×

মুক্তচিন্তা

ব্যাংকে শৃঙ্খলা ফেরাতে সদিচ্ছা জরুরি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ১০:১৮ পিএম

ব্যাংক পরিচালনায় অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, অনিয়ম-দুর্নীতি, মন্দঋণ বৃদ্ধি- সব মিলিয়ে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে ব্যাংকিং খাতে। ফলে আর্থিক খাতে ঝুঁকি বাড়ছে। যা দেশের সার্বিক অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ব্যাংকিং সংস্কার কমিশন গঠন করার দাবি জানিয়েছেন দেশের বরেণ্য প্রশাসক ও অর্থনীতিবিদরা। গত শনিবার সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে ব্যাংক সংস্কারে ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ যে পর্যায়ে আছে, তা চিন্তাকে অতিক্রম করে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কিছু পদক্ষেপ সর্বসাম্প্রতিককালে নেয়া হয়েছে- সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে, ঋণের সুদ হার হ্রাসের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু মূল সময়গুলো অধরাই রয়ে গেছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে কেবল আমানতকারী বা ব্যবসায়ীরাই ব্যাংকবিমুখ হবেন না, উৎপাদন, বিদেশি বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এখনই সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। এমতাবস্থায় সুজনের সুপারিশগুলো বিবেচনায় আনা যেতে পারে। সংস্থাটি বলছে, তিন বছরের জন্য একটি খেলাপি ঋণ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে প্রত্যেক ব্যাংকের শীর্ষ ১০ জন ঋণখেলাপিকে চূড়ান্ত বিচারে দ্রুত শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা, ব্যাংকিং খাতের জন্য আলাদাভাবে ন্যায়পাল নিয়োগের ব্যবস্থা করা, মন্দঋণ আদায়ের জন্য ‘ডেট রিকভারি এজেন্সি’ গঠন করা, অর্থঋণ আদালতে কিংবা ট্রাইব্যুনালে কোনো ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায় হলে বন্ধকি সম্পত্তি নিলাম করার জন্য আবারো মামলা করার নিয়ম বাতিল করা, প্রতিটি ব্যাংকের শীর্ষ ১০টি ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের নাম মন্দঋণের জন্য এক বছরের বেশি সময়ের জন্য তালিকাভুক্ত হলে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর কি-পার্সনকে গ্রেপ্তার করার বিধান করা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে বাতিল করা, রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের কয়েকটি ব্যাংককে ‘মার্জারের’ মাধ্যমে বড় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে একীভূত করার ব্যবস্থা করা, ব্যাংকিং খাত থেকে খুব বড় ঋণ ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়া বন্ধ করা, ব্যাংক মালিক ও ব্যাংকের পরিচালকদের ‘ইনসাইডার লেন্ডিং’ করা এবং অবিলম্বে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাংকিং সংস্কার কমিশন গঠন করা। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবগুলো খুবই জরুরি- সন্দেহ নেই। এগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন হলে নিশ্চয় ব্যাংকিং খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হবে। বাংলাদেশ মধ্য-আয়ের দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে; স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য বিবেচিত হয়েছে। এর সঙ্গে আরো যোগ করা যেতে পারে বর্তমান সময় টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের সময়। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে এবং এই ত্রিবিধ বিবেচনাকে সামনে রেখে ব্যাংকিং খাতকে আগামীর দায়িত্ব পালন করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App