×

মুক্তচিন্তা

ভিন্নমত প্রসঙ্গে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০১৯, ০৬:১৭ পিএম

‘ভিন্নমত’ শব্দটা বুদ্ধিজীবী মহলে প্রায়ই শোনা যায়। সম্প্রতি বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার হত্যার পর বিষয়টি আরো অধিক আলোচনায় এসেছে। প্রশ্ন হলো, সমালোচনা মানে কি ‘ভিন্নমত’? দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এই উপমহাদেশে সমালোচনাকে ‘ভিন্নমত’ অর্থে, ‘নিন্দা’ অর্থে নেয়া হয়। প্রকৃত সত্য তো এই যে, সমালোচনা সব সময় ‘ভিন্নমত’ বা নিন্দা নয়। যেমন মৃত্যুর আগে পোস্ট করা বুয়েটে বর্বরতার শিকার আবরারের সর্বশেষ ফেসবুক স্ট্যাটাস। পত্র-পত্রিকা ও ফেসবুকের স্ট্যাটাস পড়ে এবং টেলিভিশনের খবর শুনে যতটুকু জানা ও বোঝা যায় ওই স্ট্যাটাসে দেশবিরোধী, ধর্মবিরোধী কিংবা দেশের প্রচলিত আইনবিরোধী কোনো কিছু ছিল না, যা ছিল তা আবরারের অকৃত্রিম দেশপ্রেমের দৃষ্টান্তকেই বরং দ্রষ্টব্য করে তোলে দেশ ও দশের কাছে। আবরার বন্ধুত্বের নামে ভারতের শোষণের কথা তথা বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা না দেয়ার প্রসঙ্গটিকে যুক্তি-প্রমাণসহ পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছিল। দেশের স্বার্থের সপক্ষে কথা বলা কি অপরাধ? ‘ভিন্নমত’ তো সেটাই, যা দেশের স্বার্থকে ভুলে ভিন্ন দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ স্থান দেয়। এটাকে বেশির বেশি বললে ভারত-বিরোধিতা বলা যায়, কিন্তু কোনো মতেই বাংলাদেশ-বিরোধিতা বলা যায় না। বরং এটা তার প্রবল দেশপ্রেমেরই পরিচয় প্রকাশ করে। সেই দেশপ্রেমকে কীভাবে বলা হয় ‘ভিন্নমত’? এটা তো ‘ভিন্নমত’ নয়, বরং ভালো মত, দেশকে ভালোবাসার পক্ষে মত, পজেটিভ মত। এই পজেটিভটিকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিহ্নিত করা তো দেশপ্রেমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, ‘ভিন্নমত’ বলে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা। ‘ভিন্নমত’ তো বরং সেটাই, যা মানুষের বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, দেশপ্রেমে বিশ্বাস করে না; পয়সা, পেশি ও পাওয়ারের প্রভাবে কাউকে পিটিয়ে পরপারে পাঠিয়ে দিতে পরোয়া করে না এবং যারা গালভরা বুলি গণতন্ত্র হলেও গলাবাজি ও গায়ের জোরে বিশ্বাস করে, যা পরমতঅসহিষ্ণুতারই পরিচয় বহন করে। আশার কথা, প্রধানমন্ত্রী এদের বিরুদ্ধে সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং এদের কঠোর হস্তে দমন করার আশ্বাস প্রদান করেছেন। তার সেই বক্তব্য বা আশ্বাস বিশ্বাসে পরিণত হবে তখন যখন তা বাস্তবে রূপায়িত হবে। সাধারণ মানুষ কিন্তু সেটাই কামনা করে এবং সেদিকেই তাকিয়ে আছে। শেষ করার আগে আরেকটি কথা বলা আবশ্যিক মনে করছি। সেটা হলো তোয়াজ-তোষামোদকারী তথা তৈলমর্দনকারীদের কথা, যাদের ওপর চটে গিয়ে তাদের ‘চাটার দল’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু তার এক ভাষণে। এরা কখনো কারো প্রকৃত বন্ধু নয়, প্রকৃত বন্ধু হলো তারা যারা সৎ সমালোচনার মাধ্যমে সত্যকে তুলে ধরে এবং সংশোধন হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। উদাহরণত, কোনো মানুষই কিন্তু আয়নার সাহায্য ছাড়া আপন অবয়ব কিংবা পৃষ্ঠদেশ প্রত্যক্ষ করতে পারে না। দোষ-দুর্বলতার ক্ষেত্রেও মানুষ সাধারণত নিজের দোষ-দুর্বলতাগুলো দেখে না। অন্যের সৎ সমালোচনায় (গিবত নয়) সেগুলো মূর্ত হয়ে ওঠে। তাই অন্যের সৎ সমালোচনা অন্যায় কিছু নয়, আয়নাস্বরূপ; যেখানে বন্ধুর আসল অবয়ব ফুটে ওঠে। সেই অবয়বের ময়লা না মুছে আয়নার ওপর জমে থাকা ময়লা মুছে কী লাভ? কারণ আয়না তো অবয়বেরই প্রতিবিম্ব প্রকাশ করে। কবি ও প্রাবন্ধিক, চট্টগ্রাম। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App