×

জাতীয়

জিসানকে ঘিরে ধূম্রজাল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ১০:১৭ এএম

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ মন্টি দুবাইয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে বলে প্রচার পেলেও এ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় পাসপোর্টে ‘আলী আকবর চৌধুরী’ নামে যে ব্যক্তি দুবাইয়ে আটক হন, তিনি আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। দুবাই রাজ পরিবারের এক সদস্যের জিম্মায় তার মুক্তি মিলেছে। আটক আলী আকবর চৌধুরী এ দেশের জিসান বলে পুলিশ দাবি করলেও এখন কোনো কোনো সূত্র দাবি করেছে ওই ব্যক্তি জিসান নয়। ওই সূত্রমতে, শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান স্ত্রী-সন্তান নিয়ে লন্ডনে বহাল আছেন। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গত রাতেও নিশ্চিত করেছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আটক হয়েছেন। ঢাকায় ক্যাসিনোকাণ্ডে নতুন করে আলোচনায় আসেন জিসান। ক্যাসিনো হোতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও গণপূর্তের একচ্ছত্র অধিপতি জি কে শামীমের ঘনিষ্ঠ তিনি। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, দুবাই পুলিশের বরাত দিয়ে আমাদের এনসিবি (ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো) জিসানের গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল। তার জামিনের ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। অবশ্য গত ৩ অক্টোবর একটি প্রেস নোট দিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (ইন্টারপোল) মহিউল ইসলাম অফিশিয়াল ট্যুরে চিলি রয়েছেন। তার অবর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুর্শেদ আলম এ প্রসঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। অবশ্য জিসান প্রসঙ্গে এর আগে মহিউল ইসলাম বলেছিলেন, দুবাই এনসিবি জিসানকে গ্রেপ্তারের পর আমাদের তা জানিয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে আইপি ফোনে যোগাযোগ করি এবং ভেরিফাই করে নিশ্চিত হই গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিই জিসান। তাকে গ্রেপ্তারের পর দুবাইয়ের জুডিশিয়াল কাস্টডিতে নেয়া হয়। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরুর কথাও জানান তিনি। এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও কথিত জিসানকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানান। ঢাকায় আন্ডারওয়ার্ল্ডে জিসানের ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, জিসানের কাছে একটি ভারতীয় পাসপোর্ট ছিল। বেশ কয়েক বছর আগেই তিনি সেটি বাতিল করে দিয়ে অন্য একটি দেশের পাসপোর্ট বহন করছেন। ঢাকায় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর আগেই তিনি দুবাই ছাড়েন। ইউরোপের একাধিক দেশ ঘুরে গত ১০ অক্টোবর তিনি আবার লন্ডনে যান। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, দুবাইয়ে ২ অক্টোবর এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর ‘আলী আকবর চৌধুরী’ নামে একটি ভারতীয় পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়। দুবাই পুলিশ ওই ব্যক্তিকে জিসান হিসেবে চিহ্নিত করে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের এনসিবি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরবর্তীতে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি বিভাগ এ সংক্রান্ত নথিপত্র ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে পাঠায়। গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারাও ওই ব্যক্তিকে জিসান হিসেবে শনাক্ত করেন। জিসানের নতুন কোনো ছবি না থাকায় তাকে শনাক্ত করতে গিয়ে ‘গণ্ডগোল’ হতে পারে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন। এদিকে দুবাইয়ে গ্রেপ্তার হওয়া ওই ব্যক্তি তিন দিন আগে জামিন পেয়েছেন। দুবাই রাজ পরিবারে এক সদস্যের জিম্মায় তার জামিন হয়েছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গত সপ্তাহে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি বিভাগ টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি দুবাই পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে। প্রসঙ্গত, নব্বই দশকের শেষের দিকে সন্ত্রাসী হিসেবে জিসানের উত্থান ঘটে। কুমিল্লায় জন্ম নেয়া জিসান ঢাকার রামপুরায় বেড়ে ওঠেন। ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শীর্ষ যে ২৩ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করে সেখানে জিসানের নাম ছিল। তার বিরুদ্ধে খুন-চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অনেক অভিযোগ ছিল। সর্বশেষ ২০০৩ সালে মালিবাগে সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় জিসানের নাম আসার পর তিনি দেশ ছাড়েন। এরপর থেকে বিদেশে অবস্থান করেই ঢাকার মতিঝিল-খিলগাঁও এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতেন জিসান। ঢাকায় তার অন্তত এক ডজন ক্যাডার রয়েছে, যারা তার নামে চাঁদাবাজি- টেন্ডারবাজি করে টাকার ভাগ তার কাছে পাঠাত। সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জিসানকে ধরতে ইন্টারপোলে রেড নোটিস পাঠানো হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App