×

জাতীয়

পাঁচ রাজাকারের ফাঁসির রায়ে মিষ্টি বিতরণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০১৯, ১০:৫৫ এএম

পাঁচ রাজাকারের ফাঁসির রায়ে মিষ্টি বিতরণ
পাঁচ রাজাকারের ফাঁসির রায়ে মিষ্টি বিতরণ
পাঁচ রাজাকারের ফাঁসির রায়ে মিষ্টি বিতরণ

আন্তর্জাতিক যুদ্ধ অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ মঙ্গলবার গাইবান্ধা সদর উপজেলার পাঁচ(৫) রাজাকারের ফাঁসির দন্ডাদেশ ঘোষণা করার খবর এলাকায় পৌছিলে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। যুদ্ধ অপরাধীদের দীর্ঘদিন পর বিচার হওয়ায় খুশি শহীদ হওয়া পরিবারের স্বজন, হামলা ও নির্যাতনের শিকার পরিবার, মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী। এলাকাবাসির দাবি, এই রায় দ্রুত কার্যকর করে এলাকার মানুষের মাঝে শান্তি ফিরিয়ে আনা হোক।

রায় ঘোষণার পর সরেজমিন দেখা যায়, গাইবান্ধা সদর উপজেলার সাহাপাড়া ইউনিয়নের নান্দিনা, দৌলতপুর, মিরপুর, সাহারবাজার, কাশদহ গ্রামের মানুষের মধ্যে খুশি আর আনন্দ। দেখা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান রাজার সাথে। তিনি বলেন, মামলার রায় হওয়ায় আমি শুধু নয় সকল মুক্তিযোদ্ধা খুশি হয়েছে। তবে রায়টি দেরিতে হওয়ায় একজন আসামি মারা যাওয়ায় তিনি তার অপরাধের শাস্তি দেখে যেতে পারেননি। অন্য অপরাধিদের গ্রেফতার পূর্বক শাস্তি দ্রুত কার্যকর দেখতে চান তিনি।

গাইবান্ধা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডিপুটি কমান্ডার গৌতম চন্দ্র মোদক বলেন, আন্তর্জাতিক যুদ্ধ অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। রায় কার্যকর হলে জাতি কলঙ্ক মুক্ত হবে এবং শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ হবে। এই রায় দ্রুত কার্যকরসহ আরও যেসব মামলা আছে, সেইসব মামলায় সকল যুদ্ধাপরাধীরও দ্রুত বিচারের দাবি জানান তিনি।

এই মামলার বাদি নুরুল ইসলাম বলেন, সাজাপ্রাপ্তরা সকলেই একাত্তুরে রাজাকার, আলবদর এবং পিস কমিটির সদস্য ছিলো। এই রাজাকাররা আমাদের গ্রামের ১৪ জন মানুষকে মেরে ফেলেছে। ৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে। তিনি আরও বলেন, এই রায়ে আমি সন্তোষ্ট এবং আন্তর্জাতিক যুদ্ধ অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। এলাকাবাসির দাবি এই রায় দ্রুত কার্যকর করা না হলে এলাকায় দন্ডপ্রাপ্তদের লোকজন আবার অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই সরকারের কাছে তাদের দাবি, এই রায় দ্রুত কার্যকর করে এলাকার মানুষের মাঝে শান্তি ফিরিয়ে আনা হোক।

মামলা সুত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে একাত্তরের ১৮ অক্টোবর পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়ে গাইবান্ধার সদর এলাকার সাহাপাড়া ইউনিয়নের নান্দিনা, দৌলতপুর, মিরপুর, সাহারবাজার, কাশদহ, বিসিক শিল্পনগরী, ভবানীপুর ও চকগয়েশপুর গ্রামের ২১ জনকে হত্যা, শতাধিক বাড়ি-ঘর লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ এবং কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষের ওপর নৃশংসভাবে হামলা চালানো হয়। মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক, ইসলাম উদ্দিন এবং নবীর হোসেনসহ সাত নিরস্ত্র মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া সাহাপাড়া ইউনিয়নের তিন থেকে চারশ হিন্দু লোককে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করে। এই ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বাদি হয়ে ৬(ছয়) জনকে আসামী করে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

এই মামলায় প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ২৫ মে আসামিদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়। পরদিন গাইবান্ধার পুলিশ রনজু মিয়াকে গ্রেফতার করে। ২৯ মে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ছয়জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্র্রতিবেদন দাখিল করে। একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর এক আসামি আজগর হোসেন খান মারা যাওয়ায় পাঁচ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ২০১৮ সালে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাসহ ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার তাদের ৫ জনের বিরুদ্ধে ফাসিঁর রায় দেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App