×

জাতীয়

মিজানের প্লেবয় জীবন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ১০:৪৬ এএম

মিজানের প্লেবয় জীবন
অনলাইন ক্যাসিনোর মূলহোতা মাফিয়া ডন সেলিম প্রধানের মতোই প্লেবয় জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন হাবিবুর রহমান মিজান। রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় ছিল তার একাধিক বান্ধবী। ক্যাসিনো, চাঁদাবাজি ও মাদক থেকে উপার্জিত অবৈধ টাকা এসব বান্ধবীর পেছনে খরচ করতেন তিনি। আটকের সময় শ্রীমঙ্গলের বাসাতেও বান্ধবীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। এ সময় নিজের পরিচয় অস্বীকার করাসহ অসংলগ্ন আচরণও করেন ঢাকা উত্তরের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের এ কাউন্সিলর। পরে সময় পার হলে ধীরে-ধীরে সবকিছু স্বীকার করেন মিজান। জানান, মোহাম্মপুরের কয়েকটি বাসায় ক্যাসিনো বা জুয়া চালালেও চলতি দফায় শুদ্ধি অভিযান শুরু হলে সেগুলো বন্ধ করে দেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে গতকাল শনিবার এসব তথ্য জানা গেছে। গতকাল শনিবার তাকে আদালতে হাজির করে সিআইডি পরিদর্শক গিয়াস উদ্দিন মানিলন্ডারিং আইনে তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। ঢাকা মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসি ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গতকালই র‌্যাব-২ বাদী হয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা করে। মামলা নম্বর ৩১। র‌্যাব-২ এর সিইও লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, মিজানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গলে একটি অস্ত্র মামলা ও রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা। তদন্তসংশ্লিষ্ট ও ৩২নং ওয়ার্ড এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাউন্সিলর মিজানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে জমি দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ জেনেভা ক্যাম্পের মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ অনেক দিনের। এ ছাড়াও অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনাকারীদের সঙ্গে মিজানের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে। এক সময় যুবলীগের রাজনীতির এক শীর্ষ নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরেই তার উঠে আসা। অভিযান সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গলে বান্ধবীর বাসাতেই আশ্রয় নিয়েছিলেন মিজান। বিবাহিত এ বান্ধবীর সাবেক স্বামীর সঙ্গে বন্ধু থাকাকালীনই তার স্ত্রীর সঙ্গে মিজানের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সাত বছর আগে ওই স্বামী মারা যান। এরপর তার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক আরো গাঢ় হয়। ওই বান্ধবীর একটি বাড়ি ছিল মোহাম্মদপুর এলাকায়। সে বাড়িটি একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিকে দিয়ে দেয়ার পর থেকে শ্রীমঙ্গলে গিয়ে থাকতেন ওই নারী। চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গ্রেপ্তার এড়াতে হয়তো সেখান থেকেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন মিজান। একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে গত বুধবার ৫৫ লাখ ও পরের দিন বৃহস্পতিবার ১৩ লাখসহ মোট ৬৮ লাখ টাকা তুলেছিলেন। তবে সেই টাকা কোথায় রেখেছেন সেটি স্বীকার করেননি। জিজ্ঞাসাবাদে ধীরে ধীরে সব স্বীকার করেন তিনি। বেরিয়ে আসে তার একাধিক বান্ধবীর কথা। উপার্জিত টাকা দেদারসে বান্ধবীদের পেছনে খরচের বিষয়টি। এক নবীনা বান্ধবীকে মোহাম্মদপুরে ফ্ল্যাটও কিনে দিয়েছিলেন তিনি। বিষয়গুলো তার পরিবারের সদস্যরাও জানতেন। এ ছাড়াও মোহাম্মদপুর এলাকায় ফ্ল্যাটভিত্তিক ক্যাসিনো চালাতেন তিনি। তবে অভিযান শুরুর পর বন্ধ করে দেন বলে দাবি করেন তিনি। তবে গত ১৫ বছর ধরে মিজানের নিজস্ব কোনো ব্যবসা নেই। কাউন্সিলর হিসেবে যে সম্মানী ৩৬ হাজার টাকা পান সেটিই তার একমাত্র আয়ের উৎস বলে দাবি তার। যদিও জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের অভিযোগ, কাউন্সিলর মিজান জেনেভা ক্যাম্পের মাদক ব্যবসা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করত। মর্তুজা ও জিলানীসহ বিভিন্ন লোক দিয়ে ক্যাম্পের মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দৈনিক ৩০ হাজার টাকা নিতেন মিজান। টোল মার্কেটেরও নিয়ন্ত্রকও ছিলেন মিজান। প্রায় ২৫০টি দোকান থেকে নিয়মিত বিদ্যুতের টাকা তোলা হতো। প্রতিমাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় ছিল এ থেকে। কিছুদিন আগে বিদ্যুৎ নিয়ে জেনেভা ক্যাম্পে পুলিশ ও বিদ্যুৎ বিভাগের লোকদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার নেপথ্যেও কলকাঠি নাড়েন মিজান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App