×

মুক্তচিন্তা

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পিত ভাবনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:৫০ পিএম

আজ আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আবহমান কাল ধরে বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হয়ে আসছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, নদী ভাঙন, শৈত্যপ্রবাহ, খরা, অগ্নিকাণ্ড, জলাবদ্ধতা, পাহাড়ধস, লবণাক্ততা ইত্যাদির কারণে প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো দুর্যোগের শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, অপরিকল্পিত নগরায়ন, প্রকৃতিতে মানুষের অপরিকল্পিত হস্তক্ষেপ, নদী শাসন ইত্যাদির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানা প্রভাবজনিত কারণে দুর্যোগে দেশের বিপদাপন্নতা কয়েকগুণ বেড়েছে।

দুর্যোগের ঝুঁকি নির্ধারণ এবং দুর্যোগ প্রশমনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, তবে ব্যাপক পূর্ব প্রস্তুতি ও জনগোষ্ঠীর মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। এগুলো বিবেচনা করেই United Nations System for Disaster Risk Reduction (UNDRR)- এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় প্রতি বছর ১৩ অক্টোবর দেশব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস’ উদযাপন করে আসছে। এ বছর (২০১৯) UNDRR কর্তৃক নির্ধারিত ‘Build to Last’-এর আলোকে বাংলায় প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘নিয়ম মেনে অবকাঠামো গড়ি, জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি হ্রাস করি’।

দেশে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগের কারণে বিগত ১০০ বছরে ক্ষতি হয়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকার সম্পদ। বিবিএস ২০১৫-এর এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ২ কোটি ৪০ লাখ ৪ হাজার ৩৬৭ জন দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় বসবাস করে। এই দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ১৮ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। এই ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে, দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষের জীবন, ঘরবাড়ি ও সম্পদ কতটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দেশে প্রতি বছর বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগে মারা যাচ্ছে মানুষ, হারিয়ে যাচ্ছে সম্পদ, বাড়ছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জীবনের অনিশ্চয়তা। প্রকৃতির কাছে অসহায় মানুষগুলোর জীবন ও সম্পদ রক্ষার যেটুকু পূর্ব প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। শুধু সঠিক সময়ে সঠিক প্রস্তুতি দ্বারাই কমিয়ে আনা যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, লাঘব করা যায় অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট। এ জন্য প্রয়োজন নিয়ম মেনে অবকাঠামো গড়ে, জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি হ্রাস করা। বিশ্বে দুর্যোগে সাড়া প্রদান, সক্ষমতা ও দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস কার্যক্রমের গ্রহণযোগ্যতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেলেও কার্যকর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ সমন্বয় কমিটি এবং স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কমিটি গঠন করেছে। কমিটিগুলো নিয়মিত বৈঠকে মিলিত হয়ে দুর্যোগ প্রশমনের উপায় উদ্ভাবনে সচেষ্ট রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে কখনো প্রতিহত করা সম্ভব নয়। কিন্তু পূর্ব থেকেই যদি দুর্যোগকে প্রশমনের জন্য তৃণমূল পর্যায় থেকে নিরাপদ অবকাঠামো গড়ে তোলার বাস্তব সঙ্গত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তাহলে এসব দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে- ১. দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি নিরসনে জনগণের পূর্ব প্রস্তুতি ও করণীয় সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার নিশ্চিত করা; ২. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তহবিল গঠন করা; ৩. বহুমুখী নিরাপদ আবাসন ও আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ; ৪. আবহাওয়া পূর্বাভাস দ্রুত ও আধুনিকীকরণ করা; ৫. বাড়ির বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ নিরাপদ ও সতর্কভাবে স্থাপন করা; ৬. গাছপালা ও বনাঞ্চল উজাড় বন্ধ করা। সর্বোপরি দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে, দুর্যোগ সহনীয় নিরাপদ অবকাঠামো গড়তে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে।

সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App