×

সাময়িকী

সন্ধ্যারানীর কল্কাপাড় শাড়ি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০১৯, ০৬:৩৬ পিএম

সন্ধ্যারানীর কল্কাপাড় শাড়ি

চোখের উপর তুলতুলে নরম হাতের ছোঁয়া পেয়ে সন্ধ্যারানীর ঘুমটা কেটে যায়। খপ করে হাতটা ধরতেই খিলখিল করে হেসে ওঠে ছোট্ট মানুষটা। ছাড়া পাওয়ার জন্য প্রাণপণে হাত পা ছোড়াছুড়ি করে। : এইটা কে রে? : বলো তো কে বুড়ি ঠাম্মা! : এইটা আমার টুবাইমণি না? একটু ছাড়া পেতেই ধুপধাপ শব্দ করে পালিয়ে যায় টুবাই। সন্ধ্যারানীকে টুবাই বুড়ি ঠাম্মা বলে ডাকে। বাবার ঠাকুমার জন্য অনেক ভেবেও অন্য কোনো নাম খুঁজে পায়নি ও। এই বুড়ি ডাকটা সন্ধ্যারানীর খুব প্রিয়। তার বাবাও তাকে এই নামে ডাকতেন। টুবাইরা চলে যাবে। এই ডাকটা সাথে নিয়ে সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে কোনো একটা দেশে চলে যাবে ওরা। আবার কবে কখন কেউ তাকে ঐ নামে ডাকবে সে দুরাশা তিনি আর করেন না। সুযোগ পেলেই টুবাইকে পাশে শুইয়ে গল্প করেন তিনি। : ও দাদান, তোমরা কোন দেশে যেন যাচ্ছো? বারবার এক প্রশ্নের উত্তর দিতে হলেও টুবাই প্রতিবারই খুব আগ্রহ নিয়ে কথা বলে। বড়দের মতো হাত নেড়ে নেড়ে গল্প শোনায় বুড়ো মানুষটিকে। : উফ! কতবার বলেছি যে আমরা কানাডায় যাচ্ছি, কানাডায়। : হা ভগবান! তোরা শেষকালে ফিরিঙ্গির দেশে যাইতেছিস দাদান! আমার কথা কি ভুইলা যাইবি? : তুমিও চলো না আমাদের সঙ্গে? : আমারে কেমনে নিবি! টিকেট কাটছস? : বাবাকে বললেই টিকেট করবে! : তোরা কি প্লেইনে যাবি? আমার প্লেইন খুব ভয় করে। : উফ! তুমি এত বোকা কেন বুড়ি ঠাম্মা? এমন সময় মা এসে ডাকাডাকি করলে টুবাই একদৌড়ে চলে যায়। আর গল্পটা ওখানেই থেমে যায়। সন্ধ্যারানী লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। এ মাসেই যাবার কথা ছিল ওদের। বনির বিয়ের জন্য যাওয়া কিছুটা পিছিয়েছে। আর একমাস পর টুবাইকে আর পাওয়া যাবে না। যত সময় ঘনাচ্ছে ততই মন খারাপ হচ্ছে সন্ধ্যারানীর। রাগও লাগছে। কী দরকার বাপু বাপ-দাদার ঘরবাড়ি ছেড়ে অত দূরদেশে যাবার? সুখে থাকতে ভূতে কিলাচ্ছে এদেরকে। এই বংশের ছেলেপুলের বোধ হয় এটাই নিয়তি, নিজ দেশে এদের ঠাঁই নেই। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভীনদেশের কথা ভাবেন সন্ধ্যারানী। চোখ বুঁজলে বরফে ঢাকা টালি দেয়া বাড়িঘর দেখা যায়। বরফের পাহাড়ে টুবাই ছোটাছুটি করছে। ওর বাবামা ওকে হাত নেড়ে ডাকছে। একটু পর সব গুলিয়ে যায়। ঝেঁপে বৃষ্টি নামে, রংধনু ওঠে আকাশে। ঠিক বাংলাদেশের আকাশে যেমন দেখা যেতো। তারপর একটা নদীর দৃশ্য ভেসে ওঠে। এই নদী দেখে সন্ধ্যারানীর বাবা বলতেন- এর নামেই তোর নাম রাখছি রে বুড়ি! বেচারাম দেউড়ি থেকে সদরঘাটের কাছাকাছি এলে ধীরে ধীরে নদীটা দৃশ্যমান হতো। বাবা আঙুল তুলে বলতেন- ওই দ্যাখা যায় বুড়িগঙ্গা! সেই বুড়িগঙ্গার ধারে হাওয়া খেতে খেতে বিকেলটা টুপ করে ফুরিয়ে যায়। ঘুম ভেঙে ধড়মড় করে উঠে বসেন সন্ধ্যারানী। লীলা তাকে রোজকার মতো বারান্দায় দোলচেয়ারে বসিয়ে দিয়ে যায়। চেয়ারে বসে সন্ধ্যারানী চশমার কাঁচ ঘষে ঘষে পরিষ্কার করেন। বাতাসে বার্জার পেইন্টের ঘ্রাণ। দো-মহলা বাড়ির উঠোন জুড়ে লাল নীল মরিচ বাতির ঝিকমিক। সে বাতি নিজের চোখে দেখা হয়নি, লীলার মুখে শুনেছেন। লীলা দিনে যতবার তার ঘরে আসে কয়েকবার করে বলে-ঠাম্মী, বনি দিদির বর কিন্তু হেব্বি দেখতে! বনি মানে বহ্নিশিখা সাহা সন্ধ্যারানীর নাতনি, সুদীপের মেয়ে। ওরই বিয়ে। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। বিদেশে পিএইচডি করছে আমেরিকায়। বনির ঠাকুমার সাথে দেখা করতে সেও এসেছিল। সন্ধ্যারানীর চশমা সেদিন দোকান থেকে সারাই হয়ে আসেনি। তাই শুধু হাত দিয়ে ছুঁয়ে মুখের আদলটা বুঝতে হয়েছে। মনে হলো লীলা ভুল বলেনি, ছেলে সত্যিই সুদর্শন। ওর ভাষায় ‘সিনামার নায়ক’! সিনেমার নায়ক বললে অবশ্য সন্ধ্যারানীর চিরকাল একজনকেই মনে পড়ে। সেই বড় বড় চোখ, রোদে পোড়া তামাটে গায়ের রঙ, দীঘল গড়ন। তার পরলোকগত স্বামী সমীর সাহা সুপুরুষ ছিলেন বটে। হবু নাতজামাইকে আশীর্বাদ করার সময় সেই মানুষটার কথা মনে পড়ছিল। সন্ধ্যারানীর নিজের ওপর রাগ লাগে। ভেবেছিলেন তার এই নাতনির বিয়েতে কত আনন্দ ফুর্তি করবেন। আর্থ্রাইটিসের ব্যথাটা এত বেড়ে গিয়ে সব ভেস্তে দিয়েছে। সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামতে পারছেন না তিনি। সেদিন বিছানার তলা থেকে ট্রাংকখানা ওভাবে টেনে আনাটাই কাল হয়েছে। সুদীপ টের পেয়ে খুব বকাবকি করেছে তাকে। সে বিয়েবাড়ির ঝামেলা সামলাবে নাকি ডাক্তারবদ্যির পেছনে ছুটবে? ছেলের কথা শুনে সন্ধ্যারানী গাল ফুলিয়ে বসে থাকেন। : ঐ ছ্যাড়া! চিক্কুর পারিস না, তোরে আমি কিছু কইচি? : সেই তো আমাকেই দৌড়াতে হবে ডাক্তারের কাছে। : ফোট তুই। আর চোপা করিছ না কইলাম। : ওই দেখো আবার শুরু হলো! চুপ করো তো মা! সুদীপ রাগ করে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। মায়ের কথার ছিরি নিয়ে বরাবরই বিব্রত হতেন সুদীপ চন্দ্র সাহা আর তার বোনেরা। কম বয়সে বন্ধুরা যখন ‘বাঙাল’ বলে টিটকিরি দিত তখন খুব গায়ে লাগতো। এখন আর সেসবে কিছু মনে হয় না। কিন্তু বিয়েবাড়িতে মায়ের ভাষা নিয়ে যে হাসির রোল পড়ে যাবে সেটা ঠিক আন্দাজ করা যায়। সন্ধ্যারানীর সামনে কেউ একবার শব্দটা উচ্চারণ করলেই হলো কোমরে আঁচল গুঁজে ঝগড়া শুরু করে দেবেন তিনি। আজকাল বয়সের ভারে ছোটাছুটি করতে পারেন না কিন্তু মুখের জোর তো কমেনি, কমেনি শোনার ক্ষমতাও। শুধু চোখের দৃষ্টিটা ক্ষীণ হয়ে গেছে। সেই দৃষ্টিতে এই ঘরদোর ঝাপসা দেখালেও তার দিন দিব্যি কেটে যায়। ছায়া ছায়া অন্ধকারে বসে বেচারাম দেউড়ির সেই বাড়িটার কথা মনে করেন গলির মোড়ে শনপাপড়িওয়ালার টুংটাং শব্দ, উঠোনে নানান রংয়ের সন্ধ্যামালতী, দোলনচাঁপা আরো কত কত গাছপালা। বাড়ির পেছনে সেই করমচা, লেবু আর চালতা গাছ! ইলিশ কিংবা কইমাছের ঝোল, কুমড়ো বড়ির তরকারিমাখা ভাত! কত স্মৃতি! বিকেলে বাড়ি ফেরার সময় প্রায় প্রতিদিনই বাবা প্যাকেট ভরে দোকান থেকে বাখরখানি নয়তো মোগলাই রুটি কিনে আনতেন। চোখের পলকে সাবাড় হয়ে যেত সেসব। এখনো গরম চায়ের সাথে বাখরখানির জন্য ভীষণ প্রাণ কাঁদে। এসব ভেবে ছেলেমানুষের মতো এই সকালবেলাতেই তার মনটা দুম করে খারাপ হয়ে যায়। টুবাই ঘুরঘুর করছে। স্নিগ্ধচোখে ওকে দেখেন তিনি। একদিন সেও কি ঠিক এভাবেই মন খারাপ করবে? খড়গপুরের এই বাড়িটার কথা, বুড়ি ঠাম্মার কথা ওর মনে পড়বে তো? তখন চাইলেই ফিরিঙ্গিদের দেশ থেকে ছুটে আসতে পারবে না। এলেই বা কী! সন্ধ্যারানী ততদিনে মরে টরে ভূত হয়ে যাবেন সেসব আর চোখে দেখা হবে না তার ভূত হয়ে যাবার কথা ভেবে ফিক করে হেসে ফেলেন তিনি। : কী হলো হাসছো কেন? : তুই যখন বুড়া হইবি আমার কথা মনে থাকবে তোর? : খুব মনে থাকবে। : এহ! মিছা কথা! : আমি তো কখনো বুড়োই হবো না! তাহলে ভুলে যাবো কেন? : পাকনা বুড়া একখান! : না না আমি বুড়া না। টুবাই লাফাতে লাফাতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যায়। দেড়তলার ঝরকা দিয়ে আলো ঠিকরে পড়ছে। টুবাই ছড়া বলতে বলতে নিচে নেমে যাচ্ছে। কী অদ্ভুত লাগে এই দৃশ্যটা! কত আলো! যতক্ষণ আলো আছে বারান্দায় বসা মানুষটা বড় বড় চোখ করে চারপাশ দেখতে থাকে। এদিকে ভোরবেলায় একপশলা বৃষ্টির পর এখন ঝকঝকে রোদ। নিচতলায় উঠোনে তুলসীর বেদিতে আলো পিছলে গিয়ে চকচক করছে। সন্ধ্যারানী গলা বাড়িয়ে সেদিকে তাকালেন। লীলা শিলনোড়া নিয়ে কিছু একটা পিষতে বসেছে। মেয়েটা একবারও তাকাচ্ছে না এদিকে। সন্ধ্যারানী উসখুস করছেন। এখন একটু চা পেলে মন্দ হতো না রোজ এগারোটার দিকে তার গলাটা শুকিয়ে আসে। আহা চায়ের সাথে একটা দুটো মুচমুচে বাখরখানি নয়তো সিঙ্গারা যদি পাওয়া যেত! বললেও এরা দেবে না, ডাক্তারের বারণ। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকেন সন্ধ্যারানী। খুব হৈহুল্লা হচ্ছে। সুদীপ বাজার করে ফিরলো বোধ হয়। বড় আর ছোট মেয়ে সুদীপের বউয়ের সাথে বসে কুটোবাছা করছে। ওরা কাল রাতে এসে পৌঁছেছে। বনি এসে ঠাকুমার পাশে বসে। গুটুর গুটুর গল্প করে। : এই ছ্যাড়া তো বিয়া কইরা তরেও ওই দ্যাশে নিয়া যাইবো। : দূর ঠাম্মা! সে বহু দেরি। কত কাগজপত্রের ব্যাপার। চিন্তা কোরো না, তোমাকে ছেড়ে অত সহজে আমি যাচ্ছি না কোথাও। : যাইবি তো ঠিকই! স্বার্থপরের দল! : আমাকে কী দেবে আগে সেটা শুনি। সেরকম কিছু দিলে আমি থেকেও যেতে পারি তোমার কাছে। : সব বুঝি, যা দূর হ চক্ষের সামনে থিইকা। বনি হাসতে হাসতে ঠাকুমাকে জড়িয়ে ধরে। গালে চুমু দেয়। ওর গায়ে কী সুন্দর একটা ঘ্রাণ! নিশ্চয়ই বিদেশি সাবান মেখেছে। দেশের কোনো কিছু এদের ভালো লাগে নাকি! নাতনিকে বিয়েতে কী দেবেন সে ভাবনা আগেই ভাবা হয়ে গেছে তার। কোনো এক দুর্গাপূজায় সমীর সাহা তাকে মকরমুখো বালা গড়িয়ে দিয়েছিলেন। সে দুটোই বনির জন্য তোলা আছে। আজ সন্ধ্যায় ওর মঙ্গলাচরণ। সন্ধ্যারানীকে নিচতলায় নামানো হয়েছে। তার চোখে নতুন চশমা। ছাদের রেলিং থেকে নিচে উঠোন অব্দি লাল নীল মরিচ বাতিগুলো জ্বলছে আর নিভছে। লাউডস্পিকারে একের পর এক কিশোরকুমারের গান। ওপারে থাকবো আমি, তুমি রইবে এপারে। আর তো নয় বেশি দিন, মিলবো এবার দুজনে। আহা কত স্মৃতি! সমীর সাহা খুব ভক্ত ছিলেন এসব গানের। পূজা কিংবা যে কোনো উৎসবে বাড়িতে এসব গানই বাজে। সন্ধ্যারানীর পুরনো দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। বিয়ের পর যখন প্রথম এবাড়িতে এসে ওঠেন তখন দোতলাটা ছিল না। একান্ন সালে বর্ডার পার হয়ে খড়গপুরে চলে আসার পর তার শ্বশুর মানে সমীরের বাবা বাড়িটা কিনে নিয়েছিলেন। সেসব দিনের কত গল্প যে শুনেছেন সন্ধ্যারানী! পূর্ব বাংলায় নারায়ণগঞ্জে সমীরদের শাড়ির দোকান ছিল। জামদানি থেকে তাঁত, মনিপুরী থেকে কাতান সবরকমের শাড়ি ছিল সাহা বস্ত্রালয়ে। দাঙ্গার সময় একদিন বাজারে আগুন লাগিয়ে দেয়া হলে সাহা বস্ত্রালয়ের সব কাপড় পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সে রাতেই এক কাপড়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে সাহা পরিবার। নিজের দেশ ছাড়ার দিনটাও স্পষ্ট করে মনে আছে সন্ধ্যারানীর। সেবার দুর্গাপূজায় ওরা কেউ নতুন জামাকাপড় পায়নি। সময়টা ছিল আশ্বিন মাসের কোন একটা দিন। তখনো মহালয়া পার হয়নি। খুব ভোরে বাড়িটা তালাবন্ধ করে ওরা সবাই বেরিয়ে পড়েছিল। সেসব চুয়ান্ন সালের কথা। বাবার মুখে শুনে শুনে মনে রেখেছেন সন্ধ্যারানী বর্ডার পাড়ি দেবার পর আরো অনেকটা পথ যাত্রা করে মেদিনীপুরে এসে পৌঁছায় ওরা। সেখানে একটা দুকামরার বাড়ি ভাড়া করা হয়। ঢাকা থেকে আসার সময় মা দুটো জামদানি আর তিনটে তাঁতের শাড়ি নিয়ে এসেছিলেন। তার মধ্যে সেই কল্কা পাড় শাড়িটা ছিল সন্ধ্যার সবচেয়ে প্রিয়। বিয়ের পর প্রথম পূজায় মায়ের বাড়ি থেকে ফেরার সময় মা ওটা দিয়ে বলেছিলেন- বুড়ি, আমগো দ্যাশের শাড়ি, যত্ন কইরা রাখবি। সন্ধ্যারানী ভোলেননি কথাটা। এত বছরেও হাতছাড়া করেননি ওটা। সমীর সাহার মৃত্যুর পর অন্য শাড়ি গয়নার সাথে রানী রংয়ের জামদানিটাও তুলে রেখেছেন আলমারিতে বা ট্রাংকে। বনির জন্য মকরমুখো বালা দুটো খুঁজতে গিয়ে সেদিন শাড়িটাও বের হলো। ভাঁজে ভাঁজে কেমন দুর্বল হয়ে গেছে শাড়িটা। কিন্তু টুকটুকে রঙটা যেন একটুও ফিকে হয়নি। আর কী অবাক কাণ্ড! ন্যাপথলিনের ঘ্রাণ ছাপিয়ে এখনো মায়ের শরীরের ঘ্রাণ পাওয়া গেল ওটায়। ভুলে যাওয়া কত তুচ্ছ কথা মনে পড়ে গেল একনিমিষে। তারপর থেকে মনটা তার ভীষণ অস্থির হয়ে আছে। রোজ রোজ বাবা স্বপ্নে আসেন। বলেন- বুড়ি চল নদী দেইখা আসি। বুকটা ধড়ফড় করে ওঠে ঘুমের মধ্যেই। সন্ধ্যারানীর চোখে আর ঘুম আসে না। তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে থাকে। বিছানার ওপর সেই কল্কাপাড় শাড়িটা। বনি খুব করে চেয়েছে ওটা। সন্ধ্যারানী কিছুতেই রাজি হননি। তার দেশের শাড়ি, তার মায়ের দেয়া। বেঁচে থাকতে এর মালিকানা ছাড়তে মন সায় দেয়নি। ভরপদুপুরে নিরিবিলিতে বসে দুই চোখ ছাপিয়ে জল আসে। বহুদিন পর দেশের কথা, মায়ের কথা মনে করে কান্না পায় বুড়ির। বনিতো জানে না, জানলেও বোঝে না এই কল্কাপাড় জামদানিটা শুধুমাত্র একটা শাড়ি নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App