×

মুক্তচিন্তা

রিশা হত্যা মামলার রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:৪৩ পিএম

তিন বছর আগে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করার অভিযোগে একমাত্র আসামি ওবায়দুল হকের ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ বৃহস্পতিবার আসামির উপস্থিতিতে আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি আসামি ওবায়দুল হককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রায়ে রিশার পরিবার স্বস্তি প্রকাশ করেছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরা আদালত প্রাঙ্গণে আনন্দ প্রকাশ করে। আমরা মনে করি, এ ধরনের বিচার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উদাহারণ হিসেবে বিবেচিত হবে। ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট দুপুরে স্কুলের সামনে ফুটব্রিজে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। চার দিন পর হাসপাতালে মারা যায় ১৪ বছর বয়সী ওই কিশোরী। হামলার দিনই রিশার মা তানিয়া রমনা থানায় হত্যাচেষ্টা ও গুরুতর আঘাতের অভিযোগে মামলা করেন। রিশা মারা যাওয়ার পর এটি হত্যা মামলায় পরিণত হয়। তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর ওবায়দুলকে একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। রিশার চার সহপাঠীসহ ২৬ জনকে সাক্ষী করা হয় সেখানে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, রিশার মা তানিয়া ওই হত্যাকাণ্ডের ৫-৬ মাস আগে রিশাকে নিয়ে বৈশাখী টেইলার্সে কাপড় সেলাই করাতে যান। এরপর দোকানের রসিদের কপি থেকে ফোন নম্বর নিয়ে দোকানের কর্মচারী ওবায়দুল ফোনে রিশাকে বিরক্ত করতে থাকেন। রিশা প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওবায়দুল তাকে ছুরি মেরে হত্যা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণ বলা হয়, ভালোবাসার নামে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো ন্যক্কারজনক; ভয়ঙ্কর অন্যায়। এটা যেন ভয়ঙ্কর রূপ না নেয়। ভবিষ্যতে কেউ যেন এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস না পায়, সেজন্য আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত বলে বিচারক মনে করেন। তাই আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হলো। এই রায় রাষ্ট্র ও সমাজে আইনের শাসনকে এগিয়ে নেবে। দ্রুততম সময়ে রায়টি কার্যকর হলে বখাটের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে। আমরা দেখছি, নারী নির্যাতন সংক্রান্ত আইনে কঠোর শাস্তির বিধান করা হয়েছে। সরকার বখাটেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তারপরও কেন বখাটের দৌরাত্ম্য বন্ধ হচ্ছে না- এটাই প্রশ্ন। প্রথমত, আইন থাকলেই হবে না, আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আশার কথা রিশা হত্যার রায় দ্রুত সম্পন্ন হয়েছে। এই জাতীয় অন্য রায়গুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে। নারী উত্ত্যক্তকারী, নির্যাতনকারী দুর্বৃত্তদের পরিচয় যাই থাক, তাদের কঠোর শাস্তির দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি এলাকায়, বিশেষভাবে মেয়েদের স্কুলকে কেন্দ্র করে শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকার জনগণের সমন্বয়ে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। পরিবারের অভিভাবকরা যদি তাদের সন্তানদের সততা, নৈতিকতার শিক্ষা দেন এবং সেভাবে কঠোর অনুশাসনের মধ্যে গড়ে তোলেন, তবে ওই সন্তানের বখাটে, সন্ত্রাসী হওয়ার সম্ভাবনা কম। পাশাপাশি সমাজপতি ও রাজনৈতিক নেতৃত্বেরও নির্মোহ ভূমিকা প্রয়োজন। তাদের কাছে যেন কোনো সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত প্রশ্রয়-পৃষ্ঠপোষকতা না পায়- সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App