেমেয়েসহ বসবাস শুরু করি। একপর্যায়ে ডোমার উপজেলার প্রয়াত বনবিভাগ কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তারের সামাজিক বনায়নের চারা উৎপাদন ও পরিচর্যার কাজে শ্রমিক হিসেবে কাজ করি। সেখানে দীর্ঘ পাঁচ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে সিদ্ধান্ত নেই নার্সারি করার। নিজের জমি না থাকায় তিন বিঘা জমি এক বছরের জন্য চুক্তি নিয়ে চারা তৈরি শুরু করি। তখন থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কসমুদ্দিন বলেন, একটি চারা তৈরি করতে খরচ হয় আড়াই থেকে তিন টাকা। আর সেই চারা পাঁচ থেকে ছয় মাসের মাথায় বিক্রি হয় ছয় থেকে আট টাকা পর্যন্ত। সার, বীজ, সেচ, পরিচর্যা ও পরিবহন খরচ বাদে ওই তিন বিঘা জমির চারা বিক্রি করে বছরে প্রায় ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। সরেজমিনে দেখা যায়, কসমুদ্দিন ছাড়াও ওই গ্রামের প্রায় চারশ’ পরিবার চারা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। একই এলাকার কৃষক আব্দুল মতিনকে (৪৫) চারা লাগার জন্য জমিতে হাল চাষ করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, নার্সারি একটি লাভজনক ব্যবসা। তাই ধান চাষ কমিয়ে দিয়ে নার্সারি করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বাজার ওঠানামা করায় ধানের আবাদ করে বারবার লোকসান গুনতে হয়, কিন্তু চারা তৈরিতে কোনো লোকসান নেই। তাই নার্সারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একই গ্রামের বর্গাচাষি সফিয়ার রহমানের স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৩৭) বলেন, এখন আর চারা নিয়ে বাজারে যেতে হয় না। নানা প্রজাতির চারা গাছ পেতে স্থানীয় পাইকার ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, পাবনা, কুড়িগ্রাম, বগুড়া ও দিনাজপুর জেলার বড় বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ এনজিওরা ট্রাকে করে নিয়ে যায় আমাদের উৎপাদিত চারা। সরকারি সহযোগিতার ব্যাপারে শফিয়ার বলেন, উপজেলা পর্যায়ের বন কর্মকর্তারা আমাদের পরামর্শসহ সহযোগিতা দিলে আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারতাম। এতে শতভাগ চারা উৎপাদন হতো। দ্বিগুণ লাভ করা যেত। উপজেলার হরিণচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম বলেন, এক সময় এই গ্রামের মানুষ ভাত পেতো না। এখন তারা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ভালো আছে। চারা উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবানের পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাও হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আবুল কাশেম আজাদ বলেন, জেলায় ৭ হাজার ৫৩৯টি ছোট বড় নার্সারি রয়েছে। জীবন রক্ষাকারী গাছ ও সামাজিক বনায়ন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নার্সারি সংখ্যা বাড়ানোর জন্য মাঠপর্যায়ে কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তারা নানা পরামর্শ দিচ্ছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App