×

মুক্তচিন্তা

ছাত্ররাজনীতিতে সুস্থধারার চর্চার গুরুত্ব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:০০ পিএম

শিক্ষাজীবন বীজ বপনের উৎকৃষ্ট সময়। এই সময় যে যেমন বীজ বপন করবে তেমন ফলাফলই পরবর্তী সময় পাবে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় একজন সুশিক্ষিত, সৎ ও যোগ্য সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে হলে তাকে তৃণমূল থেকেই আসতে হয়। ছাত্রজীবন শেখার সময়। এই সময়ে যদি কোনো ব্যক্তি রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করে তাহলে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আরো সুদৃঢ় হয়। রাজনীতির যে সঠিক পথ সে অনুসরণ করতে পারে। বর্তমানের অনেক যোগ্য নেতা বা মন্ত্রী ছাত্রজীবনে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু ছাত্ররাজনীতির বিগত কয়েক বছরের কার্যকলাপ বা পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন বেদনাদায়ক ও নিষ্ঠুর। ছাত্ররাজনীতির বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমি শঙ্কিত। কোন পথে ছাত্ররাজনীতি? এর জন্য কারা দায়ী? এসব প্রশ্নও বারবার জাগে। জানি এর সহজ উত্তর- ছাত্রলীগ। কিন্তু কেন? যে কোনো ধারাকে সুস্থধারায় নিয়ে যাওয়া সবার দায়িত্ব। ছাত্রলীগ যদি অন্যায় করে ছাত্রদলের উচিত সে পথকে সমুচিত সমালোচনা করে জনগণকে সম্পৃক্ত করে ভালো পথে যেতে বাধ্য করা। অনুরূপভাবে সব সংগঠনেরই ধারাবাহিক একই প্রক্রিয়া অনুসরণে চলা উচিত। ছাত্ররাজনীতির কর্ণধাররা কি নির্দেশ দিয়েছে মিছিল, হত্যা, খুন, টেন্ডারবাজি ছাত্র সংগঠনের প্রধান কাজ? কোথাও কি লেখা আছে কোনো সংগঠন অনিয়ম করলে তার সমাধান করা যাবে না? সেটাকে ইস্যু করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে হবে? আমি রাজনীতি করিনি, সে কারণে সাংগঠনিক তথ্য সম্পূর্ণ জানি না। তবে একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে মনে হয় এগুলোর জন্য রাজনীতি না। রাজনীতি করতে হবে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে। রাজনীতি করতে হবে সংখ্যাগরিষ্ঠের অধিকার নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার মান আশানুরূপ নয় সেক্ষেত্রে ছাত্ররাজনীতি দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিচ্ছে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা যেতে পারে। কিন্তু দল না করলে খুন, চাঁদা না দিলে রাতের আঁধারে হামলা এগুলো তো রাজনৈতিক সংস্কৃতি না। ছাত্ররাজনীতির উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। আমরা যদি ৫২-এর ভাষা আন্দোলনের দিকে তাকাই দেখি ছাত্ররাই আওয়াজ তুলেছিল ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। সেই বীজ এখনো ছাত্ররাজনীতির জন্য দিকনির্দেশনা। পরবর্তী সব আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্ররা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। আজকে যাকে আমরা বঙ্গবন্ধু নামে সম্বোধন করি তিনিও ছাত্ররাজনীতি থেকেই বঙ্গবন্ধু হয়েছেন। ছাত্ররাজনীতির সেই আলোকিত ও স্বর্ণযুগের অভাব আমি ভীষণভাবে উপলব্ধি করি। তাইতো বলছি ‘ছাত্ররাজনীতির সুদিন আসবে কোন দিন? ছাত্ররাজনীতির গুরুত্ব সবাই উপলব্ধি করে। সেই কারণে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন আছে। তবে তা নিরীহ মায়ের বুক খালি করার জন্য নয়। রাজনীতি করে ক্লাস বন্ধ করে পড়ালেখার ক্ষতি করার জন্য নয়। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবাই রাজনীতি করে তা কিন্তু নয়। তাহলে কেন রাজনীতির জন্য নিরীহ শিক্ষার্থীরা সংকটে পড়বে? কেন ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্তানকে ভর্তি করতে বাবা-মাকে ভাবতে হবে? কেন ছাত্ররাজনীতির পথ কলঙ্কিত হবে? ছাত্ররাজনীতিকে সুস্থধারায় নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব সব রাজনৈতিক দল বা নেতার রয়েছে। সুস্থধারার রাজনীতি না করায় রাজনীতি থেকে বিলীন হয়ে যাওয়া নেতার সংখ্যা কম নয়। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতিতে দলীয়প্রধানদের আরো কঠোর পদক্ষেপ আশা করি। আশা করি ছাত্র সংগঠনের নেতাদের গঠনমূলক ও দেশের জন্য রাজনীতি। কারণ কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তির জন্য রাজনীতি করা উচিত নয়। আশা করি ছাত্ররাজনীতির সুদিন আসবে।

গোপাল অধিকারী: সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী, পাবনা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App