×

জাতীয়

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নতুন কর্মসূচি দেবে আজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ১০:১৩ এএম

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নতুন কর্মসূচি দেবে আজ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ ১০ দফা দাবিতে আজ থেকে ফের আন্দোলনে নামছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। লাগাতার আন্দোলনের ৬ দিনের মাথায় বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার জন্য আন্দোলন কর্মসূচি দুই দিন (রবিবার ও সোমবার) শিথিল রাখার পর আবারো আন্দোলন শুরুর ঘোষণা দেয়া হলো। আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র অন্তরা মাধুরী তিথি গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, আমরা আন্দোলন এখনো বন্ধ করিনি। ভর্তি পরীক্ষার জন্য শিথিল করেছিলাম। আজ সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কর্মসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে। ১০ দফা দাবি পূরণ না করে মাঠ ছাড়া হবে না বলেও জানান তিনি। এদিকে ১০ দফা দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা দুই দিনের (রবিবার ও সোমবার) জন্য আন্দোলন শিথিল করায় অনিশ্চয়তা কেটে যায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। তাদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ থাকলেও গতকাল সোমবার শান্তিপূর্ণভাবে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দুই শিফটে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হয়েছে পরীক্ষা। এদিকে আবরার হত্যার পর বুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলেও ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে হেল্প ডেস্ক খুলে সক্রিয় ছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সরেজমিনে দেখা যায়, বুয়েট শিক্ষার্থীরা ভর্তিচ্ছুদের পরীক্ষার হল চিনিয়ে দেয়া, অভিভাবকদের বসার ব্যবস্থা করা, তাদের পানীয়জলের ব্যবস্থা করে দেয়াসহ নানা সেবা দিচ্ছেন। এ সময় অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম চোখে পড়েনি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, এবার বুয়েটের ১২টি বিভাগের ১ হাজার ৬০টি আসনে ভর্তির জন্য মোট ১৬ হাজার ২৮৮ জন আবেদন করেছিলেন। তাদের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ১২ হাজার ১৬১ জন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়। যার ১০ হাজার ৭৬৩ জন প্রকৌশলের এবং ১৩৯৮ জন স্থাপত্যের। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রথম ধাপে প্রকৌশল ও স্থাপত্যের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত স্থাপত্যের বাকি ২ ঘণ্টার অঙ্কন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ২৬ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষার ফল দেয়া হবে। অন্যদিকে আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলমান পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মনে। সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেকেই বুয়েটের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। রাজশাহী থেকে মেয়েকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে এসেছেন হাফিজুর রহমান নামে এক অভিভাবক। মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগে থাকা এ অভিভাবক বলেন, বুয়েটের প্রতি আমাদের অনেক ভালো ধারণা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর কারণে বুয়েট নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। নিজের সন্তানকে যে এখানে পাঠাব, সে এখানে নিরাপদ কিনা? তাকে হলে রাখতে পারব কিনা? এ প্রশ্নগুলো কিছুটা হলেও কপালে চিন্তার ভাজ ফেলছে বলে জানান এ অভিভাবক। দিনাজপুর থেকে পরীক্ষা দিতে ছোট মেয়েকে নিয়ে এসেছেন শাহ আলম মিয়া। তিনি এর আগেও তার ছেলেকে ভর্তি পরীক্ষা দেয়াতে বুয়েটে এসেছিলেন। দুবারের পরিবেশে অনেক অমিল রয়েছে বলে জানান তিনি। এ বছর সবার চোখে শোকের ছায়া দেখছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দেয়ালে আঁকা আবরারের ছবিগুলো (গ্রাফিতি) তাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। তিনি বলেন, সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে অভিভাবকরা সর্বদাই উদ্বিগ্ন থাকে। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে খুনের ঘটনা ঘটে তখন তো চিন্তা আরো বেড়ে যায়। আমরা কার হাতে তুলে দিব তাকে, সে ওখানে নিরাপদ কিনা এসব নিয়ে ভাবতে হয়। যদিও অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন না হতে আহ্বান জানিয়েছেন বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। গতকাল সকালে বুয়েট পরীক্ষা চলাকালীন বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে আমরা কাজ করছি। আবরার হত্যার প্রতিবাদের আন্দোলন ভর্তি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো প্রভাব ফেলেনি। ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। আশা করি বুয়েট আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।’ এ সময় রবিবার ও সোমবারের জন্য আন্দোলন শিথিল রাখায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বাকি দাবিগুলো শীঘ্রই বাস্তবায়িত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপাচার্য। উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর গভীর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে শিবির তকমা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় বুয়েটসহ সারাদেশের ক্যাম্পাসগুলো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ১০ দফা দাবিতে লাগাতার আন্দোলন শুরু করে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App