সম্পর্কোন্নয়নে দুই দেশের গুরুত্ব
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ১০:২০ পিএম
প্রধানমন্ত্রীর বহুল আলোচিত ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন তিনটি প্রকল্প। দুই দেশের সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী ফেনী নদী থেকে ত্রিপুরার সাবরুম শহরের পানি সরবরাহে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করতে পারবে ভারত। চুক্তি ও সমঝোতাপত্র বিনিময়ের পর শেখ হাসিনা ও মোদি যৌথভাবে তিনটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এগুলো হলো- খুলনায় ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বাংলাদেশ-ভারত প্রফেশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট’, ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে ‘বিবেকানন্দ ভবন’ ও ‘বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় এলপিজি আমদানি প্রকল্প’। বিগত এক দশকে উভয় দেশের মধ্যে বিভিন্ন প্রথাগত সহযোগিতা প্রভূত পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন নতুন ও অপ্রচলিত খাত যেমন- মেরিটাইম, পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, মহাকাশ গবেষণা, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ রপ্তানি ও সাইবার সিকিউরিটি ইত্যাদি খাতে উভয় দেশ সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করেছে।
বাংলাদেশ থেকে এলপিজি সরবরাহের ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর জ্বালানি চাহিদা পূরণ অনেকাংশে সহজ হবে। শীর্ষ বৈঠকের পর ৩৮ দফা যৌথ ইশতেহার প্রকাশ করা হয়েছে দুই দেশের পক্ষ থেকে। এতে বলা হয়েছে দুই দেশের নদী কমিশনের টেকনিক্যাল কমিটিকে মনু, মহুরী, খোয়াই, গোমতী, দারিয়া, দুধকুমোর ও ভবিষ্যতে ফেনী নদীর পানি বণ্টনের চুক্তির জন্য একটা খসড়া চূড়ান্ত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যৌথ ইশতেহারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারকে চাপ দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের আহ্বানে সহমর্মিতা পোষণ করেছে ভারত। নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতেও ভারত সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়ার হতাশা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর ও দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতায় উভয় দেশ লাভবান হবে। জোরদার হবে দুই দেশের ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অবশ্য প্রতিবেশী অভিধার চেয়েও বেশি। মহান মুক্তিযুদ্ধে বন্ধুপ্রতিম ভারতীয় জনগণের ভূমিকা বাংলাদেশের মানুষকে কৃতজ্ঞতার ডোরে আবদ্ধ করেছে। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর রক্ত বহু ক্ষেত্রে একাকার হয়েছে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। রক্তের এই রাখিবন্ধন দুই প্রতিবেশী দেশের ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বকে এগিয়ে নেয়ারই তাগিদ দেয়।
বাংলাদেশ-ভারত সুসম্পর্কের মধ্যে দুই দেশের প্রায় দেড়শ কোটি মানুষের কল্যাণ নিহিত। ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবেও আবির্ভূত হওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশও দ্রুত অগ্রগতির পথে পা বাড়ানোর কৃতিত্ব দেখিয়েছে। দুই দেশের সম্ভাবনা এখন সারা বিশ্বের আলোচিত বিষয়। সাফল্যের এই হাতছানির পাশাপাশি বিভেদকামী শক্তি ও জঙ্গিবাদের হুমকি দুই দেশের ওপরই বিষনিশ্বাস ফেলার চেষ্টা করছে। আয়তনে ও জনসংখ্যায় ভারত অনেক বড় দেশ হলেও তার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য বাংলাদেশের সমর্থন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। একইভাবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ভারতের সমর্থনও একটি কাম্য বিষয়। আশা করি, বাংলাদেশ এবং ভারত যেসব চুক্তি করেছে তা ভবিষ্যতে আরো গতিশীল হবে। সম্পর্কোন্নয়নের জন্য উভয় দেশকে সদিচ্ছা, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
সহসভাপতি, এফবিসিসিআই।