×

জাতীয়

বিয়ের প্রলোভনে তরুণীকে বার বার ধর্ষণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ১০:৪৯ এএম

বিয়ের প্রলোভনে তরুণীকে বার বার ধর্ষণ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে তরুণীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বার বার ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণীর মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে।  মানিকগঞ্জের সিংগাইরে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এক কিশোরী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাগেরহাটের শরণখোলায় শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। গাজীপুরে প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণের দায়ে ২ এবং রংপুরে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। নিচে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) : উপজেলায় এক তরুণীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বার বার ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গত শনিবার গভীর রাতে ভুক্তভোগী তরুণীর মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত যুবকের নাম রিয়াজ উদ্দিন রাহাত (২৮)। সে উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের ভাটিয়ারী বালু রাস্তার রমজান আলী মেম্বার বাড়ির মো. সিরাজউদ্দৌলার ছেলে। মামলা সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারীর বাসিন্দা রিয়াজ উদ্দিন রাহাতের সঙ্গে গত ৭ বছর আগে একই এলাকার ভাটিয়ারী স্টেশন রোড মৌলভীপাড়ার কলেজছাত্রীর পরিচয় ও পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই থেকে ওই তরুণীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে বার বার শারীরিক সম্পর্ক করে রাহাত। এ বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ওই তরুণীর মা মেয়েকে বিয়ের জন্য রাহাতকে চাপ দিলে একপর্যায়ে রাহাত বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যে গত ৩০ আগস্ট সীতাকুণ্ডের ফকিরহাট এলাকায় খালার বাড়িতে যাওয়ার সময় রাহাত তাকে তুলে নিয়ে চট্টগ্রামের একটি হোটেলে ধর্ষণ করে। পরে মেয়েটি বাড়ি এসে মাকে সব খুলে বলেন। তার মা রাহাতের বাড়িতে গিয়ে ঘটনা অবগত এবং এর প্রতিকার দাবি করেন। রাহাতের পরিবার বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের আশ্বাস দিয়ে অযথা কালক্ষেপণ করতে থাকে। কিন্তু কোনো সুরাহা না হওয়ায় তিনি মামলা দায়ের করেন। সীতাকুণ্ড থানার ওসি (তদন্ত) মো. শামীম শেখ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মেয়েটিকে বিয়ের প্রলোভনে সে বার বার ধর্ষণ করেছে। কিন্তু বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে তার মা শনিবার গভীর রাতে মামলা দায়ের করলে আমরা আসামিকে গ্রেপ্তার করে কোর্ট হাজতে পাঠিয়েছি। সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) : উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের নয়াবাড়ী গ্রামে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ১৩ বছরের কিশোরী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ গতকাল রবিবার ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো বায়রা ইউনিয়নের জজবাড়ী গ্রামের মোশারফের ছেলে রবিন (২২) এবং নয়াবাড়ী গ্রামের শফি দেওয়ানের ছেলে ছালাম দেওয়ান (৩৭)। মামলার এজাহার ও গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের কাছ থেকে জানা যায়, শনিবার বিকেলে ওই কিশোরী কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। এ সময় ছালাম দেওয়ান ফুসলিয়ে তার বাড়িতে নিয়ে আটকে রাখে। পরবর্তী সময়ে রাত সাড়ে ৭টার দিকে অভিযুক্ত রবিন ও মামলার অপর আসামি বাইমাইল আমতলা গ্রামের রফিকুলের ছেলে শাহানুর (৩৫) ভিকটিমকে ছালাম দেওয়ানের বাড়ি থেকে নয়াবাড়ী গ্রামের পরিত্যক্ত একটি ছাপড়া ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ওই কিশোরীর মামা (পালিত বাবা) বাদী হয়ে ৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করে। ভিকটিমের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোরীর বাবা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় সে মামার বাড়িতে বড় হয়। এ ব্যাপারে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ২ জনকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির জন্য আদালতে এবং ভিকটিমের মেডিকেল টেস্টের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিকে গ্রেপ্তারে জোর চেষ্টা চলছে। শরণখোলা (বাগেরহাট) : উপজেলায় ৯ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। গত শনিবার রাতে মেয়েটির ফুফু বাদী হয়ে উপজেলার মালিয়া রাজাপুর গ্রামের আবুল তালুকদারের বখাটে ছেলে সাব্বিরের (২৫) বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। ভিকটিমের জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য গতকাল রবিবার দুপুরে বাগেরহাট আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার দুপুরে। মামলা সূত্রে জানা যায়, ওই দিন দুপুরে মেয়েটি গ্রামের ফুল মিয়ার বাড়ির ফ্রিজে মাছ রেখে ফিরছিল। পথে ওঁৎ পেতে থাকা সাব্বির তাকে একা পেয়ে মুখ চেপে ধরে রব্বানী মুন্সীর স-মিলের কাছে রাখা একটি ইজিবাইকে টেনে তুলে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এ সময় মেয়েটির চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে বখাটে সাব্বির পালিয়ে যায়। মামলার বাদী জানান, দুই বছর বয়সে তার ভাইঝিকে ফেলে রেখে মা চলে যায়। বাবা চট্টগ্রামে শ্রমিকের কাজ করেন। এরপর থেকে তার কাছেই বড় হয়েছে সে। এ কারণে তাকে সময় মতো স্কুলে ভর্তি করাতে পারিনি। বর্তমানে সে ৬৮ নম্বর দক্ষিণ মালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তিনি জানান, ঘটনার পর সাব্বির তাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। তারা এলাকার প্রভাশালী হওয়ায় শত অপরাধ করলেও ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। ওই পরিবারের লোকজন অনেক আগে থেকেই তাদের ওপর নানাভাবে নির্যাতন করে আসছে। তিনি প্রশাসনের কাছে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন। পুলিশ জানায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য মেয়েটিকে বাগেরহাট আদালতে পাঠানো হয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। গাজীপুর : জেলায় প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণের দায়ে ২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল রবিবার দুপুরে গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম এল বি মেছবাহ উদ্দিন আহমেদ এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আসামিদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাস করে কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলো জেলার শ্রীপুর এলাকার মৃত নূরুল ইসলামের ছেলে ফারুক (৩৩) এবং রাজেন্দ্রপুর পূর্বের টেক এলাকার মৃত সাহেদ আলীর ছেলে বাদশা মিয়া (৩২)। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিল। ওই আদালতের স্পেশাল পিপি এডভোকেট এ বি এম আফফান জানান, ২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে শ্রীপুরের মাওনা উত্তরপাড়া এলাকায় রূপালী প্রজেক্টের কাছে ওই ২ আসামিসহ আরো অজ্ঞাত ২ জন মিলে বাকপ্রতিবন্ধী শিশুকে (১২) ধর্ষণ করে। পরে শিশুটি প্রজেক্টের কেয়ারটেকারের বাড়িতে এসে কাঁদতে থাকে। কান্নার শব্দ শুনে ওই প্রজেক্টের কেয়ারটেকার নাফিউল ইসলাম তার স্ত্রীকে নিয়ে দরজা খুলে শিশুটির হাত ওড়না দিয়ে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পেয়ে হাতের বাঁধন খুলে দেন। এ সময় শিশুটির কাছে ঘটনা শুনতে চাইলে আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা ওই ২ ধর্ষককে দেখিয়ে দেয়। এ সময় অন্য ২ জন পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ধর্ষণকারী ফারুক ও বাদশা মিয়াকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে পুলিশ অভিযুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত রবিবার ওই রায় ঘোষণা করেন। রংপুর : রংপুরে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে ধর্ষককের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল রবিবার দুপুরে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ আদালতের বিচারক মিজানুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। আদালত ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর নগরীর মাহিগঞ্জ দেওয়ানটুলি এলাকার এক নারী তার ৬ বছরের মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি পার্শ¦বর্তী কাউনিয়া উপজেলার বাহাগিলি এলাকায় বেড়াতে যান। দুদিন পর ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার দিকে ওই এলাকার মহব্বত আলীর ছেলে রাসেল মিয়া (২০) শিশুটিকে পূজা বাড়িতে হাঁড়ি-পাতিল কিনে দেয়ার কথা বলে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। পরে শিশুটি কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে এলে বাড়ির সবাই ধর্ষণের বিষয়টি বুঝতে পারেন। পরে মেয়েটিকে চিকিৎসার জন্য হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় মেয়ের বাবা বাদী হয়ে কাউনিয়া থানায় রাসেলকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম তদন্ত শেষে আদালতে গত ২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর চার্জশিট দেন। সরকারপক্ষের আইনজীবী ছিলেন এডভোকেট তাজিবুর রহমান ও রবিউল ইসলাম এবং আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন মোজাহারুল ইসলাম।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App