×

জাতীয়

সাম্রাজ্য হারিয়ে সব ফাঁস করলেন সম্রাট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ১০:৫৬ এএম

রাজধানীর ক্যাসিনোকাণ্ডের খলনায়ক ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট র‌্যাবের কাছে সবকিছু ফাঁস করে দিয়েছেন। শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর দলের দায়িত্বশীল কোনো নেতা তার সঙ্গে যোগাযোগ না করায় এবং কুমিল্লায় র‌্যাবের জালে আটকের পর মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার করায় তিনি প্রচণ্ড মনোকষ্ট পেয়েছেন। এরপর তিনি আর কোনো রাখঢাক রাখেননি। একে একে বলেছেন তার কাছ থেকে সুবিধাভোগীদের নাম। যাতে যুবলীগ চেয়ারম্যান, একাধিক মন্ত্রী, সাংসদ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, একাধিক ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সাংবাদিকসহ শতাধিক নাম রয়েছে। সুবিধাভোগীদের কেউ যাতে সাম্রাজ্য দখল করতে না পারেন সেই সুযোগ দিতে চান না তিনি।

জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাইদ, ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতন, আরমান, স্বপন,সরোয়ার হোসেন মনা, মিজানুর রহমান বকুল, মোরছালিন, মাকসুদুর রহমান ছিলেন সম্রাটের হাতের লাঠি। গণপূর্তের জি কে শামীমের ঠিকাদারি কাজ পেতে ভূমিকা রাখতেন সম্রাট । মৎস্য ভবনে সম্রাটের আস্থাভাজন হিসেবে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতেন বাবু ওরফে ক্যারেন্সি বাবু। সম্রাটের হয়ে আরো কয়েকটি দপ্তরে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতেন বকুল ও ইমদাদ।

সম্রাটের ঘনিষ্ঠ যুবলীগের একজন সহসভাপতি স্বর্ণ পাচারে সম্পৃক্ত বলে খবর রটেছে। ‘গ্লাসবয়’ হিসেবে পরিচিত জাকিরের কাছে সম্রাটের কোটি কোটি টাকা রয়েছে। মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের নেতা রবিউল ইসলাম সোহেলও সম্রাটের ক্যাসিনোর পার্টনার। ছাত্রলীগের বিতর্কিত সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, এস এম জাকির হোসেন এবং আওয়ামী লীগের একজন অন্যতম নীতিনির্ধারকের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত জোবায়দুল হক রাসেল নিয়মিত সুবিধা পেতেন সম্রাটের কাছ থেকে। সুবিধা প্রাপ্তির তালিকায় নাম রয়েছে পুলিশ ও সাংবাদিকদেরও।

২০০১ সালে ভোলার সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের আশীর্বাদে যুবলীগের আহবায়ক হন সম্রাট। ২০০৩ সালের সম্মেলনে মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরে ২০১২ সালে দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি হন তিনি। মতিঝিল, ফকিরাপুল, আরামবাগসহ ঢাকার একটি বড় অংশে একক আধিপত্য বিস্তার করতে থাকেন সম্রাট। মতিঝিল ক্লাবপাড়া পুরো নিয়ন্ত্রণে নেন তিনি। ধারণা করা হয়, এসব নিয়ন্ত্রণ আর বিরোধের জের ধরে খুন হন যুবলীগ নেতা মিল্কী।

র‌্যাবের একাধিক কর্মকর্তা জানান, দুুবাইয়ে গ্রেপ্তার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখতেন সম্রাট। ক্যাসিনো ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জিসানের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীম গ্রেপ্তারের পর টিভি পর্দায় নিয়মিত চোখ রাখতেন তিনি। বুকে প্রেসমেকার বসানো ও ভাল্ব প্রতিস্থাপন করে সিংগাপুরে নিয়মিত চেকআপে থাকা সম্রাট আটকের পর ভড়কে যান। র‌্যাব কর্মকর্তরাও তাকে নিয়ে ঝুঁকিতে পড়েন। এর মধ্যে আটকের পর কুমিল্লার বাসায় আরমান ও সম্রাটকে বেশ কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখান থেকে ঢাকায় আনার পথে মাইক্রেবাসে র‌্যাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন সম্রাট । উত্তরা র‌্যাব সদর দপ্তরে সম্রাট কিছু তথ্য জানান। এরপর কাকরাইল কার্যালয়ে অভিযানের ফাঁকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অবস্থা বিবেচনায় সম্রাট র‌্যাব কর্মকর্তাদের জানান, ক্যাসিনো, জুয়া, ঠিকাদারি ও রাজনীতির নেপথ্যের বড়ভাই, তার কাছে যাতায়াতকারী এবং সুবিধাভোগীদের নাম।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App