×

জাতীয়

টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে রেলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন খালেদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০১৯, ১০:৫০ এএম

টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে রেলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন খালেদ
২০১৪ সালে ঢাকা মহানগর যুবলীগের (দক্ষিণ) সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ওরফে ক্যাসিনো খালেদ রেল সেক্টরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। রেলের পূর্ব জোন সদর দপ্তর, চট্টগ্রাম, পশ্চিম জোনের সদর দপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় সদর দপ্তর ঢাকা, পাকশী এবং লালমনিরহাটসহ রেলের সবগুলো দপ্তরেই খালেদ তার যুবলীগ নামধারী ক্যাডারদের ব্যবহার করে চাঁদাবাজি ও সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে যুবলীগ নেতা খালেদ ছিল এক আতঙ্কের নাম। তার ইশারা ছাড়া স্ক্রাব বিক্রি, ক্যাটারিং সার্ভিস (খাবার গাড়ি পরিচালনা), বেসরকারি পর্যায়ে রেল পরিচালনা লিজ দেয়া এবং যে কোনো কাজের টেন্ডার রেলের কর্মকর্তারা বিক্রি করতে পারতেন না। কথা না শোনায় অনেক কর্মকর্তা খালেদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর রেলের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে। রেলের প্রথম শ্রেণির এক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, কমলাপুর অফিসের সব ধরনের কাজের টেন্ডার খালেদের পক্ষে তার ছোট ভাই মারুফ এবং মাজহার নিয়ন্ত্রণ করতেন। খালেদের পছন্দের ঠিকাদারদেরই টেন্ডারের কাজ দিতে হতো। কোনো কর্মকর্তা এতে রাজি না হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বাসায় পরিবারের সদস্যদের সামনেই অস্ত্র দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হতো। খালেদের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুধু ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল রাজশাহী জোনের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন খালেদের ক্যাডার যুবলীগ নেতা রমজান আলী ও শামীম। আর পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রাম নিয়ন্ত্রণ করতেন সাবেক যুবদল নেতা শাহ আলম ও বাবর। চট্টগ্রামের আইস ফ্যাক্টরি রোডে কয়েকশ কোটি টাকা মূল্যের রেলওয়ের ৫ একর জায়গা দখল করে সুপার মার্কেট নির্মাণের চেষ্টা চালান তারা। এ ছাড়া রেলওয়ের পূর্ব জোন সদর দপ্তর, চট্টগ্রাম, পশ্চিম জোনের সদর দপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় সদর দপ্তর, পাকশী এবং লালমনিরহাটসহ সব রেলের দপ্তরে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নিয়ে গঠিত যুবলীগ নামধারী খালেদের ক্যাডাররা দাপিয়ে বেড়াত। রেলওয়ে অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ২০১৪-১৫ সালে নিজের পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেয়ার জন্য ‘লিমিটেড টেন্ডারিং ম্যাথডে (এলটিএম)’ নিজের পছন্দের কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম তালিকাভুক্ত করে সব কাজ ভাগাভাগি কারার নিয়ম চালুর চেষ্টা চালান। কিন্তু কিছু সাহসী কর্মকর্তার কারণে তা সফল হয়নি। এরপর খালেদ আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। খালেদের প্রভাব ও ওপর মহলের ফোনের কারণে সাবেক রেলমন্ত্রীও অসহায় ছিলেন। ওই সময় রেলওয়ে পূর্ব ও পশ্চিম জোনের ৭ জন প্রকৌশলীকে খালেদ মাহমুদের কথা না শোনায় প্রথমে নাজেহাল ও পরে বদলি করানো হয়। খালেদের ইচ্ছার বাইরে যাওয়া ঢাকায় রেলওয়ে বিভাগীয় বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে তাদের পরিবারের সামনেই অস্ত্র ঠেকিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। একজনের পায়ুপথে পিস্তল ঢুকিয়ে দেয়া হয়। জানা গেছে, চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে চিফ কন্ট্রোলার অফ স্টোরর্স (সিসিএস) অফিসের মাধ্যমে রেলওয়ের সব স্পেয়ার পার্স ক্রয় করা হতো। খালেদ নিজেই রেলওয়ের লোকমোটিভ, যাত্রীবাহী ও মালবাহী কোচের কয়েকশ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ সরবরাহের কাজ নেন। অনেক যন্ত্রাংশ সরবরাহ না করেই ‘বুঝে পেয়েছি’ বলে রেলের কর্মকর্তাদের লিখে দিতে বাধ্য করেন। কিছু দিন আগে খালেদের ভয়ভীতি উপেক্ষা করে নতুন একটি প্রতিষ্ঠান কমলাপুর থেকে রেলের স্ক্রাবের (ওয়াগন, লোকমোটিভ পুরনো লোহা) একটি দরপত্রে অংশ নেয়। এর ফলে সরকারের সাড়ে তিন কোটি টাকা বেশি আয় হয়। খালেদ টেন্ডার না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে আদালতে মামলা করান। তবে সরকারের রাজস্ব বেশি হওয়ায় আদালত খালেদের পক্ষের মামলা খারিজ করে দেয়। রেলওয়ে ঢাকার একাধিক কর্মকর্তা জানান, টেন্ডারবাজির মধ্যেই খালেদ সীমাবদ্ধ ছিলেন না। রেলের জমি দখল করে মার্কেট ও ক্লাব করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শাজাহানপুর রেল কলোনিতে রেলের জায়গা দখল করে মার্কেট করার অভিযোগ রয়েছে। খালেদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওই মার্কেট করা হয়। হালিশহরে রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির পুকুরের ৩১ একর জমি এবং রেক্টর ও এডিশনাল রেক্টরের বাংলো লিজ দেখিয়ে খালেদ দখল করে নেন। এসব প্রসঙ্গে রেল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) খন্দকার শহীদুল ইসলাম বলেন, রেলওয়ের কর্মকর্তারা চাইলেও জীবনের ভয়ে অনেক সময় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারেন না। তবে শাজাহানপুরে রেলের জায়গা অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চলছে। এ ছাড়া সারাদেশে রেলে জমি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান শুরু করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App