×

জাতীয়

দেওয়ানগঞ্জে খোলা সেডঘরে চলছে পাঠদান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ০৪:৩১ পিএম

দেওয়ানগঞ্জে খোলা সেডঘরে চলছে পাঠদান
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নে চর খোলাবাড়ী এলাকার ৮৩ বছরের পুরনো একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গেল বন্যায় সম্পূর্ণভাবে যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত ১৭ জুলাই যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর থেকে গত তিন মাস ধরে অতিকষ্টে খোলাবাড়ী বাজারের খোলা শেডঘরে ও খোলা জায়গায় চলছে পাঠদান। এতে করে শিক্ষার্থীদের ঠিকমত পাঠদান নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জরুরি ভিত্তিতে পাঠদানের জন্য অস্থায়ী ঘর নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, খোলাবাড়ী বাজার সংলগ্ন তিন একর জমিতে ছিল প্রায় ৮৩ বছরের পুরনো খোলাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, খোলাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খোলাবাড়ী ইদ্রিসিয়া দারুল উলুম মাদরাসা। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২’শ ৪৩ জন শিক্ষার্থী, খোলাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪’শ ৪৪ জন শিক্ষার্থী এবং খোলাবাড়ী ইদ্রিসিয়া দারুল উলুম মাদরাসাটিতে প্রায় ২’শ ৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। খোলাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়টিই এ অঞ্চলের একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়। চারদিকে ১০কিলোমিটারের মধ্যে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। গত ১৭জুলাই বন্যা ও ভাঙনে যমুনাগর্ভে বিলীন হওয়ার পর প্রতিষ্ঠান তিনটির পাঠদান চলছে খোলাবাড়ী বাজারের খোলা শেডঘরে। তিনটি প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের সংখ্যার চাইতে ছাত্রীর সংখ্যাই বেশি। বাজারের শেডঘরগুলোতে ল্যাট্টিন ও পানীয়জরের নলকূপ না থাকায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এসব কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যালয়ের ঘর নির্মাণ করা না হলে শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এই তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত তালিকায় রাখা হলেও সেই বরাদ্দও এখনো পাওয়া যায়নি বলে উপজেলা শিক্ষা অফিস ও উপজেলা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন। খোলাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোরশেদ আলম জানান. ১৯৩৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টি ১৯৭৫ সালে বন্যা ও যমুনার ভাঙনের কারণে খোলাবাড়ী বাজারের সাথে বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয়েছিল। বর্তমানে স্থানে থাকলাম প্রায় ৫০ বছর ধরে। কিন্তু এবারের বন্যায় সম্পূর্ণরূপে যমুনাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাজারের শেডঘরে পাঠদান করতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। মেয়ের সংখ্যা বেশি হওয়ায় বেশি হওয়ায় তাদের স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি। অনেক মেয়েরা তাদের বিশেষ সময়টাতে টানা কয়েকদিন বিদ্যালয়ে আসছে না। শিক্ষকদের বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। অফিসের দাপ্তরিক কাজ চালাচ্ছি আমার বাড়িতে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো কিছুই হচ্ছে না।’ খোলাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মরিয়ম কাউছার জানান, এই বিদ্যালয়ে তিনিসহ আটজন শিক্ষিকা ও একজন শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে ৪’শ৪৪ জন। তাদের মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যাই বেশি। বিদ্যালয় ভবন যমুনাগর্ভে বিলীন হওয়ায় পাঠদানসহ বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাজারের শেডঘরে শেডঘরে পাশাপাশি তিনটি শ্রেণির পাঠদান করতে খুবই সমস্যা হয়। আমাদের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো সাড়া পাইনি।’ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আফতাব উদ্দিন জানান. নদীগর্ভে বিলীন হওয়া খোলাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্থায়ী জমি ও ঘর নির্মাণের বিষয়ে ঢাকায় প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে বাজার কমিটির সাথে কথা বলে শেডঘরে পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে।’ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আজাদুর রহমান ভূঁইয়া জানান. বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারিভাবে জমি দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। প্রতিষ্ঠান দুটির জন্য স্থানীয়ভাবেই জমি দিতে হবে এবং ঘর নির্মাণ করতে হবে। এই প্রতিষ্ঠান দুটি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত তালিকায় রয়েছে। বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কর্মসূচির কোনো বরাদ্দ এখনো পাওয়া যায়নি। ইউপি চেয়ারম্যান মমতাজ উদ্দিন জানান. ভয়াবহ বন্যায় তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ড যমুনা নদী গর্ভে বিলীণ হয়ে গেছে। অতি দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো নতুন ভাবে স্থাপন ও যমুনার ভাঙ্গন রোধের ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App