×

মুক্তচিন্তা

দয়া করে মেধা বাঁচান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০১৯, ১২:০১ পিএম

শহর পরিচ্ছন্ন, মশা নিধন অভিযান, জুয়ার আখড়া ধোলাই-সাফ পদক্ষেপ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া... ইত্যাদি বিষয়ে বর্তমান সরকারপ্রধানের একের পর এক পদক্ষেপ আশা জাগানিয়া হয়ে উঠছিল; ঘোর অন্ধকারে জ্বলে ওঠা আলোর মতো; এমন সময়ে এ কোন অন্ধকার গ্রাস করছে আলোকিত প্রাণ? কোন অশুভ মূর্তি দুমড়ে-মুচড়ে আঘাতে আঘাতে ছোপ ছোপ রক্তাক্ত করে দিচ্ছে উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে? কোন দানবরা বিনাশ করছে মেধাকে?

আবরারের ওপর অকথ্য নির্যাতন কেবল একজন ছাত্রের ওপরে নয়; এই অত্যাচার সরাসরি মেধার ওপর। মেধার বিনাশ ঘটাচ্ছে যারা- দল মত গোত্র, দেশ, জাতি, নির্বিশেষে তারা মানুষ শব্দের আওতায় পড়ে না। ‘মানুষ’ শব্দটি সহজ কথা নয়। মানুষ হওয়ার জন্য যাদের হাতিয়ার হওয়ার কথা কলম, তাদের হাতে অস্ত্র-লাঠিসোটা তো অন্য কোনো গ্রহ থেকে হাজির হচ্ছে না বা অলৌকিকভাবে পড়ছে না! দেশের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ছাত্র সংগঠনের ওপর নির্ভার হয়ে আছে অনেকাংশে। এ তারই কুফল! কিছু উগ্র ছাত্ররাজনীতিকের কারণে দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন এবং হল বা হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতিটি ক্ষণ প্রায়ই হুমকির মুখে। বাবা-মায়ের কোল ছেড়ে পড়তে আসা মেধাবী শিক্ষার্থীকে কোনো না কোনো দলে যুক্ত হওয়ার জন্য কঠিনভাবে চাপ দেয়া হয়; মানসিক প্রেসার ও শারীরিক নির্যাতন নীরবে সহ্য করতে হয় তাকে।

অস্বীকার করার নয়- জাতির স্বার্থেই সুষ্ঠু ছাত্ররাজনীতি টিকিয়ে রাখা দরকার; কেননা জাতি এ স্তর থেকে ভবিষ্যতে তুখোড় রাজনৈতিক নেতা পাবে। কিন্তু সেটা এখনকার পরিস্থিতিতে অবশ্যই সম্ভব নয় ততটা। ছাত্ররাজনীতির সোনালি অধ্যায় এখন ইতিহাস মাত্র। সময়ের আবর্তে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য খণ্ড-বিখণ্ড হয়েছে, বিভক্তি এসেছে চেতনায়। জাতীয় লক্ষ্যও অনেক সময় ম্রিয়মাণ হয়েছে। যুগ ও সভ্যতার পরিবর্তনে সমাজের মানুষের মূল্যবোধেরও পরিবর্তন হয়; কিন্তু সহনশীলতা, আইনের শাসন ও সুশৃঙ্খল পরিবেশের অভাবে বাঙালি জাতির মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে।

আবার এভাবেও বলা যায়- মূল্যবোধের অভাবে সহনশীলতা, আইনের শাসন ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ দিন দিন হারাতে বসেছে। একটা সমাজের মানুষের শিক্ষা, সংস্কৃতি, চিন্তা, চেতনা, বিশ্বাস, আচরণ- এর ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে থাকে সুস্থ দেশের মেরুদণ্ড। অথচ আজকের দিনে বিষের মতো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে- অন্যায়-অনাচার, দলাদলি, রক্তপাত ইত্যাদি জঘন্য কার্যকলাপ; আর এসব নোংরা রাজনীতিতে ছাত্রদের তারুণ্যকে লুফে নিয়ে তার অপব্যবহার করছে কতিপয় স্বার্থান্বেষী নষ্ট প্রবৃত্তির ব্যক্তি। যাদের কলঙ্কে কলুষিত হচ্ছে পুরো রাজনৈতিক দল।

কিছু সুবিধাবাদীর কারণে সরকারের ভালো কাজের উদ্যোগ ব্যাহত হচ্ছে এটা প্রতীয়মান। জাতীয় সংসদের হুইপ ক্যাসিনো অভিযানের বিরুদ্ধে কথা তুলেছেন- কারা দেয় খেলোয়াড়দের টাকা? এতে নিশ্চয়ই সরকারকে পরোক্ষভাবে হেয় করা হয়! ঠিক তেমনি আবরার হত্যাকারীদের বাঁচানোর ষড়যন্ত্রে নামবে কেউ কেউ নিজেদের স্বার্থ-উদ্দেশ্যে। এহেন ধৃষ্টতা রুখে দিতে সরকার প্রধানকে বিনীত অনুরোধ করছি। অপরাধীরা কোন রাজনৈতিক দলের সেটাকে প্রাধান্য না দিয়ে অপরাধীকে ‘অপরাধী’ হিসেবে দেখুন দয়া করে। এবং ভবিষ্যতের মেধাগুলোকে নিরাপত্তা দিন।

কবি ও লেখক, সাতক্ষীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App